জুলফিকার মোল্যা, স্বরূপনগর: করোনায় মৃত হিন্দুর দেহ কাঁধে দেড় কিলোমিটার দুরে শ্মশানে কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে সৎকার করল মুসলিম ঘরের ছেলেরা। বৃহস্পতিবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এমন নিদর্শনের স্বাক্ষী থাকল স্বরূপনগরের সীমান্তবর্তী নির্মাণ গ্রামের মানুষ।
সম্প্রতি স্বরূপনগরে যে ভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে তাতে এলাকার মানুষ রীতিমত আতঙ্কৃত হয়ে পড়েছে। শাঁড়াপুল পঞ্চায়েতের নির্মাণ গ্রামের বাসিন্দা প্রায় পঞ্চান্ন বছর বয়সী বসন্ত রায় সহ তার পরিবারের কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হয়। হোম করেন্টাইনে থেকে তাদের চিকিৎসা হচ্ছিল। এ দিন সকালে বসন্তের মৃত্যু হয়। এ কথা জানাজানি হলে ভয়ে আতঙ্কে ঘর থেকে মৃতদেহ বের করে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার কাউকে পাওয়া যায় না। তা জানতে পেরে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে এগিয়ে আসে স্থানীয় বুথে বাড়ি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবক শফি কামাল মোল্লা। তিনি জাতপাতের বিবেচনা না করে এবং ভয়কে উপেক্ষা করে ঘর থেকে মৃতদেহ বের করে পলিথিনে মুড়িয়ে শ্মশানের পথে রওনা দেয়। সেখানে নিয়ম মেনে বসন্তের সৎকার করা হয়।
এ দিকে এক সম্প্রদায়ের মানুষের বিপদের দিনে অন্য আর এক সম্প্রদায়ের মানুষ এগিয়ে আসার ঘটনা চাউর হতেই শফি এবং তার সঙ্গীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন এলাকার মানুষ। এ বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্যা মামনি গাইনের স্বামী মানষ গাইন বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসাবে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি মৃতদেহ সৎকারের জন্য কেউ এগিয়ে আসতে চাইছে না। রীতিমত সমস্যায় পড়ে রায় পরিবার। শেষে শফিকে ফোন করে সব জানালে সে কয়েক জনকে নিয়ে চলে আসে। নির্মান শ্মশানে দেহ নিয়ে গিয়ে সৎকার করা হয়।
স্থানীয় শান্তি প্রসাদ মণ্ডল বলেন, গ্রামে গিয়ে কারো কাছ থেকে কোন সহযোগিতা না পেয়ে শেষে আমরা শফিকে ডাকি। তিনি এসে দেহ বাইরে বের করে একটা বাঁশের সাথে বেঁধে পলিথিন জড়িয়ে শ্মশানে নিয়ে যান। আমরা মানষ গাইনের নেতৃত্ব কাঠ সহ সৎকারের অন্যান্য সরঞ্জামের ব্যবস্থা করি। একটা মুসলিম ছেলে যে ভাবে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে এসে করোনা আক্রান্তের দেহ শ্মশানে নিয়ে গেল তা দেখে আমরা খুশি। এ বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঙ্গীতা কর বলেন, এমন সম্প্রিতির উধাহরণ সৃষ্টিকারী সংখ্যালঘু ভাইদের হিন্দু সম্প্রদায়ের মৃত মানুষের সৎকার করার ঘটনায় জড়িত সকলকে সাধুবাদ জানাই।
এ সব শুনে শফির প্রতিক্রিয়া,মানুষ হয়ে মানুষের জন্য কাজে লাগতে পেরে ভালো লাগছে। আসলে করোনায় স্থানীয় মানুষ এতোটাই ভীত হয়ে পড়েছে যে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস করেনি। ওই যুবকের কথায়,সমাজকে বলব আমাদের দেশ সম্প্রিতির। আমরা যেন মানুষের বিপদে জাতি ধর্মের উর্দ্ধে উঠে কাজ করতে পারি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct