আপনজন ডেস্ক: ‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেককে আমরা পরের তরে’ এই লাইনটিকে পাথেয় করে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের যুবক যুবতীরা কোভিডের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। গ্রাম থেকে শহর তারাই এখন কোভিড আক্রান্তদের অন্যতম সহায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কখনও হাসপাতালের কোভিড বেড খালি আছে কিনা, কখনও নিজেরা রক্ত দিয়ে, কখনওবা াক্সিজেনের যোগান দিয়ে শহর থেকে গ্রাম দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিন স্নাতকোত্তর পড়ুয়া মানসারুল, রাইহানের ও মাহাবুব। আর তাদের সঙ্গে আর ডাক্তারি পড়ুয়া গোলাম কিবরিয়াও এই সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে চলেছেন নিঃস্বার্থভাবে। তিন জেলার এই তিন তরুণ ছাত্র কোভিড আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে উঠেছেন। তারা যেভাবে করোনা আক্রান্তদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় তাদের দেওয়া ফোন নম্বরে ফোন করলেই কি হিন্দু কি মুসলিম সেসব বাছবিচার না করে মানব সেবায় লেগে পড়েন। কোভিড আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হলে বাড়ির লোকজন অনেক সময় তাদের দাহ করতে লাশ ছাড়াতে পারেন না হাসপাতাল থেকে। তখন সরকারি বিধি মেনে তাদেরকে হাসপাতাল থেকে রোগী মুক্তিতে সহায়তা যেমন করে থাকেন, তেমনি করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তিরও দ্রুত ব্যবস্থা করেন।
বর্ধমানের আউসগ্রাম থানার জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম থেকে উঠে আসা মানসারুল হক বা দক্ষিণ দিনাজপুরের এক ছোট মফস্বল থেকে উঠে আসা রাইহান সিদ্দিক কিংবা মাহাবুব খানদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর গল্পগুলো হাজারো কান্নার মাঝে আশার জোগান দেয়।।
বিগত রমযান মাসে রোযা রেখেও যেভাবে এই তিন যুবক কোভিড আক্রান্তদের জন্য গভর্মেন্ট হসপিটালে বেড, কখনও কোনো রুগীর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার, কখনও প্লাজমা,কখনো রক্তের জোগাড়, কখনও রুগীর পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে তা সত্যিই আশা জোগায়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আল আমীন মিমানসারুল জানান তিনি কীভাবে কোভিড আক্রান্ত বরাহনগরের এক বৃদ্ধা কাকিমার জন্য রাজারহাট সি এন সি আই এ কীভাবে বেডের ব্যবস্থা করেছেন। ইফতারের খেজুর মুখে তুলতে না তুলতেই আবার ফোন এসেছে আবার দমদমের এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক, ফোনের ওপাশ থেকে ভদ্রলোকের ছেলের কান্নায় ভেঙে যাওয়া গলার স্বর বারবার অস্থির এই যুবকদেরকে করেছে। অথচ দমদমের কাছাকাছি কোনো হসপিটালে তখন বেড খালি নেই। অবশেষে সাউথ দমদম এবং দমদম মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যানদের সাথে কো ওর্ডিনেট করে দমদম মিউনিসিপ্যালিটি হসপিটালে পেশেন্টের জন্য রাত্রি দশটার সময় বেডের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে।
অনেকটা একই রকমের কথা ভেসে এলো দক্ষিণ দিনাজপুরের রাইহানের গলায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম কম শেষ করে চাকরির জন্য প্রস্তুতি তার মধ্যে উত্তরের এই জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বারবার ছুটে এসেছে তাঁর কাছে, কখনও বেডের জন্য, কখনও এসেছে রক্তের জন্য আবার ডেড বডি তার পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক উপায়ে সাহায্য করা। ঈদের দিন লকডাউন বিধি মেনে বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়লেও রক্ত দিয়ে মানুষকে বাঁচানোর তাগিদে রাইহান ছুটে গিয়েছে হসপিটালে। রক্ত দান যেনো জীবনদান।।
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ফোন কলগুলো নেওয়ার পরে জেলার সি এম ও এইচ, ডি এম, কোঅর্ডিনেটিং আই এ এস অফিসারদের সাথে কথা বলে বহু মানুষের জন্য বিভিন্ন গভর্নমেন্ট হসপিটালে বেডের ব্যবস্থা করেছে রাইহান।
আবার সংস্কৃত কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের পাঠরত মাহাবুব খান দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের প্রত্যন্ত গ্রামের সন্তান। তিনি জানান, কোনো মানুষ রক্তের অভাবে এমন দিন না দেখতে হয় তার জন্য রক্ত জোগাড়ে সর্বদা প্রস্তুত। প্রয়োজন হলেই রক্ত দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন মাহাবুব। দিনশেষে উপকার পাওয়ার পরে অপর প্রান্তের মানুষগুলোর দোয়া,আশীর্বাদ মানসারুলদেরকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। যখন হসপিটাল থেকে ফিরে কোনো রুগী ফোন করে বারবার বলেছে, আপনি ঐ দিন না থাকলে যে আমার কী হতো। আজ আপনার জন্য সুস্থ হয়ে ফিরে এসে নিজের পরিবারের মাঝে বসে আছি। তখনই অদ্ভুত এক ভালোলাগা তৈরি হয়েছে রাইহান, মাহাবুব, মানসারুলদের মনে এই ভালোলাগা এক অমূল্য সম্পদ যা কেবলমাত্র বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েই অর্জন করা যায়।
মানসারুল বারবার বলেছে, দেখুন আমি ছোটো থেকেই ইসলাম ধর্মের মধ্য দিয়ে বড়ো হয়ে উঠেছি, পরবর্তীতে আল আমিন মিশন থেকে আমার পড়াশোনা আমার স্যারেরা এবং আমার পরিবার বারবার আমাকে শিখিয়েছে মানবসেবা একপ্রকার “ইবাদত” আর “যে একজন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করলো সে যেনো সমগ্র মানবজাতির প্রাণ বাঁচালো”। এই আদর্শকে বুকের মধ্যে আগলে রেখেই বড়ো হয়ে ওঠা এবং এগিয়ে চলা। তাই সৃষ্টিকর্তাকে অনেক ধন্যবাদ যে তিনি আমাদেরকে সুযোগ দিয়েছেন মানুষের পাশে থাকার। এদের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর: মানসারুল৯৭৪৯৯২২৬১৪, রাইহান ৯৬৩৫৪৫৮২২৭, মাহাবুব ৯৬৩৫৫০৮৯৩১ কিবরিয়া ৮০০১৮৭৭৭১২।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct