পান্তা ভাত
শংকর সাহা
___________________________
সেদিন স্কুল থেকে ফিরেই রতন মার কাছে ছুটে যায়। অভয়া তখন রান্না ঘরের
দাওয়ায় বসে চালের খুদগুলো ঝাড়ছিল। সেদিন বাসন্তী বউদি অভয়াকে ডেকে চালের
খুদগুলো দেয় যদি সেগুলো বেছে সে খেতে পারে। মার দিকে চেয়ে রতন বলে ওঠে,
“ মা,ওমা,আজ আমায় ভাতে আলু চচ্চড়ি করে দেবে ? কত্তদিন আলু চচ্চড়ি খাই”
অর্ধস্ফূটস্বরে রতনের কথাগুলো শুনে অভয়া বলে, “ দেবো রতন,আলু চচ্চড়ি খাবি তো?”
অভয়ার রতন কাছে যেন এক পৃথিবী। এই অভাবের সংসারে রতনকে নিয়েই যেন বেঁচে
থাকার স্বপ্ন দেখে অভয়া। সেই স্বামীর মৃত্যুর পরে নিকট আত্মীয়রা বলতে
তেমন কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। সেদিন যদি বাসন্তী বউদি বাড়িতে কাজ না দিত
হয়তো সেদিনই কোলের সন্তানকে নিয়ে কি করতো আজও তা ভাবতে গিয়ে যেন শিউরে
উঠে অভয়া!
আজ যে ঘরে তেমন আলুটুকুও বাড়ন্ত। ছেলের দিকে চেয়ে লজ্জা নিয়েই বাসন্তী
বউদির বাড়িতে আলু চাইতে যায় অভয়া।
সেদিন দুপুরে সূর্যের আলোটি বারান্দায় না পড়তেই রতন চিৎকার করে বলে,”
মা ...হলো রান্না? খুব যে খিদে পেয়েছে?
বারান্দার বসে অভয়া রতনকে খেতে দেয়। পাশে বসে রতনের মাথায় হাত দিয়ে অভয়া
জিজ্ঞেস করে, “ রতন,তোর বুঝি ভালো কিছু খুব খেতে ইচ্ছে করে তাইনা বাবা ?”
“কিন্তু মা আমরা যে গরীব?” অভয়া রতনের দিকে একভাবে চেয়ে থাকে। মনে মনে
ভগবানকে প্রশ্ন করে , সব কষ্ট কি তিনি শুধুই তার জন্যে রেখেছেন?
রতন খেয়ে উঠে যায়। অভয়া ঠাঁই বসে থাকে। আজ যেন শরীরটি তার সঙ্গ দিচ্ছে
না। আজ বাসন্তী বউদির বাড়িতে কাজের যে খুব চাপ ছিল। কত লোক আসবে,দুপুরে
খাবে। সবাই দাদাবাবুর দাদারা। বাসন্তী বউদি বলছিলো আজ নাকি মা দিবস।
ছেলেরা মাকে উপহার দেয়,কত্ত খাওয়া দাওয়া।
একটুবাদে রতন মাকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকতেই নজরে পড়ে মা শুধু শুধু পান্তা
ভাতগুলো খাচ্ছে।
“ মা,তুমি পান্তা ভাত খাচ্ছো।আলু চচ্চড়ি নেবেনা?”
“ না বাবা?ওগুলো আমার পেটে সইবে না। ও বরং তুইই খাস। গণেশ ডাক্তার বলেছে
তাই পান্তা ভাত খাচ্ছি”
অভয়ার কথাগুলোর মানে বছর পাঁচেকের রতন বুঝতে পারেনা। তাই ফটিক এলে তার
সাথে খেলতে বেরিয়ে যায়।
হঠাই অভয়া চোখটি অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। আজ যে ছেলের কাছে মিথ্যে বলতে হলো তাকে...
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct