আপনজন ডেস্ক: করোনা সংক্রমণের প্রকোপে যোগী আদত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশের যে বেহাল দশা তা আর নতুন করে বলার নেই। যোগী অাদিত্যনাথের প্রতি বিদ্বেষ মনোভাবের জন্য মুসলিমদের সেখানকার মুসলিমদের ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু করোনা সঙ্কটে তারা সেসব দূরে ঠেলে দিয়ে জানত ধর্ম নির্বিশেষে করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত হচ্ছেন। তাই উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন মসজিদ কিংবা ঈদগাহ এখন করোনা ভ্যাকসিন সেন্টারে পরিণত হয়েছে। বহু মুসলিম যুবক বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন করোনা রোগীদের বাড়িতে। এবার এই ধরনের মহৎ কাজে এগিয়ে এসচেন ২৬ বছর বয়সি এক মহিলা আরশি আনসারি। নিজের স্কুটি করে বিনামূলে অক্সিজেন সিলিন্ডার করোান আক্রান্তদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে চলেছেন। যার দৌলতে আরশি ;অক্সিজেন বিটিয়া’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন সংবাদপত্রে তার এই সমাজসেবার কথা প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাপারে ‘দ্য উইক’ ম্যাগাজিনের সাংবাদিক পূজা আওস্তি আরশিকে নিয়ে লেখা প্রতিবেদনে সমাজের জন্য তার নিবেদিত প্রাণের কথা তুলে ধরেছেন।
উত্তরপ্রদেশের শাজাহানপুরের এউ তরুণী আরশির ‘সিলিন্ডার বিটিয়া’ (সিলিন্ডার কন্যা) হযে ওঠার পিছনে রয়েছে তার নিজের জীবনের এক ঘটনা। আরশি আনসারির বাবা মাশকুর (৬৫) রমজানের প্রথম দিন ২ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। টেস্ট করে দেখা যায় তিনি কোভিড আক্রান্ত। দমের কষ্ট হওয়ায় তখন প্রয়োজন হয় অক্সিজেনের। আরশি তখন অক্সিজেন সিলিন্ডার চেয়ে সিটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়েছিলেন। তখন তাকে বলা হয়েছিল যে বাড়িতে তাকা এ ধরনের রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারের কোনও ব্যবস্থা নেই।
তাকে পরামর্শ দেওয়া হয় তিনি তার বাবার জন্য একটি হাসপাতালের সন্ধান করুন।
মাদারখেল এলাকার বাসিন্দা আরশি তখন জেলা হাসপাতালে যান। সখোনে গিয়ে হাসপাতালের দুর্গন্ধ ও জঞ্জাল দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তারপরে তিনি কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে বাবাকে ভর্তির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সে চেষ্টাও ব্যর্থ হয। তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, অক্সিজেনের কোনও ব্যবস্থা। অক্সিজেন তাকে নিজেকেই ব্যবস্থা করতে হবে।
এই ঘটনার পর ইংরেজী ও উর্দুতে স্নাতকোত্তর শেষ করা আরশি বলেন, আমি তখন কোনও হাসপাতালে বাবাকে ছেড়ে দিতে চাইনি।
পরের দিন সকালে, তিনি আবার সিটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে সিলিন্ডারের জন্য আবেদন করলেন। এবার তাকে একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে, আরশি সোশ্যাল মিডিয়ায় সিলিন্ডারের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তাতে রুদ্রপ্রয়াগের একদল স্বেচ্ছাসেবীর কাছ থেকে সাড়া পান, যারা তাকে ১০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠিয়েছিলেন।
ততক্ষণে, প্রায় একমাস অসসু্থ থাকার পর তার বাবা সুস্থ হয়ে ওঠেন। প্রথম ১২ দিন লাগরেও তার পরে আর অক্সিজেন সিলিন্ডারের দরকার পড়েনি। এরপরে আরশি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে তিনি এইগুলি অভাবগ্রস্থদের মধ্যে বিতরণ করবেন, যারা একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছাতে পারে। শাহজাহানপুর এবং এমনকি হারদই যা প্রায় ৬৭ কিমি দূরে প্রতিবেশী রাজ্য উত্তরাখণ্ডে কোনও টাকা ছাড়াই আরশি দীর্ঘ দিন ধরে অক্সিজেন সিলিন্ডার বয়ে দিয়ে আসছেন। যদিও অনেকে সিলিস্ডারে গ্যাসও ভরে দিয়েছেন। আরশি বলেন, কেউ সিলিন্ডার রাখেন না। এটির কোনও ব্যবহারে প্রয়োজন ফুরলে তারা এটিকে পুনরায় ভর্তি করে অন্যের কাছে পাঠিযে দেন।
আরশি রমজান মাসে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ করেও কোনও অস্বস্তি বা ক্ষুধা অনুভব করেননি। তার স্বীকারোক্তি, ‘এটি আমার বিশ্বাস মহান আল্লাহর করুণার জন্য আমি এই কাজে সফল হয়েছি।
তবে তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও শোনান। এই কাজ করারর জন্য তাকে রাস্তার ধারের ছেলেরা কটূক্তি করত। সোম্যঅল মিডিয়া নানা নোংরা পোস্ট করত। তবে তরিদ্র শিশুদের জন্য একটি কম্পিউটার কোচিং ইনস্টিটিউট চালনাকারী এই মহিলা আরশি বলেন, একজন অভাবী ব্যক্তিকে সহায়তা করার জন্য আপনার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসাটা অনেক ভাল। এই মহামারি থেকে তিনি অনেক শিক্ষাই পেয়েছেন। আর তা হল অপরের বিপদের দিনে তাকে সাহায্য করা শিখিয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct