আপনজন ডেস্ক: কর্নাটকের চিত্রদুর্গা জেলার হিরিউর শহরে পুরনো আসবাবের দোকান চালান মিলন রফিক নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ির সামনে তার মারুতি ওমনি পার্ক করার অনুমতি নেই। আর তার প্রতিবেশীরাও তাকে দেখতে যান না। কারণ, তিনি তার মারুতি ওমনিকে শব বাহী গাড়িতে রূপান্তরিত করেছেন। ওই গাড়িতে করে কোভিড রোগীদের মরদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কবরস্থান ও শ্মশানে তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য। ইতিমধ্যে তিনি ২০০টিরও বেশি মরদেহ শ্মশান ও কবর স্থানে নিয়ে গিয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৮৯জনই কোভিডের রোগী ছিলেন। বিনামূল্যে তার এই পরিষেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, যখন মৃতের স্বজনরা ও পরিবারগুলি জীবিত ও মৃত উভয় কোভিড রোগীকে পরিত্যাগ করে চলেন তখন মৃতদের মর্যাদা দান করতে শেষকৃত্যের জন্য শ্মশান ও কবরস্থানে পৌঁছে দেওয়া।
রফিক বলেন, কোভিড মানবতাকে হত্যা করেছে। লোকেরা মৃত্যুবরণ করা তাদের নিকটজনদের এমনকি অসুস্থ বাবা-মার যত্ন নিতে প্রস্তুত নয়। তার দৃষ্টান্ত হিসেবে রফিক বলেন, তিনি হিরিউর তালুক হাসপাতালের মর্গে অজ্ঞাতপরিচয়ের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। সে সময় তিনি এতটাই বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি সিদ্ধান্ত নেন জাতি, বর্ণ ও ধর্ম নির্বিশেষে তাদের শেষ কৃত্যের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নেবেন। তাই তিনি এই সব লাশ বহন করে শ্মশান বা কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও অর্থ নেন না। কেবল খুশি হয়ে কিছু দিলে সেটাই নেন। রফিক জানান, লাশ নিয়ে জাইয়ার আগে আমি তাদের পরিবারকে কবর খোঁড়াতে বলি, যাতে আমরা লাশ দাফন করতে পারি ও লাশ কবরস্থ করা যায়। গড়ে, প্রতিদিন দুটি মৃতদেহ সমাধিস্থ করেন বলে তিনি জানান। আর গত রবিবার চিত্রদুর্গা ও হিরিউরে চারটি মরদেহ ডাঃ করেছেন বলে জানান।
তিনি চিত্রদুর্গা, বেঙ্গালুরু এবং কোলার জেলায় শ্মশানে লাশ বয়ে নিয়ে যান। কখনও বেঙ্গালুরু থেকে কোলারে এবং টুমকুরের মধুগিরিতে মরদেহ নিয়ে যান। যখন অ্যাম্বুলেন্সগুলি লাশ বয়ে নিয়ে যেতে চড়া দর হাঁকে, তখন রফিক মর্তের পরিবারের কাছে জানতে চান মৃতদেহ কোথায় নিয়ে যাবেন। তখন তিনি তার মারুতি ওমনি গাড়ি বের করেন।
রফিক আরো জানান, গাড়ির পেট্রোল আর মেরামতির খরচ তার বন্ধুরা মিটিয়ে দেন। তার এই মানিবক কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বন্ধুরা এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানান রফিক।
তবে এই গাড়ির খরচ বহন করার জন্য তার ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙেছেন। যখন কোনো পরিবার স্বজন হারানোর যন্ত্রণা ভোগ করছেন তখন তাদের কাছে টাকা চাইলে পাপ হবে বলে মন্তব্য করেন রফিক।
তবে রফিক জানান এই কাজে তার স্ত্রী শাহতাজ বেগম, পুত্র মোহাম্মদ জুবায়ের এবং জামাতা মোহাম্মদ আলী তাকে সমর্থন করেন এবং এমনকি শেষকৃত্যে দেহ নিয়ে যেতে সহায়তা করেন। শেষকৃত্য করে ফিরলে তারা মাস্ক এবং পিপিই কিট পরে ওমনিকে স্যানিটাইজ করে। অবশ্য সম্প্রতি এক ঘটনার কথা বলেন যেখানে লাশ নিয়ে যাওয়ার পির তাদের এক গ্লাস জল দেওয়ার মতো কেউ থাকে না। হারিয়ুরে বাড়িতে ফিরে আসার পর ছেলে, জামাতা জল দিলে তা খেতে হয়। তবে সবাইকে নির্দ্বিধায় এই পরিষেবা দেওয়ার জন্য নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে দেন রফিক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct