কুতুবউদ্দিন মোল্লা, কুলতলি: জমিয়তের কর্মকর্তারা ইয়াস নামক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে গাঙ্গেয় সুন্দরবন এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের বাঁচার আশ্বাস কেড়ে নেয়। তা বিভিন্ন মিডিয়ায় সম্প্রসারিত হওয়ার পর, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সারেজমিনে দেখেন। জমিয়তের জয়নগর শাখার কর্মকর্তারা ২০০০ পরিবারের চার দিনের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। জয়নগর শাখার কর্মকর্তারা বলেন যে, “ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় সর্বোচ্চ কেড়ে নেওয়ার পর, যে সমস্ত পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে, এই মুহূর্তে ছাদ বিহিন খোলা রাস্তার মধ্যে বাঁচার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরকে সামনে রেখে এই মুহূর্তের উদ্যোগ।” একে একে খোওয়াতে হয়েছে ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছ গৃহস্থলির গৃহপালিত পশু, এমনকি বাড়ির মধ্যে থাকা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। আশ্রয়স্থল হিসেবে সরকারি সেন্টার কিংবা ঢালাই রাস্তার উপরে দিন যাপন। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখানোর পর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং জমিয়ত উলামা হিন্দের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা কমিটির পক্ষ থেকে ইয়াস নামক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে একটু বাঁচার আশ্বাস জাগিয়েছেন। তাদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করলেন কোথাও নিজ উদ্যোগে রান্না করে খাবার তুলে দেওয়া, কোথাও বা শুকনো খাবার, কোথাও পরনে বস্ত্র এই মুহূর্তে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তের এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। সাথে সাথে বিভিন্ন সংগঠন এবং স্বেচ্ছাসেবীরা এই কাজে নেমে পড়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধি তারাও এ কাজে হাত লাগিয়েছেন। গ্রামের গুটিকয়েক ছেলে মেয়েরা এই কাজে হাত মিলিয়েছেন। নুন আনতে পান্তা ফুরায় যে সমস্ত পরিবারের, সহায়-সম্বল হীন অবস্থায় থাকা তাদের পাশে এমন চিত্র দেখা গেল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কুলতলী, গোপালগঞ্জের অসহায় মানুষের পাশে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সদস্যদের। অপর দিকে দেউলবাড়ীর দক্ষিণ দূর্গাপুর ও জর্জের হাটে কয়েক শত মানুষদের সহযোগিতা করবেন। আগামী দিনে পানীয় জল থেকে রাস্তাঘাটের মানোন্নয়ন ঘটানোর লক্ষ্যে আজ তারা মানুষের দুয়ারে। যেখানে পৌঁছায়নি উন্নয়নের ছোঁয়া। ত্রাতা হিসেবে দেখা মিলল জমিয়ত উলামা হিন্দের কর্মীদের।
সাথে সাথে এলাকার সমস্ত মানুষজন এমনি মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। আগামী দিনে পিছিয়ে পড়া সুন্দরবন বাসীদের পাশে মানুষের সাথে এবং মানুষের পাশে তারা ভালোভাবে কাজ করবেন এমনই আশা-ভরসা তাদের উপর মানুষ করছেন। যেখানে চার চাকার যান আসতে পারে না কিন্তু একেবারেই কুলতলির কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি থাকা মানুষগুলো। নদীবেষ্টিত এলাকায় না আছে তাদের খাদ্য বস্ত্র, বাসস্থান তার উপরে ইয়াস নামক প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ইতিপূর্বে বুলবুল, ফণি, আমফান, ও ইয়াশের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তাদের সব কেড়ে নিয়েছে প্রতিবছর এমনই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। করোনা মহামারী যখন সারা বিশ্বকে টনক নাড়িয়ে দিচ্ছে, তার মধ্যে লকডাউন। ইয়াস নামক প্রাকৃতিক বিপর্যয় তাদেরকে সর্বস্বান্ত করেছে। একদিকে করোনা নামক মারণ ভাইরাস যেভাবে মানুষের শিরায় শিরায় বইতে শুরু করেছে, তার উপর ইয়াস নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেড়ে নিল তাদের সমস্ত সম্পদ। আর এই মুহূর্তে সামাজিক দূরত্ব? দূরত্বকে শিকেয় তুলে ও মানুষের পাশে যেতে হচ্ছে। যেখানে নেই কোন ভেদাভেদ হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোনজন কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র। বলতে গেলে এখানে কে কোন সম্প্রদায় কোন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানবিকতার নজির গড়লেন মাওলানা সওকত আলি সাহেব, মাওলানা রহমাতুল্লা সাহেব, মাওলানা খয়রুল আনাম। এদের মতো সমাজ কর্মী খুবই প্রয়োজন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct