ফৈয়াজ আহমেদ: কালিম্পং ছাড়িয়ে আরো উনিশ কিলোমিটার। পথে পড়বে মিলিটারি ক্যাম্প। তারপর পাইনের আলো-ছায়া ঘেরা পথ দিয়ে খানিক এগোতেই রামধুরা। রামধুরাকে বাঁয়ে রেখে ডানহাতে ওপরে উঠলেই ইছে গাঁও। কিন্তু, আজ আমাদের ঠিকানা অন্য। অতএব, রামধুরা ছাড়িয়ে সোজা রাস্তা ধরে আরো খানিকটা এগোতে হবে। মিনিট দশ পরেই এসে পড়বে দারা গাঁও।
পাইনঘেরা পাহাড়ি গ্রাম। ছবির মতো কাঠবাড়ি। দু’দিকের দেওয়ালেই জানলা। একদিকের জানলা খুলে উঁকি মারলেই নিচে এঁকেবেঁকে চলেছে তিস্তা। আর, অন্যদিকের জানলার বাইরে আকাশে টাঙানো কাঞ্চনজঙ্ঘা। কী ভাবছেন? স্বর্গ! স্বর্গই বটে। উত্তরবঙ্গের নতুন এই স্বর্গের নাম — দারা গাঁও।
একটা ছবির মতো গ্রাম। এখনো পর্যটকদের ভিড় তেমন বাড়েনি। ফলে, হিমালয়ের সবুজ অনেক সজীব, কুমারী এখানে। হাতে গোনা সাত-আটটা হোমস্টে। কাঠের খেলনাবাড়ি যেন। ভিতরটা অদ্ভুত সুন্দর। আর, বাইরে? সবুজ ঢেউ খেলানো একচিলতে ঘাসজমি। দু’পাশে মাথা উঁচু পাইন ও অন্যান্য হিমালয়ান বৃক্ষের বন। গ্রামেই চাষ হচ্ছে এলাচ, সরষে। কোনো রাস্তাই সোজা নয় এই গাঁয়ে। প্রতিটি কোণ থেকেই নিসর্গের এক এক রূপ। নেশা লাগবে।
পূর্ব হিমালয়ের অন্যতম সেরা ভিউ পয়েন্ট এই গ্রাম। কেউ কেউ বলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘার ব্যালকনি। ঘরের জানলা থেকেই দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার গোটা রেঞ্জ। তাছাড়া, নিচে সর্পিল গতিতে বয়ে চলা তিস্তার দেখাও মিলবে সহজেই। দারা গাঁও থেকে পায়ে হেঁটে চলে যাওয়া যায় দারা বাংলোয়। শতাব্দীপ্রাচীন এই বিলিতি বাংলোর গড়নে টিউডর স্থাপত্যের মাধুর্য। চাইলে থাকতে পারেন এই বাংলোতেও। বাংলোর পাশে সবুজ ঢেউ খেলানো লন, কমলালেবু গাছ। পায়ে হেঁটেই ঘুরে আসা যায় সিলেরি গাঁও, রামিতে ভিউ পয়েন্ট।
উত্তাল হইচই, ক্যাম্প ফায়ারের জায়গা নয় এই গ্রাম। হয়তো গ্রামের সহজ-সরল-মুখচোরা মানুষগুলো বারণ করবে না আপনাকে। তবু, এই গ্রামের নির্জনতাকে ভাঙতে ইচ্ছে করবে না আপনার।
পাখি দেখার নেশা থাকলেও হতাশ হবেন না। হিমালয়ান পাখিদেরও স্বর্গরাজ্য এই গ্রাম। এই গ্রাম আপনাকে ঘিরে ধরবেই মায়ায়। কচি কচি পাহাড়ি ছেলে-মেয়েগুলো, কোঁচকানো চামড়ার বয়স্ক সদাহাস্য মুখগুলো শহুরে জটিলতার স্মৃতি ইরেজার দিয়ে মুছে দিতে চাইবে মাত্র দু-তিন দিনেই। প্রকৃতিতে স্বর্গ যদি কোথাও থাকে, তা এখানেই।
কীভাবে যাবেন
ট্রেনে এনজেপি বা বিমানে বাগডোগরা। সেখান থেকে সড়কপথে দারা গাঁও। তিস্তা বাজার অবধি এলে দারা গাঁও হোমস্টে থেকেই গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা আছে।
কোথায় থাকবেন
একতা হোমস্টে-সহ কয়েকটা হোমস্টে আছে। চাইলে থাকতে পারেন দারা বাংলোতেও।
কখন যাবেন
সেরা সময় অক্টোবর থেকে এপ্রিল। শীতে গেলে কমলালেবু ভর্তি গাছের শোভা মুগ্ধ করবেই।
কোথায় কোথায় যাবেন
চাইলে গাড়িতে ঘুরে আসতে পারেন কালিম্পং, লাভা, লোলেগাঁও, পেডং। এছাড়াও রয়েছে একাধিক ট্রেক রুট। স্থানীয় গাইডদের সাহায্যে বেরিয়ে পড়ুন ইচ্ছে আর সাধ্যমতো।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct