আপনজন ডেস্ক: করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে জোর ধাক্কা খেল কেন্দ্রীয় সরকার। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে বলে, ৩৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল কোথায় ব্যয় করা হয়েছিল, ভ্যাকসিনের অ্যাকাউন্ট দিতে হবে, কালো ছত্রাকের প্রস্তুতি কী? এভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্যাকসিন নীতির চরম সমালোচনা করেন।
এদিন করোনার মহামারী চলাকালীন ওষুধ, অক্সিজেন এবং টিকা দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট জানতে চায়, করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট রেখেছে কেন্দ্র, এখন পর্যন্ত কোথায় ব্যয় করা হয়েছে? আদালত কেন্দ্রে ভ্যাকসিনের হিসাব চায় কালো ছত্রাক সংক্রমণের ওষুধের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও জানতে চায়।
বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি এলএন রাও এবং বিচারপতি এসআর ভট্টের গঠিত বেঞ্চ কেন্দ্রের টিকা নীতিটিকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছে।
কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে করোনা ভ্যাকসিন দিচ্ছে তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এদিন বলেন, টিকাদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে এটিই একক বৃহত্তম কাজ। কেন্দ্রটি এই বছর টিকা দেওয়ার জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট রেখেছে। এই তহবিলটি এতক্ষণ কীভাবে ব্যয় করা হয়েছে তা কেন্দ্রের স্পষ্ট করা উচিত। এটি কেন ১৮-৪৪ বয়সের নাগরিকদের বিনামূল্যে করোনা টিকা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়নি তাও ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয় কেন্দ্রকে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ এ অবধি কতজনকে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া তা নিয়ে কেন্দ্রে কাছে জানতে চায়, প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপে কতজন লোক টিকা দেওয়ার যোগ্য ছিল এবং এখন পর্যন্ত এই লোকদের কত শতাংশ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একক ডোজ এবং ডাবল ডোজ উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর মধ্যে গ্রাম ও শহরে কতজন ভ্যাকসিন পেয়েছে তার তথ্য দিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট কতটা করোনা ভ্যাকসিন কেনা হযেছে তারও পরিসংখ্যান চায় কেন্দ্রে কাছে। এ নিয়ে বলে, কোভিশিল্ড, কোভাক্সিন এবং স্পুটনিক-ভি এর কতগুলি ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে, ভ্যাকসিনের অর্ডারের তারিখ, ভ্যাকসিন অর্ডার করার পরিমাণ এবং এটি কখন সরবরাহ করা হবে তার বিস্তারিত চাই।
কেন্দ্রীয় সরকার বলেছিল এ বছরের শেষ নাগাদ দেশের সমস্ত শ্রেণির মানুষদের টিকা প্রদান করবে। সরকার কখন এবং কীভাবে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে বাকি লোকদের টিকা দিতে চায় তা জানতে হবে।
কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলেছে। তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকৃতি নীতি কি তা জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বলে, কেন্দ্র বলেছিল যে রাজ্য সরকারগুলি তাদের জনসংখ্যা বিনা মূল্যে টিকা দিতে পারে। এ জাতীয় পরিস্থিতিতে, রাজ্য সরকারগুলি এই বিষয়ে তাদের অবস্থান আদালতের সামনে পরিষ্কার করা উচিত কিনা তা করা হচ্ছে কিনা তা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় রাজ্যগুলি যদি তাদের রাজ্যের বাসিন্দাদের বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয় তবে সেটা মূল্যবোধের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রকে রাজ্যগুলিকে জানানো উচিত, তাদের নীতি যাতে রাজ্যগুলি তাদের বাসিন্দাদের সুনিশ্চিত করতে পারে বিনামূল্যে টিকা পাওয়ার অধিকার নিয়ে। ব্যাপারে দু সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রকে তাদের অবস্থান জানাতে হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের করোনা ভ্যাকসিন নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি আদালতের সামনে পেশ করা উচিত বলে জানিয়েছে।
এদিন ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের করোনা ভ্যকসিন দেওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি মন্তব্য করে। শীর্ষ আদালত বলে, আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে তুরনা করে ব্যাকসিনের দাম নির্দারণ করতে হবে কেন্দ্রকে। ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের করোনা ভ্যাকসিনের জন্য চড়া দাম দিতে হচ্চে। অথচ, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ সেদেশের নাগরিককে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিচ্ছে। ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সের লোকেরা কেবল করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে না, তাদের দীর্ঘসময় হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এই বয়সের লোকেরাও মারাও যাচ্ছেন। শীর্ষ আদালত তােই বলেছে, করোনার মহামারীর পরিবর্তিত প্রকৃতির কারণে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সের লোকদের টিকা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। অগ্রাধিকার গোষ্ঠীর জন্য পৃথকভাবে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
ভ্যাকসিনের দাম নিয়েও সমালোচনা করতে ছাড়েনি সুপ্রিম কোর্ট। ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সিদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিচ্ছে কেন্দ্র। রাজ্যগুলিকে ৫০ শতাংশ ভ্যাকসিন কেন্দ্রে থেকে চড়া দামে নির্মাতাদের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে, সেরকারির হাসপাতালগুরিকে আরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। নিয়ে তাই স্পষ্ট নীতি থাকা দরকার কেন্দ্রের।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct