ইউসুফ মোল্লা: “আমি মাটির মানুষ। আমি জমিতে নিড়েন দিয়েছি, নৌকায় করে মাছ ধরেছি, গাছে উঠে ডাব পেড়েছি, মাছের আঁশটে গন্ধ শুঁকে কেটেছে আমার দিন। সাধারণের অন্তরের ভাষা আমি বুঝি। আর বুঝি বলেই তাদের কথা লিখতে পেরেছি।”
- এইরকম কথা যিনি বলতে পারেন, তিনি আর কিছু হোক আর না হোক মাটির মানুষের জয়গান করবেন। যদিও তিনি গ্রহণীয় হয়েছিলেন সকল স্তরের মানুষের কাছে। বাংলা সাহিত্যে তিনি তাঁর নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছিলেন একটি মাত্র গ্রন্থ লিখেই, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনের কথা তুলে ধরতে শেষ বয়স পর্যন্ত লিখে গিয়েছিলেন। তিনি আর কেউ নয়, আমাদের জেলার মানুষ সাহিত্যিক আবদুল জব্বার। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলার সাতগাছিয়া থানার অন্তর্গত নোদাখালীর এক দরিদ্র পরিবারে তাঁর জন্ম। আজন্ম দরিদ্রতার কারণে প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেন নি। পিতৃহারা হওয়ার পরেই ক্লাস সিক্সে পড়া ছেড়ে দিয়ে সংসার চালানোর তাগিদে মেটিয়াবুরুজে দর্জির কাজে যান। এরপর বজবজের বিড়লা জুট মিলের কাজে যান। এই কাজ ছেড়ে দিয়ে হাওড়ায় ঢালাই মিস্ত্রির কাজে যান। এসবের সাথে সাথে গোপনে পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অনুর্ত্তীর্ণ হওয়ায় প্রথাগত শিক্ষায় একেবারেই ইতি পড়ে যায়। এতো দারিদ্রতা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার সিআইটি রোডের সরকারি আবাসনে একটি ফ্ল্যাট দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তিনি সেখানে যেতে রাজি হননি। কারণ, নিজের বাসস্থানের শিকড় থেকে উপড়ে নিলে তাঁর লেখাই হারিয়ে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেছিলেন। তাইতো তিনি বলেন, “মাটির সঙ্গে যোগ না থাকলে আমি লিখব কেমন করে?”
নানা কাজের সাথে যুক্ত হওয়ায় মাত্র পনেরো বছর বয়সে প্রথম গল্প “মা” লিখে ফেলেন। এছাড়াও তিনি ‘পয়গম’ পত্রিকায় কিছুদিন সাংবাদিকতা করেন। সেইসময় তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘বুভুক্ষা’ প্রকাশিত হয়। সাহিত্যিক আব্দুল জব্বার তরুণ বয়সে যখন তাঁর একটিও বই বের হয়নি বিখ্যাত প্রাবন্ধিক কাজী আবদুল ওদুদ এর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর সাহিত্য জীবনে যে এই যোগাযোগের গভীর প্রভাব পড়েছিল সে কথা আব্দুল জব্বার নিজেও স্বীকার করেন। কাজী আবদুল ওদুদ মানুষের কথাকার আব্দুল জব্বারকে মনে করতেন ‘গড গিফটেড’। আব্দুল জব্বারের ‘বুভুক্ষা’ গল্প সংকলনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৫ সালে যখন তাঁর বয়স ছিল ২৫বছর। এই গল্পগ্রন্থটি প্রকাশের সমস্ত আর্থিক দায়ভার বহন করেছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ। ১৯৬২ সালে আবদুল আজিজ আল আমান এর উদ্যোগে তাঁর সম্পাদিত জাগরণ পত্রিকায় আব্দুল জব্বারের প্রথম উপন্যাস ‘ইলিশমারীর চর’ প্রকাশ করেছিলেন। তার অনেক পরে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ৪৩ টি পর্ব তে আব্দুল জব্বারের ফিচারধর্মী লেখা ‘বাংলার চালচিত্র’ নামে প্রকাশিত হতে থাকে। আব্দুল জব্বারের ‘বাংলার চালচিত্র’ যখন ধারাবাহিকভাবে দেশ পত্রিকায় বার হচ্ছিল, তখন তা নিয়ে অনেক আলোচনা চলছিল। অনেকেই একে ফিচার আখ্যা দিয়েছিলেন। এ বই-এর নামকরণে চালচিত্র কথাটির তাৎপর্য সম্পর্কে আব্দুল জব্বার নিজেই লিখেছেন, চালচিত্র মানে কাঠামো। মৌলিক জীবনধারণের সত্তা বা অস্তিত্ব। দেশ পত্রিকায় মোট ৪৩ টি ফিচার প্রকাশিত হয়েছিল, এর মধ্যে বাছাই ৩৫ টি ফিচার বাংলার চালচিত্র নামক পুস্তকের সংকলিত হয়েছে।
বিভাগোত্তর পশ্চিমবাংলায় বাঙালি মুসলমানদের সংস্কৃতিচর্চার ধারাটি যখন ক্ষীণ হয়ে পড়েছিল তখন গুটিকয় সাহিত্যসেবী যারা কলম ধরে সামনে এগিয়ে আসেন তাদের মধ্যে আবদুল জব্বার (১৯৩৪-২০০৯) ছিলেন অন্যতম। বাঙালি জীবনের এই কথাকার উঠে এসেছেন গ্রামবাংলা থেকে (বজবজ)। ছিলেন বহু উপন্যাসের স্রষ্টা। তার ‘ইলিশমারির চর’ (১৯৬২), ‘ঝিনুকের নৌকো’, মাতালের হাট’ ‘বিদ্রোহী বাসিন্দা’ ‘অশান্ত ঝিলম’ (১৯৮৭), শঙ্খবালা’, মাটির কাছাকাছি’ (১৯৯৭), ‘ভরা কোটাল’ (১৯৯৮), ‘রাতের জোয়ার’ (১৯৯৯), ‘সুন্দরীঅরণ্য’ (১৯৯৯) বদরবাউল’, ‘অমৃতসমান’(২০০১), ‘চোরাবালি’(২০০২), ‘পাহাড়ী ময়ূর’ (২০০৩), ভাবসমাধি’ (২০০৪), ‘মোহিনী’ (২০০৬), ‘রাত পাখির ডাক’, ‘অলৌকিক প্রেমকথা’, মরিয়মের কান্না’, ‘লালবানু’, ‘আনোর ঠিকানা’, ‘ভালোবাসা মধুময়’, ‘রূপবতী রাত’, ‘লাজবতী’ (২০০৮), ‘আপনজন’, রূপের আগুন’, কনকচূড়া’, ‘বেদেনী’, ‘অন্ধকারের নদী’, ‘সবুজ নক্ষত্র’, সরমার ঐশ্বর্য, ‘গণ্ডির বাইরে’, নলখাগড়া’, ‘মোগল প্রেম কথা’, ‘গরল’, বাঘের খোঁজে’, সাত সাগরের নাবিক’, নীলাঞ্জনা’, মানুষজন’, ‘শিশিরভেজা’, ‘আলোর ঠিকানা’, ‘দহন’, ‘স্বপ্নের পরকাষ্ঠা’ প্রভৃতি উপন্যাসে বাঙালি জীবনের রূপাঙ্কন স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।
ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ‘বাংলার চালচিত্র’ গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন। এই গ্রন্থ সম্পর্কে বলেছেন- এর কতগুলি রচনা দেশ পত্রিকায় পড়েছিলুম, তখনই আমার মনকে অভিভূত করেছিল।.... দর্জি, কসাই, তাঁতি তিয়োর, মদের ভাটিওয়ালা, গরান কাঠের মহাজন, শিউলি, কুমোর, গরু ব্যাপারীর দালাল এদের সম্বন্ধে পুরোদস্তুর ওয়াকিবহাল।....প্রত্যেকটি অপূর্ব খাঁটি কথায় ভরা, আর একটা জিনিস এগুলির মধ্যে দেখলুম, এর রচনা যে মেকি নয়, তার প্রমাণ জীবনের সব দিক দিয়ে বাংলার ঘরোয়া শব্দে ভরপুর!
এছাড়াও সৈয়দ মুজতবা আলী ‘বাংলার চালচিত্র’ পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, মাটির কাছাকাছি যে লেখককে রবীন্দ্রনাথ আশা করেছিলেন আবদুল জব্বারের হাতে তার ছাড়পত্র! সাহিত্যিক কাজী আবদুল ওদুদ বলেছেন, কথাশিল্পী আবদুল জব্বার প্রকৃত সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে সাহিত্য ক্ষেত্রে! পল্লী গ্রামের এক চাষীর ছেলে লিখেছে জীবন্ত জীবনের কথাসাহিত্য। যে জীবন মাটি থেকে রস শোষণ করে পরিপুষ্ট হয়, সেই প্রকৃত জীবনবোধের দ্বারা উদ্বুদ্ধ তার সাহিত্য সৃষ্টি।
‘বাংলার চালচিত্র’ গ্রন্থটির জন্য তিনি অধিক পরিচিতি লাভ করলেও, তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা ছিল ‘ইলিশমারির চর’ এই প্রথম উপন্যাসটি। এই উপন্যাসটি সম্পর্কে প্রেমেন্দ্র মিত্র যথার্থ বলেছেন, “ফড়ের কাছে কেনা ফসল নয়, নিজের হাতে ফলানো।”
একদিন কলকাতার এক ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে যান সাহিত্যিক আবদুল জব্বার। তখন ব্যাঙ্কের নিয়ম ছিল, পাশবইতে পাঁচশ’ টাকার কম রাখা যাবে না। কিন্তু তিনি সেই মিনিমাম ব্যালেন্স থেকে তিনশ’ টাকা তুলতে চান। তাই সব কাউন্টার থেকে তিনি নিরাশ হয়ে ফিরছিলেন। অমিতাভ পাল নামের একজন ব্যাঙ্ক কর্মীর তাঁর উপর দয়া হয় সেই দারিদ্রতা দেখে। তিনি নিজ উদ্যোগে সেই তিনশ’ টাকা তুলে তাঁর হাতে দেন। টাকাটা পাওয়ার পর অমিতাভ বাবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যাওয়ার সময়, তার মনে খটকা লাগে। তাঁকে ডেকে বললেন, “আমি আবদুল জব্বার বলে একজনের নাম শুনেছি, যিনি বাংলার চালচিত্র নামে একটি অসাধারণ বই লিখেছেন। আপনি?”
প্রশ্নের বাকিটুকু তার মুখে আটকে রইল। অতি সাধারণ সেই গ্রাম্য লোকটি ম্লান হেসে বললেন, “আমিই সেই আবদুল জব্বার।”
ব্যাঙ্কে প্রতি মাসে আসতেন সামান্য কিছু টাকা তুলতে। তিনি সেইসময় দু’টি বাংলা সাময়িকপত্রে নিয়মিত ফিচার লিখতেন, তার বিনিময়ে পেতেন ওই সামান্য ক’টি টাকা। তাঁর সঙ্গে অমিতাভ পালের একটু ঘনিষ্টতা হলে তিনি জানতে পারেন, সাহিত্যিক আবদুল জব্বার এখনও লাঙল দিয়ে জমি চষেন, মাটির ঘরের খড়ের চালে উঠে ঘরামীর কাজও করেন। সেদিন তিনি বুঝেছিলেন জীবন, জীবিকা ও দেশের মাটির সঙ্গে এমন সম্পৃক্ত না হলে ‘বাংলার চালচিত্র’ লেখা যায় না।
বেলা দু’টো বাজল। সবাই জানে, বেলা দু’টো থেকে আড়াইটা ব্যাঙ্কের টিফিন টাইম। ধীরে ধীরে হল ফাঁকা হয়ে গেল। অমিতাভ বাবুর সহকর্মীরাও একে একে সবাই টিফিনে চলে গেল। অমিতাভ বাবুরও এই সময়টুকুর মধ্যে টিফিন করে ফিরে আসতে হবে কাজের টেবিলে। অগত্যা তাকে উঠতেই হল। অমিতাভ বাবু টিফিনে চলে যাবে আর উনি একা বসে থাকবেন? তাই বললেন, “চলুন জব্বার সাহেব, একটু টিফিন করে আসি।”
তিনি মুখে কোন কথা বললেন না কিন্তু অন্যমনস্কভাবে আসতে লাগলেন তার পিছনে পিছনে।
মহাত্মা গান্ধী রোড পেরিয়ে এসে বসলেন কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের মধ্যে ‘ঘোষ কেবিনে’।
খুবই সাধারণ খবার, চার পিস করে স্লাইসড পাঁউরুটির টোস্ট এবং ডিমের ওমলেট। ধীরে ধীরে খুবই তৃপ্তি করে খেলেন জব্বার সাহেব। তারপর মাটির ভাঁড়ে এক কাপ গরম চা। তাও ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে শেষ করলেন।
এবার তারা মার্কেট থেকে বেরিয়ে ফুটপাথের একটা পানের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালেন। শুধোলেন, “পান খাবেন?”
তিনি ঘাড় নাড়লেন। এক খিলি পান কিনে তাঁর হাতে দিলেন তিনি দোকানদারের কাছ থেকে এক টুকরো কাগজ চেয়ে নিলেন। পানটিকে কাগজে মুড়ে সযত্নে রাখলেন জামার পাশ পকেটে, হয়তো পরে খাবেন।
অমিতাভ বাবু বললেন, “জব্বার সাহেব, এবার তো আমাকে যেতে হবে, আমার টিফিন টাইম শেষ হয়ে গেছে।”
তিনি কথাটা শুনে তার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন কয়েক মুহূর্ত। তারপর তাঁর ঝোলা হাতড়ে তিনি বার করলেন তাঁর নিজের লেখা একটি বই। বাড়িয়ে দিলেন অমিতাভ পালের দিকে।
তিনি বুঝতে পারছিলেন না, কী করবেন। তিনি কি তার সামান্য এই আতিথেয়তার বিনিময়ে তাঁর নিজের লেখা বইটি তাকে উপহার দিলেন?
তিনি খানিক ইতস্তত করে বললেন, “এখানে আসার সময় বাড়ি থেকে ট্রেন ভাড়াটা সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে ছিলাম।” একটু থামলেন, “ভেবেছিলাম, পত্রিকার অফিসের টাকাটা আজ পাবো, বাড়ি ফেরার ট্রেন ভাড়াটা তাতেই হয়ে যাবে।” আবার একটু থামলেন, “অফিসে গিয়েছিলাম। ওরা বলল, দু’দিন পরে আসতে।”
এবার তিনি একেবারেই থামলেন। অমিতাভ বাবু পকেট থেকে বই এর দামটা বার করে তাঁর হাতে দিলাম। তিনি কুন্ঠিতভাবে টাকাটা নিয়ে পকেটে রাখলেন। তারপর ঘাড় হেঁট করে দুপুরের রাস্তার পিচ গলানো ঠা-ঠা রোদে মহাত্মা গান্ধী রোডের ফুটপাথ ধরে শিয়ালদার দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। অমিতাভ বাবু বুঝতে পারলেন, সামান্য গোটা পাঁচেক টাকা বাস ভাড়া বাঁচাতে তিনি শিয়ালদা পর্যন্ত হেঁটেই যাবেন।
তার টিফিন টাইম উৎরে গেছে কিন্তু তিনি নড়তে পারছিলেন না। তার পা দু’টো আটকে গেছে মহানগরের ফুটপাথে। একটু পরেই ধরণী দ্বিধা হবে। মহাকাল তাকে সাক্ষী মেনেছে সেই দৃশ্যের। তার কি সাধ্য আছে যে চলে যাবে, সেই দৃশ্য না দেখেই?
পৃথিবীতে এমন কি কোন সভ্য দেশ আছে, যেখানে ‘বাংলার চালচিত্র’এর মত বই এর কোন লেখককে মহানগরের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে নিজের লেখা বই নিজেকে বিক্রি করে বাড়ি ফেরার ট্রেন ভাড়ার সামান্য দশ-বিশ টাকা সংগ্রহ করতে হয়?
ওই তো চলে যাচ্ছেন ‘বাংলার চালচিত্র’ এর লেখক মহানগরের ফুটপাথ ঘেঁষে লজ্জায় মাথা হেঁট করে।
তার ইচ্ছে হল চেঁচিয়ে বলেন, “জব্বার সাহেব, আপনি লজ্জায় মাথা হেঁট করে হাঁটছেন কেন? এ লজ্জা তো আপনার নয়। এ লজ্জা আমার, আমাদের, পৃথিবীর যেখানে যত বাঙালি আছে, সমস্ত বাঙালির।”
নতুন গতি পত্রিকার সম্পাদক এমদাদুল হক নুর সাহিত্যিক আব্দুল জব্বারের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন, কাফেলায় চাকরি করা কালীন একদিন সম্পাদক আবদুল আজিজ আল আমান জানান, তিনি ঠিক করেছেন সাহিত্যিকদের কাফেলা পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করবেন! জব্বার সাহেবকে মনোনীত করা হয়! তাকে কাফেলা পুরস্কার দেওয়া হবে এই বার্তা বহন করে আমি তার দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাতগাছিয়া গ্রামের বাড়িতে যাই! পরবর্তীতে নতুন গতির সম্পাদক হয়ে ২০০২ সালে তাকে আমি নতুন গতি পুরস্কার দিতে পেরে আনন্দ ও কৃতার্থ বোধ করি! সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়! নানান সময়ে তিনি আর্থিক দুর্দশার কথা আমাকে বলতেন! একবার তিনি আমাকে অনুরোধ করেছিলেন পতাকা গ্রুপের কর্ণধার জনদরদি মহৎহৃদয় মোস্তাক হোসেনকে বলে আমি যেন তার জন্যে একটি ঘর বানিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করি, যাতে তিনি সুস্থ ভাবে লিখতে পারেন! মোস্তাক সাহেবকে জানাতেই তিনি রাজি হয়েছিলেন! ২০০৮ সালে নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর হাত দিয়ে মুসলিম ইনস্টিউট হলে পতাকা গ্রুপের কর্ণধার মোস্তাক মুস্তাক হোসেনের দেওয়া এক লক্ষ টাকার চেকটি সাহিত্যিক আব্দুল জব্বারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল! সাহিত্যিক আব্দুল জব্বার একজন জাতশিল্পী! অত্যন্ত দুস্থ পরিবার থেকে তার উত্থান! বাংলা সাহিত্যে তিনি কলমের জোরে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন! বহু সরকারি এবং বেসরকারি নামী পুরস্কার তার পাওয়া উচিত ছিল! চরম দারিদ্র্যের মধ্যে ও সারা জীবন সাহিত্য চর্চা করে গেলেও তার ভাগ্যে সেসব জোটেনি।
বাংলা সাহিত্যে এর আগে এইভাবে অবিকল জলজ্যান্ত মানুষকে চরিত্রে তুলে আনেননি কেউ। মার্ক টোয়েনের অবিস্মরণীয় Tom Sawyer’s School Days এবং Huckleberry Finn উপন্যাস দু’টি এই প্রসঙ্গে প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। পরিচিত শব্দগুলো অশিক্ষিত মানুষের মুখে মুখে রূপান্তরিত ফর্ম ব্যবহার করেছেন আবদুল জব্বার অনায়াসপটুত্বে - গোঁদরোক(গন্ধক), যৈবন(যৌবন), লৈকতা (লৌকিকতা) প্রভৃতি। তিনি মূল স্রোতের বাংলা ভাষাকে এই উপনদীর সন্ধান দিয়েছিলেন। এখনকার বাংলা ভাষা সাহিত্যকে বহমান রাখার জন্য এইরকম আবদুল জব্বারের আশু প্রয়োজন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct