আপনজন ডেস্ক: আমাদের সমাজে সাধারণত বিশ্বাস করা যায় না যে একজন মুসলিম মেয়ে শ্মশানে হিন্দুদের লাশ দাহের নথি রাখার চাকরি করছেন। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। শ্মশানে দাহ করার ক্ষেত্রে সাধারণত মহিলাদের দূরে রাকা হলেও শ্মশানে মৃতদেহের দাহ সম্বন্ধে ত্যত নভিুক্তকরণের কাজই করে চলেছেন সুবনিা রহমান নামে ২৯ বছর বয়সি এক গৃহবধূ। ঘটনাটি অবশ্য আমাদের রাজ্যে নয়, বাম শাসিত কেরলে।
কেরলের ত্রিচুর জেলার ইরিংলাক্কুডায় হিন্দু শ্মশানে শ্মশানের কাজ করতে ব্যস্ত। এখন সুবিনা রহমান। কমার্স গ্র্যাজুয়েট সুিবনার স্বামী পেশায় রাজমিস্ত্রি। বাড়িতে স্বামী ছাড়াও রয়েছে একটি আট বছরের ছেলে। সুবিনা জানতে পারেন ইরিংলাক্কুডায় এসএনবিএস সমাজমের শ্মশানটি নিয়ন্ত্রণ করেন হিন্দু ইঝাভা সম্প্রদায়ের মানুষ।
বেকারত্বের জ্বালা তাড়িযে বেড়াচ্ছির সুবিনাকে। তাই এসএনবিএস সমাজমের শ্মশানেএকটি করণিকের পদ খালি আছে দেখে আবেদন করেছিলেন সুবিনা। এরপর চাকরিটি পেয়ে যান। তারপর থেকে তিনি প্রতিদিন শ্মশানে দাহ করারর সংখ্যা সহ তাদের নাম ধাম প্রভৃতি তথ্য নথিভুক্তের কাজ করছেন। সুবিনাই প্রথম মুসলিম যিনি কেরলের কোনও হিন্দু শ্মশানে কর্মরত।
যেহেতু হিন্দু রীতিনীতি এমনকি তাদের নিকট এবং প্রিয়জনদের শ্মশানের সময়ও মহিলাদের শ্মশানে প্রবেশ করতে দেয় না।
তাই সুবিনার শ্মশান হওয়ার সিদ্ধান্তটি সমাজ কর্তৃক ভালভাবে গৃহীত হয়নি। কিন্তু তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন ও নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন এই চাকরিটি করার ব্যাপারে। যদিও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে বেশ সমালোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি সেই চাকরিটাই করে চলেছেন।
সুবিনা জানান, প্রাক-কোভিডের সময় এটি এক বা দুটি মৃতদেহ দাহ হত। কিন্তু এখন করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় আমরা প্রতিদিন সাত থেকে আটটি মৃতদেহ শ্মশানে আসে যা দাহ করারর ক্ষমতার বাইরে।
তিনি আরওবলেন, একজনের লাম দাহের পর তা পরিষ্কার করতে ওএর ছাই পেতে ২ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে এখন আমরা ১৪ ঘণ্টা কাজ করছি। তা সতেত্বও তা শেষ করা যাচ্ছে না। যার জন্য প্রায়শই পরের দিন দাহ করতে হচ্ছে। মহামারীটির দ্বিতীয় তরঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই দুঃখজনক ও ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সুবিনা আরও জানান, মুসলিম মহিলা হিসেবে এই চাকরি করার ক্ষেত্রে নিকটতম বন্ধুবান্ধব, স্কুল-কলেজের সহপাঠী, নিকটাত্মীয় এবং পরিচিত মানুষ জন কেউই সমর্থন করেননি। তবে কেবল একজনই তাকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি জলেন তার স্বামী কুজনিকান্ডিল ভীতিল রহমান।
সুবিনা অকপটে স্বীকার করেন, তার স্বামী সাদা মাটা মানুষ। তিনি এই কাজের সমর্থন করেছিলেন পরিবারকে সহায়তা করার জন্য। কারণ রাজমিস্ত্রি স্বামী ছাড়াও তার বাড়িতে থাকেন তার বাবা, মা ও তার আট বছরের ছেলে।
সুবিনা জানানা, তার বাাব গাজ কাটতে গিয়ে পড়ে গিয়ে শয্যাশায়ী। মা গৃহবধূ। শ্মশানে জাকরি করে অর্থ বাঁচিয়ে তার বোনের বিয়ের ব্যবস্তা করছেন। আর সুবিনা সবশেষে বলেন, শ্মশানে চাকরি করারর ক্ষেত্রে ধর্ম কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি, কারণ শ্মশানে চাকরি করাটা তার পেশা মাত্র ধর্মাচরণ নয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct