আপনজন ডেস্ক: দেশের জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস দলের এমন দুরবস্থা হয়তো আগে কখনোই দেখা যায়নি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে দলটির বিপর্যয় শুরু হয়! এই সাত বছরে দলটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আসলে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো আগ্রহ কংগ্রেস দলে দেখা যায়নি। বিজেপির মুখ নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনও মুখ কংগ্রেসে নেই। রাহুল ফ্লপ। আর অন্য বিরোধী দরগুলিরও তেমন কোনও নেতা নেই যিনি মোদির বিপক্ষে প্রধঅন মুখ হতে পারেন। তাই কংগ্রেস সহ বিরোধীদের সবেধন নীলমণি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস বাংলায় শূন্য হয়ে যাওয়ায় রাজ্যে আর চাপ নেই তৃণমূলের সঙ্গে। তাই সারা দেশে মমতাকেই বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ করে তুলতে এবার সোনিয়া গান্ধি সক্রিয় উদ্যোগ নিতে চরেছেন বলে সুত্রের খবর।
দেশের রাজনীতিতে ইতিমধ্যে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়ে গেছে। কিন্তু কংগ্রেস পার্টি এখনো সেই আগের মতোই রয়েছে। সর্বশেষ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ভালো কিছু করতে পারেনি দলটি। গত ২ মে ফল ঘোষণার পর কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এসব রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের বিপর্যয়ের ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন।
তবে দলটির পক্ষ থেকে এ ধরনের ব্যাখ্যা চাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর তারা এ ধরনের ব্যাখ্যা চেয়েছিল। কিন্তু এরপর দলটির পক্ষ থেকে ভুল শোধরাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরও একইভাবে ব্যাখ্যা চাওয়া হয় দলীয় নেতাদের কাছ থেকে।
নির্বাচনের এ ধরনের ফল বিপর্যয়ে দলটির অবশ্যই উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা। গত সাত বছরে ৩৯ রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন হয়েছে। সেখানে মাত্র পাঁচটি বিধানসভায় জয়ী হয়েছে দেশের সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা দলটি। অসমে তারা এআইইউডিএফের সঙ্গে জোট করেও ক্ষমতায় আসতে পারেনি। পুদুচেরিতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে কেরলে তারা ২০টির মধ্যে ১৫টি আসনে জয় পেলেও এবার বিধানসভায় তারা ভালো করতে পারেনি। রাহুল গান্ধীর ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও তারা কেরলে ১৪০ আসনের মধ্যে ২১টিতে জিতেছে।
পশ্চিমবঙ্গে তারা একটি আসনও পায়নি। শুধু তামিলনাড়ুতে তারা সান্ত্বনার জয় পেয়েছে। সেখানে তাদের জোট সরকার গড়েছে। নির্বাচনে দলের এসব বাজে ফল বলছে তারা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি। গত লোকসভা নির্বাচনের পর সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন রাহুল গান্ধী। এরপর থেকে অন্তর্বর্তী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন সোনিয়া গান্ধী। দলের দায়িত্ব নিতে এখনো রাহুল গান্ধীকে রাজি করানো যায়নি আবার তার বিকল্পও খুঁজে পায়নি। এই সংকটের সহসা কোনো সমাধান আছে বলেও মনে হচ্ছে না।
কংগ্রেসের পায়ের তলা থেকে দ্রুতই মাটি সরে যাচ্ছে। দেশজুড়ে দলটির রাজনৈতিক প্রভাব দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। বর্তমানে তিন রাজ্য পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়েই তাদের সরকার রয়েছে। তামিল নাড়ুতে তাদের জোট ক্ষমতায় এলেও সেখানে প্রভাব খাটানোর মতো অবস্থায় তারা নেই।
কংগ্রেসের এই দুরবস্থায় আঞ্চলিক দলগুলোর যেমন উত্থান হয়েছে তেমনি মমতা ব্যানার্জির মতো নেতারা অনেক বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। সবচেয়ে বেশি সময় ভারতের ক্ষমতায় থাকার পরও দলটি যেন নির্বাচনে জিততে ভুলে গেছে। কংগ্রেস আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ করবে এমন দাবিও আর করতে পারে না। বরং পশ্চিমবঙ্গের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিই এখন প্রভাবশালী বিরোধী নেতা হিসেবে নিজেকে দাবি করতে পারেন।
কারণ এবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মমতার তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করেছে। নরেন্দ্র মোদি নিজে মমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গতবারের চেয়ে বেশি আসন পেয়ে আবারও ক্ষমতায় এসেছে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস। নরেন্দ্র মোদির জয়ের রথ থেমেছে পশ্চিমবঙ্গে। তাই দুর্বল কংগ্রেসের কারণে দেশে সবচেয়ে প্রভাবশালী বিরোধী মুখ এখন মমতা ব্যানার্জি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct