ফৈয়াজ আহমেদ: নামটা একেবারেই না-শোনা মনে হচ্ছে, তাই না? তা তো হবেই। বছর খানেক আগেও এখানে ট্যুরিস্টদের পা পড়ত না। কারণ জঙ্গলমহলের ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এই গ্রামে আসার সহজ পথ ছিল না। আসতে হত পাহাড় টপকে। তার ওপর এক সময়ে এখানে ছিল মাওবাদীদের ডেরা। এই এলাকা এতটাই দুর্গম ছিল যে ভোটের সময় ভোটকর্মীদের এখানে পৌঁছে দেওয়া হত হেলিকপ্টারে চাপিয়ে। এখন সে সব অতীত। পাহাড় কেটে রাস্তা হয়েছে বেলপাহাড়ি থেকে ১৫ কিমি দূরে সবুজে ঘেরা ঢাঙিকুসুমে পৌছোনোর জন্য। পাহাড়ের কোলে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে বসে রয়েছে ঢাঙিকুসুম। আর গ্রাম থেকে নিস্তব্ধ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে খানিকটা হেঁটে গেলেই কানে আসবে ঝরনার জলধারার সুমধুর ধ্বনি, একটু গেলেই চোখে পড়বে ডুংরি ফলস্। শেষ-বিকেলে পড়ন্ত সূর্যের আলোয় তৈরি হয় এক মায়াবী পরিবেশ।
ছোট্ট গ্রাম ঢাঙিকুসুম – ১৩০ ঘর আদিবাসীর বাস। তাঁরা পাথর-শিল্পী। পাথর দিয়ে তৈরি করেন থালা-বাটি-গেলাস সহ নানা সাংসারিক ব্যবহার্য জিনিস, তৈরি করেন মূর্তিও। পর্যটকরা আসছেন, এই গ্রামের শিল্পীদেরও পরিচিতি বাড়ছে একটু একটু করে।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে ট্রেনে ঝাড়গ্রাম ঘণ্টা আড়াইয়ের পথ। সেখান থেকে ঝাড়খণ্ড সীমানায় ঢাঙিকুসুম ৫২ কিমি, পথ বেলপাহাড়ি হয়ে। ঝাড়গ্রাম থেকে গাড়িতে আসা যায় ঢাঙিকুসুম। না হলে বাসে ৩৭ কিমি দূরের বেলপাহাড়ি এসে সেখান থেকেও গাড়িতে আসা যায় ঢাঙিকুসুম।
কোথায় থাকবেন
থাকতে পারেন ঝাড়গ্রাম বা বেলপাহাড়িতে। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের পর্যটক আবাস রয়েছে। অনলাইন বুকিং https://www.wbtdcl.com/। রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের ঝাড়গ্রাম প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র। অনলাইন বুকিং https://wbfdc.net/। এ ছাড়াও অনেক বেসরকারি হোটেল-রিসর্ট রয়েছে ঝাড়গ্রামে। নেটে সার্চ করলে সে সবের সন্ধান পাবেন।
থাকতে পারেন বেলপাহাড়িতেও। রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির অতিথিশালা । এ ছাড়াও থাকার জন্য বেসররকারি কটেজ, গেস্ট হাউস আছে। বিশদ বিবরণের জন্য দেখুন https://belpahari.co.in।
মনে রাখবেন
আলাদা করে না গিয়ে ঝাড়গ্রাম ভ্রমণের সময় ঘুরে নেওয়া যায় ঢাঙিকুসুম। ঝাড়গ্রাম ভ্রমণে দেখে নিন ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, সাবিত্রী মন্দির, জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্ক (আগেকার চিড়িয়াখানা), ইকো ট্যুরিজম সেন্টার অ্যান্ড ট্রাইবাল মিউজিয়াম (রাজবাড়ি থেকে ২ কিমি, রাজ্য সড়কের ধারে), অমলাচটি মেডিসিন্যাল প্লান্ট গার্ডেন তথা ভেষজ উদ্যান, কৃষ গার্ডেন (ঝাড়গ্রাম থেকে ১০ কিমি), কেন্দুয়া গ্রাম (পরিযায়ী পাখির জন্য বিখ্যাত, চিলকিগড়ের পথে ঝাড়গ্রাম থেকে ৯ কিমি), চিলকিগড় প্রাসাদ, কনকদুর্গা মন্দির ও ডুলুং নদী।
বেলপাহাড়ির চার দিকেই ছড়িয়ে আছে নানা দ্রষ্টব্য। এখানে থেকে দেখে নিতে পারেন ঘাগরা ওয়াটারফলস্ (৫ কিমি), তারাফেনি ড্যাম (৭ কিমি), গারাসিনি হিল (৯ কিমি), কানাইসর হিল (১০ কিমি), খান্ডারিনি লেক (১১ কিমি), কেটকি লেক (১৮ কিমি), কাঁকরাঝোর জঙ্গল (২৩ কিমি), লালজল গুহা (১৯ কিমি) ইত্যাদি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct