নকীব উদ্দন গাজী, ঘোড়ামারা: নদীর পাড়ে দাঁড়ালেই দূর থেকে দেখা যাচ্ছে জঙ্গলে ঘেরা একটি দ্বীপ যা প্রাকৃতিক বিপর্যয় বিধ্বস্ত হয়ে আছে এই ঘোড়ামারা দ্বীপ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার লট নাম্বার এইট থেকে ছোট ভুটভুটি করে ৩০ মিনিট বুড়িগঙ্গা নদী বুক চিরে এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে চারিদিকে জঙ্গলে ঘেরা এই দ্বীপটি যেখানে মানুষের বসবাস পাঁচ হাজারের মতন। নৌকা থেকে নামলেই দেখা মিলবে দ্বীপের রাস্তার দুপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপ পাকা ঘরের অর্ধেকাংশ মাটির ঘরের পুরোপুরি চারটি ভেঙ্গে দুমড়ে-মুচড়ে মাটিতে পড়ে , শখের আলমারিটা তখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কিছুটা এগোলেই দেখা যাবে নোনা জলে পচা মাছ, দুর্গন্ধে গোটা দ্বীপ যেন ভরে গেছে সামনে এগুলেই আপ্রাণ চেষ্টা করছে ভেঙে ঘরের মধ্যে কিছু পাওয়া যায় কিনা, নোনা জলে পানীয় জলের কল টা পুরোপুরি ডুবে গেছিলো কোন রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নোনাজল কে বার করতে এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা, পায়ে পায়ে কিছুটা এগোলেই দেখা যায় উঁচু একটা টিলা যখন ওদের বাসস্থান হয়ে উঠেছে। দূর থেকে কালো কালো ছোট্ট কুঁড়ে ঘর আজ আমাদের মতন অস্থায়ী তাবু ফেলে কোনরকম বেঁচে থাকার লড়াই, কেউ কাজ করছে কেউ থানের খিচুড়ি খাচ্ছে এলোমেলো জীবনটাকে যেন কিছুটা হলেও গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করছে ওরা। ওই ছোট্ট একটি পাড়ার মধ্যে এখন বাস করছে কয়েক হাজার মানুষ ওদের বাড়ি ছিল নদীর উপকূলবর্তী এলাকায় একে একে ভেঙে গেছে বাড়ি এভাবে পাঁচ বারের মতন অধিকাংশ জমি-বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে এমনটাই জানা যাচ্ছে রশিদা বিবির শেখ সৌরভ ,তাবুতে থাকা মানুষগুলোর কাছ থেকে, একটু এগিয়ে দেখা গেলোতাঁবুর ভিতরে ছোট্ট শিশু তাঁবুর মধ্যে বসে গরম খিচুড়ি খাচ্ছে আশেপাশে থেকে ভ্যাপসা গন্ধ অ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এর মধ্যে দিও জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা , তবুও মুখে একটু হাসি নিয়ে বলল বড্ড গরম পাশে বসে থাকা সাজু বলল চামচ টা দি একটু নাচ দেখবি ঠান্ডা হয়ে যাবে এভাবে শৈশবের জীবনটা যেন প্রাকৃতিক এর কাছে ওরা লড়াইয়ের সৈনিক হয়ে উঠেছে। আড়াইশো টি পরিবার ঘোড়ামারা দ্বীপ ট্যাংকের বাঁধের উপর এখন ওদের বাস, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ তাই বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি সোলার আলোর মধ্যে তাদের অন্ধকার জীবন টাকে কিছুটা আলো করে তাই অনেক নষ্ট হয়ে গেছে সোলার প্লেট। রশিদা বিবি বলেন ভ্যাপসা গরমে ত্রিপল এর নিচে থাকতে অনেকটাই কষ্ট ,তাই মাঝে মাঝে গাছ তলাতে নিতে হয় আশ্রয় রাত হলে তবেই ঘরের মধ্যে ঢুকতে পারি । রাতে বিষাক্ত সাপের উৎপাতও আছে এমনটাই জানা যায় ওদের কাছ থেকে। ওয়াজ চাই এক চিলতে মাথা গোঁজার ঠাঁই, স্থায়ী কংক্রিট বাঁধ সেটা কি পাবে সে দিকে তাকিয়ে আছে ঘোড়ামারা দ্বীপের বাসিন্দারা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct