মীর মহম্মদ ফিরোজ, মকরমপুর: চলে গেলেন প্রবীণ মহিলা শিক্ষক-সাহিত্যক ফাতেমা খাতুন। যিনি রাজ্যের সাহিত্য জগতে তরিকাতুন্নাহার নামে পরিচিত। শুক্রবার ভাঙড় থানা এলাকায় তাঁর বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তাঁর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই মারা যান। ফাতেমা খাতুন পেশাগত জীবনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মকরমপুরে শিশু বিকাশ একাডেমিতে শিক্ষক হিসেবেই কর্মরত ছিলেন। আমৃত্যু সেখানেই শিক্ষকতাকেই বেছে নেন। স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন ‘ফাতেমা ম্যাডাম’। তাঁর মৃত্যুতে শিশু বিকাশ একাডেমির ছাত্র-শিক্ষক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ফাতেমা খাতুনের ইন্তেকালে গভীর শোকপ্রকাশ করে শিশু বিকাশ একাডেমির সম্পাদক মুন্সী আবুল কাশেম বলেছেন, এক মহান শিক্ষককে হারাল স্কুল ও মুসলিম সমাজ। তিনি জানান, এই এলাকায় মুসলিম মহিলারা যখন শিক্ষার আলো থেকে দূরে তখন তিনি উচ্চশিক্ষায় নজির রেখেছেন। শিশু বিকাশ একাডেমির সূচান লগ্নে থেকেই প্রাথমিক বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে এক বিশেষ স্থানে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাই তার চলে যাওয়া স্কুলের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। ফাতেমা খাতুনের মৃত্যুতে এক অভিজ্ঞ ও মুসলিম শিক্ষা দরদি হারালাম বলে মন্তব্য করেন শিশু বিকাশে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুন্সী ফারুক আহমেদ সহ অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।
অন্যদিকে, ফাতেমা ম্যাডামের মৃত্যর খবর ছড়িয়ে পড়ায় শিশু বিকাশ একাডেমির প্রাক্তনীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের প্রিয় শিক্ষিকাকে হারানোর দুঃখ প্রকাশ করতে তাকে। তারা বলে, প্রাথমিকে ফাতেমা ম্যাডামের মাতৃস্নেহে শিক্ষালাভ কখনও ভোলার নয়। সে ঋণ শোধ করা যাবে না। তাই তারাই শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
মিতভাষী ফাতেমা শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাকে বেছে নেন। গল্প, কবিতা, উপন্যাস লিখলেও মূলত ছোটগল্পকার হিসেবে তার হিসেবে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। তরিকাতুন্নাহার নাহার নামেই তাঁর যাবতীয় গল্প, কতিবা, উপন্যাস প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকায় তাঁর বহু গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। পুবের কলম, নতুন গতি, আপনজন, বাংলার রেনেসাঁ প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর বেশ কিছু গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাঁর নীরব সাহিত্যচর্চা অকপটে তাহে মহিলা গল্পকার হিসেবে স্বীকৃতি পাইয়ে দেয়। রাজ্যে যে কয়েকজন মুসলিম মহিলা গল্পকার ছিলেন তার মধ্যে তরিকাতুন্নাহার এক অনন্য স্থান করে নিয়েছিলেন।
১৯৪৯ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম দেবীপুরে জন্ম ফাতেমা খাতুনের। পিতা মোহাম্মদ রজব আলি মোল্লা, মাতা আয়েশা বিবি। যে সময়ে তাঁর জন্ম সেই সময়টাতে মুসলিম সমাজ থেকে শিক্ষার আঙিনায় মহিলাদের উপস্থিতি ছিল ব্যাতিক্রমী ঘটনা। সেই সময়ের এমনই এক ব্যতিক্রমী মহিলা তরিকাতুন্নাহর ওরফে ফাতেমা খাতুন। কুলটি গভঃ রিফিউজি কলোনি গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিক, তারপর কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে বি এ পাশ করে। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে বাংলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান এ ডবল এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি শিশু বিকাশ একাডেমি নামে একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।
পড়াশোনার প্রতি যেমন অদম্য জেদ সাথে সাহিত্য চর্চা তাঁর মননে লালন করে চলে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় গল্প, কবিতা, প্রকাশিত ছাড়াও বেশ কযেকটি গ্রন্থ রয়েছে তাঁর। সেগুলি হল, প্রেমাঞ্জলি (কাব্য ), ছিন্ন মেঘের ছায়া (উপন্যাস ) (দুটি খণ্ড) ও শান্তির বাহক ইসলাম (প্রবন্ধ )। সবকটি গ্রস্থই প্রকাশিত হযেছে নতুন গতি প্রকাশনী থেকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct