আপনজন ডেস্ক: বেশ কিছুদিন ধরে গুঞ্জন চলছিল। সেই গুঞ্জন অবেশেষ সত্যি হল। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া হেভিওয়েট নেতা মুকুল রায় ফের পুরনো দলে ফিরে এলেন শুভ শুক্রবার। এদিন বিকালে তুণমূল ভবনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে মুকুল রায় ও তার পুত্র শুভ্রাংশু রায় যোগ দিলেন তৃণমূলে। সেসময় হাজির ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতারা। তাদের সামেন উত্তরীয় পরিয়ে মুকুল রায়কে বরণ করে নেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যে অভিষেককে কেন্দ্র করে মুকুলের তৃণমূল ত্যাগ বলে মনে করা হত সেই অভিষেক এদিন যেভাবে মুকুলকে অভ্যর্থনা জানান তা তৃণমূলকে উজ্জীবিত করারর জন্য যথেষ্ট। তবে মুকুলের তৃণমূলে ফিরে আসা নিয়ে যে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেজায় খুশি তা তার বক্তব্যে পরিষ্কার। মমতা সব রাগ অভিমান দূরে ঠেলে দিয়ে বলেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে। আর মুকুল বললেন, বিজেপিতে থাকতে না পেরেই ফিরে এসেছি। বিজেপি করব না বলেই পুরনো দলে ফিরেছি।
এদিনের মুকুলের যোগদানের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওল্ড ইজ অলওয়েজ গোল্ড। কোনওদিন আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেনি। ও কোনওদিন আমাদের দল নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেনি। কিন্তু যারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে খারাপ কথা বলেছিল, যারা দলের সঙ্গে ভোটের আগে গদ্দারি করেছিল তাদের দলে নেব না। কিন্তু বিজেপি থেকে আরও মানুষ আসবে, সময়ে জানতে পারবেন। ফলে, অার কোনও দিন শুভেন্দুর তৃণমূলে ফেরার পথ বন্ধ তা পরিষ্কার হয়ে গেল।
মুকুল রায় পাল্টা বলেন, নতুনদের সঙ্গে দেখা হয়ে ভাল লাগছে। বাংলা আবার তাঁর নিজের জায়গায় ফিরবে। আর বাংলাকে নেতৃত্ব দেবেন আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে মমতা এদিন বার্তা দেন যেসব চলে যাওয়া তৃণমূল নেতা-নেত্রী তার বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। তাদের প্রতি মমতা বলেন, চরমপন্থীদের দলে ফেরানো হবে না। মুকুলের সঙ্গে যারা দল ছেড়েছিলেন, তারা ফিরতে চাইলে দল সিদ্ধান্ত নেবে। তবে নির্বাচনের আগে যারা গদ্দারি করেছে, সেই চরমপন্থীদের দলে ফেরানো হবে না।
এদিন মমতার সুরে মুকুল কথা বলেন, দুজনের মধ্যে যেকানও মতপার্থক্য ছিল না তা বোঝাতে মুকুল বলেন, কোনও সময়ই আমাদের মধ্যে মতবিরোধ
ছিল না। এদিন যেভাবে মুকুলকে সম্মান জানিয়ে অভিষেক ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন তাতে বোঝার উপায় ছিল না আগে এই অভিষেকেরে সঙ্গে মুকুলের কোনও মতপার্থক্য ছিল কিংবা দূরত্ব ছিল। তৃণমূল ভবনে শুধু উত্তরীয় পরিয়েই অভিষেখ ক্ষান্ত হননি। মুকুল রায়কে তার গাড়ি তুলে দিয়ে আসেন। এই সৌজন্য ভবিষ্যতে তৃণমূলের প্রধান মুখ যে অভিষেক হয়ে উঠছেন তাতে পরিষ্কার। আর এদিন শুভ্রাংশু দলে যোগ দেওয়ায় মনে হয়েছে অভিষেক হলেন ভবিষ্যতের তৃণমূলের মমতা আর শুভ্রাংশু মুকুলের উত্তরসূরি। মুকুল রায়ের যে আনন্দ দেখা দিয়েছে তা ট্যুইট করে বুঝিয়ে দেন অভিষেক। ট্যুইটে অভিষেক লেখেন, ‘বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় তৃণমূলের পরিবারে ফিরে আসায় আমি খুব খুশি। বিজেপির মধ্যে থেকে তাঁকে যে নানা সমস্যার মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়েছে, তাতে আমরা তাঁর সমব্যথী। আমরা তাঁকে আশ্বস্ত করেছি যে আমরা আগামীদিনে উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে একসঙ্গে একটা টিম হিসাবে কাজ করব। আমাদের লক্ষ্য হল, আগামীদিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সকল ভারতীয়দের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তোলা।’
তবে, স্বভাবতই মুকুল রায় তৃণমূলে ফিলে আসায় তৃণমূল নতুন করে প্রাণ পাবে। বিশেষ করে সর্বভারতীয় রাজনীতে তাকে কাজে লাগিয়ে মমতার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ সুগম হবে। আর রাজ্য বিজেপিতে জোর বাঙন ধরবে। ইতিমধ্যে রাজ্য বিজেপির বহু নেতা যারা তৃণমূল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তারা আবার তৃণমূলে ফিরে আসতে চলেছেন। আর বিধায়ক পদে ইস্তফা না দিয়ে এদিন মুকুল তৃণমূলে যোগ দেন। তাই জল্পনা আর জনা কুড়ি বিজেপি বিধায়ককে তৃণমূলে ফেরাতে পারেন মুকুল। অথবা তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct