এহসানুল হক, বসিরহাট: ‘ইয়াস’ ঝড়ের পূর্বাভাসে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সুন্দরবনবাসী। মনে পড়ে যাচ্ছে তাদের আমফান ও আয়লার স্মৃতি! দিনটি ছিল ২৫শে মে, ২০০৯। ১১ বছর আগের কথা, উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি, ন্যাজাট, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আয়লার দাপটে ছারখার হয়ে যায়। ঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিদ্যাধরী, রায়মঙ্গল, ছোট কলাগাছি-সহ বেশ কয়েকটি নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে ভেসে গিয়েছিল অঞ্চলের পর অঞ্চল। নদীর নোনা জল ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ফিশারির মাছ, ধানের জমি, ফসল। আয়লা ঘুর্নিঝড় কতখানি বদলে দিয়েছিল সুন্দরবনের ছবিটা? সন্দেশখালি অঞ্চলের বাসিন্দা মোফিদা বিবি বললেন, ‘তখন যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তার ধাক্কা তো আছেই। যেটা তার চেয়েও বড় ধাক্কা, আয়লার ফলে বহু মানুষের যৎসামান্য যে সম্পদটুকু ছিল, তা-ও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন আর রোজগারের কোনও পথই নেই। চোখের সামনে কতগুলো পরিবার সম্পূর্ণ পথে বসল, গুনে শেষ করতে পারব না। শুনছি আবার ঝড় আসবে কি করব বুঝতে পারছিনা। প্রায় আনুমানিক দুই হাজার একর কৃষিজমি নোনা জলে তলিয়ে যায় কয়েক হাজার একরের আমন ধানের ক্ষেত সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। কাজ হারায় কয়েক হাজার কৃষক ও কৃষি-মজুর। আক্রান্ত এলাকাগুলোয় পানীয় জলের উৎস সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। জলোচ্ছাস ও নোনা জলের প্রভাবে, গবাদি পশুর মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ গরু ও ১,৫০০ ছাগল মারা যায়। ঘূর্ণিঝড়ের কয়েক মাস পর থেকে এলাকাগুলোয় গাছপালা মরতে শুরু করে ও বিরানভূমিতে পরিণত হয়। আয়লার পরেই গত বছর আমফান ঝড় শুরু হয়, এলাকার বহূ মানুষ আমফান ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়ে। মৃত্যু হয় বেশ কয়েক জনের। ফসলের ক্ষতি থেকে শুরু করে ঘর বাড়ি। সেই ক্ষতি এখনও পূরণ হয়নি, এরমধ্যেই নতুন আতঙ্ক নিয়ে ফুঁসছে আরেক ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নামে এক ঝড়। সুন্দরবনঘেঁষা হাসনাবাদের টিয়ামারি এলাকা। দুই ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে সুখের সংসার ছিল টীয়ামারি গ্রামের বাসিন্দা অষ্টমী মজুমদার ও দিলীপ মজুমদারের। গত ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে উড়ে গেছিল তাদের মাথাগোঁজার ঘর। জোয়ারে তলিয়ে গিয়েছিল বেঁচে থাকার বড় অবলম্বন কাঁকড়ার ঘের। এক রাতের ঝড়েই ডুবে গিয়েছিল সব স্বপ্ন।
কাতরকণ্ঠে বলেন তারা, ‘মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কাঁকড়া চাষ করি। আমফান ঝড়ের কিছুদিন আগেই এনজিও থেকে তিন লাখ এবং ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। ঘরে সঞ্চিত দুই লাখসহ সাত লাখ টাকা দিয়ে এই মৌসুমের চাষ শুরু করি। জোয়ারে সবই তলিয়ে গেছে। থাকার ঘরটির নিশানাই খুঁজে পাইনি। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। কেউ থাকার জায়গা দিলে থেকেছি, খাবার দিলে খেয়েছি। সব শেষ হয়ে গেছে। আবার শুনছি ঝড় আসছে। কি করব? কি হবে? জানিনা। এদিন বসিরহাটের পিফা পঞ্চায়েতের রাইহানুজ্জামান তিনি বলেন, গত আম্ফান ঝড়ে আমার ঘর উড়ে যায়, থাকার জায়গা টুকু ছিলনা। আজ আবার শুনছি ঝড় আসবে। কি হবে জানিনা। তিনি এদিন বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের নিবেদন, গতবার আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও মুখ্যমন্ত্রীর টাকা পাইনি। এবার সত্যিই যদি ক্ষতি হয় তাহলে আমরা যেন বাদ না যায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct