রাজু আনসারী, অরঙ্গাবাদ: যে বয়সে পড়াশুনা করেই কাটিয়ে জীবন কাটানোর কথা, সেই সময় সারাদিন বাজারে ঘুরে কাঁচা ছোলা বিক্রি বেড়াচ্ছে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া মামুন সেখ। লকডাউনে এখন সব স্কুল বন্ধ। আর গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে পড়ে অনলাইনে ক্লাস করারর সুযোগ নেই। তার উপর মামুনের বাবা করোনা আবহের কারণে বাড়িতেই দিন কাটাচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়ে সংসার চালানোর তাড়নায় কাঁচা ছোলা, নুন, লঙ্কা নিয়ে বাজারে বাজারে ঘুরে বিক্রি করেই দিন কাটছে দশ বছরের মামুন সেখের।
করোনা যুদ্ধে রাজ্যের মানুষ শামির তখন মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানা এলাকার নিমতলা গ্রামের বাসিন্দা চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া মামুন সেখ ব্যস্ত আর এক জীবনযুদ্ধে। বাসুদেবপুর হাটে রবিবার বিকেলে দশ বছরের মামুন সেখকে কাঁচা ছোলা বিক্রি করতে দেখা গেল। আর তাই সে অচিরেই খুদে ছোলাওয়ালার তকমা পাচ্ছে এলাকায়। এই করোনায় কত মানুষের প্রাণ কেড়েছে এখনো করোনার সঙ্গে মোকাবিলা বা যুদ্ধ চালাচ্ছে রাজ্য থেকে গোটা দেশ। কিন্তু এই মামুনকে ছোলাওয়ালা বানিয়ে ফেলেছে এই করোনা নিয়তির এই অদৃশ্য খেলা, যা চোখে জল এনে দেয় এই দশ বছরের মামুন সেখকে। তার বাড়ি সামশেরগঞ্জের নিমতলা। মামুনের সেখের বাবা কিন্তু পেশায় একজন ছোলাওয়ালা। করোনা আবহে বাবার শূন্য জায়গাটা মামুন দখল করে নিয়ে সে এখন পুরোদস্তুর হয়ে উঠেছে বাবার মতোই ছোলাওয়ালা।
ছোট্ট মামুনের উপলব্ধি, করোনা পরিস্থিতিতে সবাই এড়িয়ে যেতে চায়। এই করুণ পরিস্থিতিতে সেই চায় না সংসার চালাতে কারও কাছে হাত পাততে। তাই করোনা ভাইরাসের জন্য রাজ্যে পুরো লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় সংসার চালানোর বাবার দায়িত্বই সে কাঁধে করে নিয়ে এগিয়ে চলেছে। একদিকে বাবাকে সুস্থ রাখার প্রয়াস, অন্যদিকে ছোলা বিক্রি করে সংসারের জন্য আয়, এভাবেই দিন কাটছে মামুনের।
বাসুদেবপুর হাটে ছোলা বিক্রি করতে করতে মামুন জানায় রোজগার বাড়িয়ে তুলতে কাঁচা ছোলা বিক্রি করছি। আমার বাবা একজন ছোলাওয়ালা কিন্তু লকডাউনের জন্য আমার বাবার বিক্রি বন্ধ। প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টাকা বেচাকেনা হচ্ছে আমার। তা দিয়ে সংসার চালাতে বাবা হিমসিম খেতে হচ্ছে, আর তার মধ্যে বাবাকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করছি। তাই বাবাকে সাহায্য করছি। মামুন জানাল, তার ইচ্ছা পড়াশুনা করে চাকরি করার। কিন্তু লকডাউন আর করোনাতাকে ছোলাওয়ালা তৈরি করে দিয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct