আপনজন ডেস্ক: গত বছর যে তবলিগি জামাতকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, সেই তবলিগি জামাতের কর্মীরাই এখন অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি শহরে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের সৎকার করার মুশকিল আসান। হিন্দু মুসলিম সবার ক্ষেত্রে করোনায় মৃতদের সৎকারে তবলিগ জামাতের কর্মীরাই এখন প্রধান অবলম্বন। তার উজ্জ্বল উদাহরণ তিরুপতি শহরের এক হিন্দু ব্যক্তির সৎকার।
জানা গেছে, তিরুপতি শহরের এসভিআইএমএম হাসপাতালে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে মৃত্যু হয় ২৬ বছর বয়সি কে দামোদর রেড্ডির। তার আত্মীয়দের কেউ তার দেহ নিতে এগিয়ে আসেননি। কিন্তু তবলিগি জামাতের কর্মীরা এগিয়ে এসে তাকে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে হিন্দু মতে সৎকার করেছেন। একইভাবে এক ক্রিস্টান রোগী ভেট্টি দাসু মারা যান কোভিড আক্রান্ত হয়ে। তাকে মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে খ্রিস্টান মতে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন তবরিগি জামাতের সদস্যরাই।
এই সমাজসেবামূলক কাজ করারর জন্য তবলিগি জামাতের সদস্যরা গঠন করেছেন তিরুপতি ইউনাইটেড মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন। এদের জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির সদস্যরা তবলিগি জামাতেরই সদস্য।
এই জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটিতে থাকা ৬০ জন তবলিগি জামাতের সদস্য প্রায় ৫৬০জন কোভিড রোগীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন। এই কমিটির প্রেসিডেন্ট তথা তবলিগি জামাতের সদস্য সেখ ইমাম জানান, হিন্দু বা খ্রিস্টান যারাই মারা যাচ্ছেন কোভিডে তাদের ধর্মীয় আচার মেনে শেষকৃত্য করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পেশায় অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের আইনজীবী ইমাম বলেন, এটা একটা সুযোগ তবলিগি জামাত সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা দূর করার। তিনি বিশ্বাস করেন, সেই সুযোগটা আল্লাহ করে দিয়েছেন কোভিড রোগীদের সৎকার করারর মতো সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কাজে তবলিগি জামাতের ইজতেমা নিয়ে কি মিথ্যা প্রচার না করা হয়েছে। অথচ, সেই তবলিগি জামাতের সদস্যরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোভিডে মৃতদের লাশ সৎকার করছেন। এখন মানুষ ভাল বলবেন তবলিগিদের সম্পর্কে।
অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি শহরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৯ জনের দেহ সৎকারের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তবলিগি কর্মী গাউস বলেন, ২০২০ সালে এ দেশে করোনা ছড়ানোর জন্য তাবলিগ জামাতকে দায়ী করেছিলেন অনেকে। আর এখন সবাই আমাদের প্রশংসা করছে। তিনি জানান তবরিগি সদস্যদের উদ্যোগে ২০১৪ সালে সমাজসেবামূলক কাজ করার জন্য গঠন করা হয়েছিল তিরুপতি ইউনাইটেড মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন।
তিরুপাটি ইউনাইটেড মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের অধীনস্ত জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির লক্ষ্য হল করোনায় মৃতদের সৎকারসহ মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করা।
গাউস প্রতিদিন ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে নিয়ে কাজ করছেন। অনেকেই মোবাইলে তাদের স্বজনদের সম্মানজনক সৎকারের জন্য গাউসের কাছে অনুরোধ জানান।
গাউস বলেন, গত এপ্রিলে প্রতিদিন অন্তত ১৫ জনের সৎকার করেছি আমরা। সেটাও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। করোনার প্রথম ধাক্কায় বৃদ্ধদের মৃত্যু হচ্ছিল। কিন্তু এবার যারা মারা যাচ্ছে যারা, তাদের বেশির ভাগই তরুণ। সৎকারের আগে শোকাহত স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ৬০ জন সদস্যকে তিন দলে ভাগ করেছি। প্রতি টিম প্রতিদিন অন্তত চার-পাঁচজনের দেহ সৎকার করছে। আমরা মৃতের ধর্ম রীতি অনুসারে সৎকার করছি। মৃত ব্যক্তি হিন্দু হলে আমরা এক টুকরো কাপড় ও ফুল রাখছি। আর খ্রিস্টানদের মরদেহ কফিনে রাখি এবং গির্জায় প্রার্থনার আয়োজন করি। মুসলিম মৃতদের ক্ষেত্রে আমরা জানাজা পড়ছি।
নিজেরাই পিপিইর ব্যবস্থা করেছেন। তাবলিগ জামাত থেকেও কিছু পিপিই পেয়েছেন। পুলিশ, পৌরসভা ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর এ কাজে তাদের সহযোগিতা করছে।
এখন পর্যন্ত ৫৩৬ জনের সৎকার করেছে তাদের সংগঠন। তাদের মধ্যে করোনার প্রথম ধাক্কায় ১৩৪ জন এবং অবশিষ্ট চলমান দ্বিতীয় তরঙ্গের সময়।
অন্যদিকে, এই কমিটি জানিয়েছে সাধারণের ২০ লাখ টাকা দান পেয়েছেন। নতুন অ্যাম্বুলেন্স কেনা হয়েছে। দুটো অ্যাম্বুলেন্স বিনামূল্যে সার্ভিস দিচ্ছে। কমিটির ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিরুপতির বিধায়ক করুণাকর রেড্ডি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct