আপনজন ডেস্ক: ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আই-প্যাকের সঙ্গে আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত চুক্তি হল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। সেই চুক্তিমতো আই-প্যাক নির্বাচনী কৌশলকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল দুশোর বেশি আসন পেয়েছে। প্রশান্ত কিশোরের ভোট কৌশলে তৃতীয় বারের মতো বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সেই সফলতার ধারাকে আগামী লোকসভা নির্বাচনের কাজে লাগাতে, বলতে গেলে বৃহত্তর লক্ষ্যে আই-প্যাকের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের চুক্তি ২০২৬ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হল। এবার কি তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রিত্ব? সেই প্রশ্ন এখন ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে।
তবে, আই-প্যাকের সঙ্গে চুক্তি হলেও বিধানসভা নির্বাচনের সময় যেমন দিনের পর দিন পরামর্শ দিয়ে গেছেন প্রশান্ত কিশোর তা এবার হয়তো হবে না। পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ও তামিলনাডুর বিধানসভা নির্বাচনে ডিএমকে-কে জিতিয়ে আনার নেপথ্য কারিগর প্রশান্ত কিশোর নির্বাচন শেষে জানিয়েছেন তিনি নির্বাচনী কৌশল রূপায়ণের কাজ থেকে বিরত থাকতে চান। সত্যি যদি তাই হয় তাহলে এখন দেখার বিষয়, প্রশান্ত কিশোর ছাড়া নয় সদস্য বিশিষ্ট আই-প্যাকের দল কতটা তাদের দক্ষতা দেখাতে পারে। তারা আগামীতে নির্বাচনে তৃণমূল কিংবা অন্যদেরকে কতটা জয়ের মুখ দেখাতে পারেন তার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে।
আই-প্যাক জানিয়েছে, নতুন চুক্তি অনুসারে আই-প্যাক পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে রাজ্য সমস্ত রাজ্য নির্বাচনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থাকবে। চুক্তি সম্প্রসারণ করা হয়েছে বাংলায় আগামী বিধানসভা নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত। ততক্ষণে ইউপি, গুজরাট এবং কর্নাটকসহ প্রধান প্রধান রাজ্যগুলিতে এবং দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তৃণমূলের প্রবীণ নেতা পার্থ চ্যাটার্জি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ‘বাংলার বাইরেও সংগঠনকে সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা করছে’। তার এক সপ্তাহ পর এই নতুন চুক্তির কথা সামনে এল। যদিও তৃণমূলের নতুন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর অভিষেক ব্যানার্জি বলেছিলেন এ ধরনের কথা। আর অভিষেকই মূলত তৃণমূলের নির্বাচনী কৌশলের জন্য প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। নতুন চুক্তিটি গত সপ্তাহে মুম্বইয়ে প্রশান্ত কিশোর ও এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের মধ্যে বৈঠকের পরে হয়। সেই সময় শরদ পাওয়ার বলেছিলেন তিনি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করেন। বৈঠকে আলোচনা হয় একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রধান মুখ হয়ে উঠতে পারেন। এই বৈঠকের বৃহত্তর প্রসঙ্গ হয়ে ওঠে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন সম্পর্কিত। বক্তব্যে উঠে আসে, একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রধান মুখ হয়ে উঠতে পারেন।
এছাড়া, এনডিটিভি জানিয়েছে, তাদেরকে প্রশান্ত কিশোর জানিয়েছিলেন, ‘বিজেপি পরাজিত হতে পারে। দিনের শেষে এটাই হল গণতন্ত্র এবং তা মানুষের পছন্দের বিষয়।’ তিনি অবশ্য জোটবদ্ধভাবে মমতার বিরোধী প্রার্থী হয়ে উঠার সম্ভাবনার কথা বলেন।
এনডিটিভি সূত্র অনুযায়ী প্রশান্ত কিশোর বলেছিলেন, ‘কখনও কখনও আপনি এখনই সমস্ত বিষয় ঠিক করতে পারবেন না। নির্বাচনের সময় বিষয়টি আলাদা। একটা সম্মিলিত কর্মসূচি হতে পারে... এখন সময় এসেছে কোভিড যুদ্ধের লড়াইয়ের। কোভিড যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে, আমরা সিদ্ধান্ত নেব ... (তবে) দেশটি এর মুখোমুখি হতে পারে না ... বিজেপি মানেই বিপর্যয়।’
উল্লেখ্য, পশ্চিমবাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রশান্ত কিশোর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ২০০ আসন পার করবে। আর বিজেপি ১০০ আসন টপকাতে পারবে না। তিনিই বলেছিলেন, তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী যদি ভুল হয় তাহলে এই পেশাই ছেড়ে দেবেন। তার সেই ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গিয়েছে।
এছাড়া, ২০১৫ সালে বিহারের নীতীশ কুমারকে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন পিকে। অন্ধ্রপ্রদেশে জগনমোহন রেড্ডিকে কুর্সিতে বসানোর ক্ষেত্রে, এমকে স্ট্যালিনের হাতে তামিলনাড়ুর মসনদ তুলে দিতে, অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে দিল্লির বুকে জয়ী করতে পিকের ভূমিকা ছিল। তারপর ২০২১ সালে কঠিন পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরামর্শ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে হ্যাটট্রিক করিয়ে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর বাজিমাত করেছেন। তাই প্রশ্ন উঠছে তিনি যদি নির্বাচনী কৌশলীর কাজ থেকে বিরত থাকেন তাহলে তাকে ছাড়া আই-প্যাক কতটা সাফল্য পাবে আগামীতে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct