উদ্যোগপতি
ফৈয়াজ আহমেদ: গতবছর থেকে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে নানান ছোট বড় ব্যবসা বন্ধ হয়েছে বা বন্ধ হওয়ার মুখে, কিন্তু মানুষের খাদ্যের জোগান অব্যহত রাখতে এমন কিছু ব্যবসা আছে যা কোনদিনও চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেওয়া যায় না। তার মধ্যে একটি হলো মাছ।
এ দেশের একটি গ্রামীণ প্রবাদ আছে যে আমরা ‘মাছে ভাতে বাঙ্গালী’। মাছ ছাড়া বাঙ্গালীদের কোনভাবেই চলবেনা। মাছের এই বিশাল চাহিদার যোগানের উৎস হিসাবে বর্তমানে ‘বায়োফ্লক’ প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে মাছ চাষে লেগেছে আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়া। পুকুর না কেটেই এখন অল্প বিনিয়োগে মাছ চাষ করা যাচ্ছে।
স্বল্প খরচে অধিক মাছ চাষের নতুন এক প্রযুক্তির নাম ‘বায়োফ্লক’। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে আপনিও হতে পারেন স্বাবলম্বী। তবে বায়োফ্লকে মাছ চাষের জন্য জল ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেকোনো মাছ বা চিংড়ি চাষ বা বায়োফ্লক প্রজেক্ট করার আগে জলের উৎস কী হবে এবং তার গুণাগুণ বা ব্যবহারের উপযোগিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
জলের উৎস: গভীর নলকূপ, সমুদ্র, নদী, বড় জলাশয়, লেক, বৃষ্টি ইত্যাদির জলের গুণ ও মান ভালো থাকলে ব্যবহার করা যায়।
জল তৈরি: প্রথমে ট্যাংক ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এরপর নির্বাচিত জলের গুণাগুণ পরীক্ষা করে জল দিতে হবে।
মাছ চাষে জলের গুণাবলি: বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য জলের কিছু গুণাবলি দরকার- ১. তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ২. জলের রং হবে সবুজ, হালকা সবুজ, বাদামি ৩. দ্রবীভূত অক্সিজেন ৭-৮ মিলিগ্রাম বা লিটার ৪. পিএইচ ৭.৫-৮.৫ ৫. ক্ষারত্ব ৫০-১২০ মিলিগ্রাম বা লিটার ৬. খরতা ৬০-১৫০ মিলিগ্রাম বা লিটার ৭. ক্যালসিয়াম ৪-১৬০ মিলিগ্রাম বা লিটার ৮. অ্যামোনিয়া ০.০১ মিলিগ্রাম বা লিটার ৯. নাইট্রাইট ০.১-০.২ মিলিগ্রাম বা লিটার ১০. নাইট্রেট ০-৩ মিলিগ্রাম বা লিটার ১১. ফসফরাস ০.১-৩ মিলিগ্রাম বা লিটার ১২. এইচটুএস ০.০১ মিলিগ্রাম বা লিটার ১৩. আয়রন ০.১-০.২ মিলিগ্রাম বা লিটার ১৪. জলের স্বচ্ছতা ২৫-৩৫ সেন্টিমিটার ১৫. জলের গভীরতা ৩-৪ ফুট ১৬. ফলকের ঘনত্ব ৩০০ গ্রাম বা টন ১৭. টিডিএস ১৪,০০০-১৮,০০০ মিলিগ্রাম বা লিটার ১৮. লবণাক্ততা ৩-৫ পিপিটি।
জলেতে ফ্লক তৈরি: প্রথম ডোজে ৫ পিপিএম প্রোবায়োটিক, ৫০ পিপিএম চিটাগুড়, ৫ পিপিএম ইস্ট, জল প্রতি টনের জন্য ১ লিটার, একটি প্লাস্টিকের বালতিতে অক্সিজেন সরবরাহ করে ৮-১০ ঘণ্টা কালচার করে প্রয়োগ করতে হবে। ২য় দিন থেকে ১ পিপিএম প্রোবায়োটিক, ৫ পিপিএম চিটাগুড়, ১ পিপিএম ইস্ট, প্রতি টনের জন্য ১ লিটার জল দিয়ে উপরের সময় ও নিয়মে কালচার করে প্রতিদিন প্রয়োগ করতে হবে।
কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ: জলেতে যথাযথ পরিমাণ ফ্লক তৈরি হলে-১. জলের রং সবুজ বা বাদামি দেখায় ২. জলেতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দেখা যায় ৩. পরীক্ষা করলে জল অ্যামোনিয়া মুক্ত দেখায় ৪. প্রতি লিটার জলেতে ০.৩ গ্রাম ফ্লকের ঘনত্ব পাওয়া যাবে ৫. ক্ষুদিপানা দেওয়ার পর তাদের বংশ বিস্তার পরিলক্ষিত হয়।
ট্যাংক নির্মাণ: প্রথমে গ্রেড রড দিয়ে ট্যাংকের বৃত্তাকার খাঁচাটি তৈরি করতে হবে। যে স্থানে ট্যাংকটি স্থাপন করা হবে; সেখানে খাঁচার পরিধির সমান করে সিসি ঢালাই দিতে হবে। বৃত্তের ঠিক কেন্দ্রে জলের একটি আউটলেট পাইপ স্থাপন করতে হবে। এরপর খাঁচাটিকে ঢালাই মেঝের উপর স্থাপন করে মাটিতে গেঁথে দিতে হবে। মেঝের মাটি শক্ত ও সমান হলে ঢালাইয়ের পরিবর্তে পরিধির সমান করে পুরু পলিথিন বিছিয়েও মেঝে প্রস্তুত করা যায়। এরপর উন্নতমানের তারপুলিন দিয়ে সম্পূর্ণ খাঁচাটি ঢেকে দিতে হবে। তার ওপর পুরু পলিথিন দিয়ে আচ্ছাদিত করে তাতে জল মজুদ করতে হবে।
এরেটর পাম্প: বায়োফ্লক ট্যাংকে সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সাপ্লাই দেওয়ার জন্য একটি এরেটর পাম্প স্থাপন করতে হবে। ৬ ফুট ব্যাসার্ধের এবং ৪ ফুট উচ্চতার একটি ট্যাংকে প্রায় ৩০ হাজার শিং মাছ চাষ করা যাবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct