দিলীপ মজুমদার: করোনার প্রকোপ একটু কমেছে। বন্ধুদের বাড়িতে বিকেলের দিকে যাতায়াত শুরু করছি। দূরে দূরে বসে একটু কথাবার্তা বলা আর কি! একঘেঁয়েমি কাটে। গতকাল সমীরের বাড়িতে গিয়েছিলাম । সুখেন্দু আর বিকাশ এসেছিল। সমীরের বউ চা দিয়ে যাবার পরে সুখেন্দু বলল, শুভেন্দু অধিকারীর ব্যাপারটা কি বলত ?
বিকাশ বলল, কেন ? শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে পড়লি কেন ?
-দিলীপ ঘোষ মিটিং ডেকেছিলেন, সে মিটিংএ না থেকে চলে গেলেন দিল্লি। অমিত শাহ আর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক। দিলীপ ঘোষ না কি এসব কিছু জানেন না। তারপরে লগে লগে গেলেন সৌমিত্র, নিশীথ এঁরা সব। কি যে ফুসফুস গুজগুজ হল কেউ জানে না।
সমীর বলল, আমি জানি।
সুখেন্দু বলে, ঢপ মারিস না। তুই জানলি কি করে ?
-অনুমান। আরে বাবা, কানটা খাড়া কর, তাহলে তুইও বুঝতে পারবি। শুভেন্দু এখন বিজেপির বলির পাঁঠা। তাই দিলীপ ঘোষের চেয়ে তাকে উগ্র হতে হয়েছে। এ রাজ্যে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের কথা সেই বেশি জোর দিয়ে বলছে। শুধু দিলীপ ঘোষ কেন, রাজ্যপালের চেয়েও শুভেন্দুর উগ্রতা বেশি। নতুন কাকের গু খেলে এমন হয়।
-কেন বল তো !
-কেন আবার ! আত্মরক্ষার অধিকার সকলেরই আছে। নারদ মামলায় ফিরহাদদের অভিযুক্ত করার পরে জোর দাবি উঠেছে শুভেন্দুকে ধরার। তার উপর আবার রাজ্য সরকার কৃষি, ত্রিপল এসব দুর্নীতিতে তাকে জড়িয়ে দেবার আয়োজন করছে। চোর যেমন অন্যের দিকে আঙুল তুলে চোর চোর বলে চেঁচায়, এও তেমনি।
বিকাশ বলল, আইন-শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ একটা ফাঁদ বুঝলি। বিজেপি সেই ফাঁদটা পাতছে। যেমন ফাঁদ পেতেছিল সুব্রত, ফিরহাদ , মদনদের গ্রেপ্তার করে সিবিআই অফিসে বসিয়ে রেখে। তৃণমূল সমর্থকরা সেখানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে লাগল, মুখ্যমন্ত্রী আর আইনমন্ত্রীও চলে এলেন আবেগবশত। আদালতে এদের উপস্থিতিটাকে সিবিআই আইনজীবী ব্যবহার করলেন।
সুখেন্দু বলল, তা না হয় হল, কিন্তু আইন-শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগটা ফাঁদ হল কি করে ? এটা তো মানবি কোন কোন এলাকায় তৃণমূল মারধোর করছে, কিন্তু বিজেপিও হাত গুটিয়ে বসে নেই। তারাও মারছে। সংবাদ মাধ্যমে সে খবরও তো বেরোচ্ছে।
-সেটাই তো বলছি । সামান্য ঘটনাকে অসামান্য করে দেখানো, একটা ঘটনাকে দশটা করে দেখানো, সত্যি ভিডিয়োর পাশে ফেক ভিডিয়ো ছড়ানো, টুইটার-ফেসবুক, ইমেলের মাধ্যমে সেসব সারা বাংলা, সারা ভারত, এমন কি সারা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়া। এভাবে রাষ্ট্রপতি শাসনের পটভূমি তৈরি করা। সেই যে হিটলারের জিগরি দোস্ত গোয়েবলস বলতেন না, বারবার মিথ্যে বললে মিথ্যেটাই জনমানসে সত্যি হয়ে যায় !
আমি বললাম, একদম ঠিক কথা বলেছে বিকাশ। এই ফাঁদ থেকে তৃণমূলের বেরিয়ে আসা দরকার। না হলে তার সর্বনাশ হবে।
সুখেন্দু জানতে চাইল বেরিয়ে আসার পথ।
বিকাশ বলল, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যে পথ নিয়েছিলেন, সেই পথ । তথাগত রায়ের টুইট পড়ে চন্দ্রিমা তাঁর কাছ থেকে ঘরছাড়াদের লিস্টি চাইলেন, তাদের ঘরে ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেন। মমতাও বিজেপির নেতাদের কাছে লিস্টি চাইতে পারেন, আইন-শৃঙ্খলার পর্যালোচনার জন্য সর্বদলীয় একটা কমিটি তৈরি করে দিতে পারেন, যাঁরা বিচার করবেন কোথায় কোথায় কারা কারা ঘরছাড়া, কারা রাজনৈতিক হিংসার বলি। তখন আর রাজ্য সরকারকে দোষ দেওয়া যাবে না।
সমীর বলল, সে না হয় হল, কিন্তু রাজ্যপালকে সামলাবেন কি করে ?
বিকাশ বলল, মুন্নাভাই সিনেমার মতো গান্ধিগিরি করে।
মমতা ব্যানার্জী রোজ সকালবেলা একটি করে গোলাপফুল পাঠাবেন রাজ্যপালকে, তাতে লেখা থাকবে : ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, স্বল্পভাষী হোন। বিকাশের কথায় আমরা সবাই হেসে উঠলাম।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct