আপনজন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে একবার বিরোধী দলগুলির একজোট হতে শুরু করেছে। করোনা সংক্রমণ রোকার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলে এবার বিরোধী দলগুলি একসুরে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সরকারের কোন পথে চলা উচিত, তা নিয়ে বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই সরব হয়েছেন বিরোধী দলের নেতারা। এর আগে করোনা মোকাবিলায় বিরোধী দলগুলির কথা কানে না নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। এবার এই আবহে এবার একাধিক দাবি জানিয়ে বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন দেশের ১২টি প্রধান বিরোধী রাজনেতিক দলের প্রধান। তারা ৯টি পরামর্শ দিলেন এদিন প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে। ওই চিঠিতে সই করেছেন, কংগ্রেসের সোনিয়া গান্ধী, জেডিএসের এইচডি দেবে গৌড়, এনসিপির শারদ পওয়ার, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকর, তৃণমূল কংগ্রেসের বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিএমকের এমকে স্টালিন, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার হেমন্ত সোরেন, জম্মু কাশ্মীর পিপলস পার্টির ফারুক আবদুল্লাহ, সমাজবাদী দলের অখিলেশ যাদব, আরজেডির তেজশ্বী যাদব, সিপিআইয়ের ডি রাজা এবং সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি।
ওই চিঠিতে বিরোধীরা দাবি তোলেন, দেশ বিদেশ থেকে করোনা ভ্যাকসিন কিনে যেন দেশের সকল নাগরিককে বিনমূল্যে দেওয়া হয়। এছাড়া দেশে করোনা টিকার উৎপাদন বাড়াতে লাইসেনসিং বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়। এছাড়া সেন্ট্রাল ভিস্তার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে সেই টাকা দিয়ে অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট বসানোর কাজ করার দাবি তোলা হয়।
চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে দোষারোপ করে লেখা হয়, ‘কোনও চিঠির জবাব দেওয়া আপনার দফতরের অভ্যেসে নেই। তবে ভারত এবং ভারতবাসীর স্বার্থে আমরা এই চিঠির চটজলদি জবাব চাই।’
এদিন যে চিঠি বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীকে লেখেন, তার বয়ান হল: ‘প্রিয় প্রধানমন্ত্রী!” করোনার কারণে, আমাদের দেশ অপ্রত্যাশিত মানব ট্র্যাজেডির সাথে লড়াই করছে। অতীতেও আমরা বারবার ব্যক্তিগতভাবে এবং যৌথভাবে বারবার আপনার নজরে এনেছি যে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
দুঃখের বিষয়, আপনার সরকার হয় আমাদের সমস্ত পরামর্শ অগ্রাহ্য করেছে বা সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেছে। এটি পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলেছে যা এই ভয়াবহ মানব ট্র্যাজেডির দিকে নিয়ে যায়। দেশকে এই ভয়াবহ জায়গায় আনার জন্য আমরা দৃঢ়বিশ্বাস করি যে সরকার নীচে প্রদত্ত পদক্ষেপগুলি যুদ্ধের ভিত্তিতে নিয়েছে। ভ্যাকসিনগুলি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কেনা উচিত। তারা দেশ বা বিশ্বের যে কোনও উৎসের সাথে মিলিত হোক। অবিলম্বে সারাদেশে বিনামূল্যে টিকাদান প্রচার শুরু করা উচিত। দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্সিং পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বাজেটে প্রদত্ত ৩৫ হাজার কোটি টাকার ভ্যাকসিন ব্যয় করতে হবে। সেন্ট্রাল ভিস্তা নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। এতে ব্যয় করা পরিমাণটি অক্সিজেন এবং ভ্যাকসিন কেনার জন্য ব্যবহার করা উচিত।
আরও বেশি ভ্যাকসিন, অক্সিজেন এবং চিকিত্সা সরঞ্জাম কেনার জন্য পিএমকারেসের অ্যাকাউন্টহীন বেসরকারী ট্রাস্ট তহবিলে জমা সমস্ত অর্থ প্রকাশ করতে হবে।
প্রতি মাসে বেকারদের ৬ হাজার টাকা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের গুদামগুলিতে প্রায় ১ কোটি টনেরও বেশি শস্য পচে যাচ্ছে। এই শস্যটি অভাবগ্রস্তকে বিনামূল্যে বিতরণ করা উচিত।
আমাদের লক্ষ লক্ষ খাদ্য সরবরাহকারী মহামারির শিকার হচ্ছে। তাদের সুরক্ষার জন্য, কৃষি আইন বাতিল করা উচিত যাতে তারা দেশের মানুষকে খাওয়ানোর জন্য শস্য জন্মাতে পারে। আপনার অফিস বা আপনার সরকারের পক্ষ থেকে এ জাতীয় কোনও অনুশীলন হয়নি, তবুও আমরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে আমাদের পরামর্শ সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে জবাব আশা করি।’
এছাড়া মোদীর কাছে বিরোধীদের আবেদন, ‘প্রাইভেট সব ফান্ডে থাকা হিসেব বহির্ভূত টাকা এবং পিএম কেয়ারস-এর সব টাকা দিয়ে আরও ভ্যাকসিন, অক্সিজেন এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হোক। সকল বেকারদের মাসিক ৬০০০ টাকা ভাতা দেওয়া হোক। এছাড়া যাদের প্রয়োজন, তাদের বিনামূল্যে খাদ্য শস্য সরবরাহ করা হোক। কৃষি আইন বাতিল করা হোক।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct