দেবাশিস পাল, মালদা: রাজ্য জুড়ে এই মুহূর্তে কার্যত ১৫ দিনের লকডাউন চলছে। জরুরী পরিষেবা ছাড়া সমস্ত কিছু বন্ধ। লকডাউন সফল করতে তৎপর পুলিশ প্রশাসন। আইন অনুযায়ী অমান্যকারীদের দেওয়া হচ্ছে শাস্তি। কিন্তু লকডাউন অমান্য করায় এবার এক কিশোরকে বেধড়ক মারাধর করার অভিযোগ উঠল মালদা জেলার ভালুকা ফাঁড়ি ইনচার্জের বিরুদ্ধে। এমনকী সেই কিশোর এবং তার বাড়ির লোকের অভিযোগ কারণ ছাড়াই পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে মেরেছে লকআপে। এই অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে শাসক দল। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভালুকা ফাঁড়ির ইনচার্জ।
ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর থানা এলাকার ভালুকা ফাঁড়ির অন্তর্গত গোবরাঘাট এলাকায়। প্রহৃত ওই কিশোরের নাম শেখ বেলাল (১৫)। তার পিতা শেখ জামাল পেশায় নৌকা মাঝি। বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর থানার রশিদপুর গ্রামে। ওই কিশোরের পরিবার সূত্রের খবর রাতে তার বাবা বাড়িতে খেতে যাওয়াই ঘাটে বাবার নৌকা পাহাড়া দিচ্ছিল ছেলে শেখ বেলাল। সেই সময় ভালুকা ফাঁড়ির এ এস আই তোফাজ্জল হোক এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর ভালুকা ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে লোকাপে ঢুকিয়ে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। বাড়িতে নিয়ে আসার পরে অসুস্থ হয়ে যায় কিশোর। রাতে বাড়িতেই স্যালাইন দেওয়া হয়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় নিয়ে আসা হয় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতলে। রাতে তার পরিবারের তরফ থেকে সমগ্র ঘটনাটি জানানো হয় তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমানকে।
ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায়। ঘটনার তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস।
শেখ বেলাল বলে,”সকালে ঘাট পাহারা দিতে এসেছিলাম। একজন পুলিশ এসে মালিকের কথা জিজ্ঞাসা করে। মালিকের সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দি। তারপরে আমাকে থানায় তুলে নিয়ে যায়। বেধড়ক মারধর করে ভালুকা ফাঁড়ির ইনচার্জ। সারা শরীর ফুলে গেছে। হাত ভেঙে গেছে।”
কিশোরের বাবা শেখ জামাল বলেন,”লকডাউনের জন্য নৌকা চলাচল বন্ধ। আমার ছেলে নৌকা পাহারা দিচ্ছিল। সেই সময় পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। আর বেধড়ক মারধর করে। আমরা এর সুবিচার চায়। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের শাস্তি চায়।”
চাঁচল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু মন্ডল বলেন, ঘটনার কথা শুনেছি বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান বলেন ‘জামাল সাহেবের ছেলে ঘাট পাহারা দিচ্ছিল। সেই সময় ভালুকা ফাঁড়ির এ এস আই তোফাজ্জল বাবু এসে তাকে তুলে নিয়ে যায়। লকআপে তাকে বেধড়ক মারধর করে ফাঁড়ি ইনচার্জ সৌমজিৎ মল্লিক। ছেলেটিকে দেখলাম। হাতে ফ্র্যাকচার হয়ে গেছে। এই ঘটনা খুব দুঃখজনক। আমাদের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস এর সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করব। আলোচনার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভালুকা ফাঁড়ি ইনচার্জ। ফোন মারফত যোগাযোগ করা হলে সৌমজিৎ মল্লিক বলেন, লকডাউন অমান্য করলে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে এইভাবে কাউকে মারধর করা হয়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct