রাজু আনসারী, ফরাক্কা: করোনা আবহের কারণে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের সমস্ত স্কুল বন্ধ। ফলে স্কুল যাওয়ার প্রবণতা অনেকটা হারিয়েছে খুঁদে পড়ুয়ারা। বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে অনেকেই হাঁফিয়ে উঠেছে। ফলে বাধ্য হয়ে খুদে পড়ুয়ারা বাড়িতে বসে না থেকে কেউ রেস্টুরেন্টে। কেউবা হোটেলে কাজে লেগে পড়ছে। আবার কেউ কেউ ইট ভাঁটায় শিশু শ্রমিক হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছে। গ্রাম বাংলার দরিদ্র পরিবারের খুদে পড়ুয়াদের এমন চিত্র ধরা পড়ছে আঁকছাড়। শুক্রবার সকালে দেখা মিলল মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কার ২ নম্বর নিশিন্দ্রা কলোনিতে এমন এক খুদে পড়ুয়াকে। স্কুল বন্ধ। বাবা অসুস্থ। বাধ্য হয়ে সংসারের তাগিদে সবুজ সাথী সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে চপ্পল ফেরি করে বেড়াতে। শঙ্করপুর শিবপাড়ার কিশোর সিরাজ শেখ। বাবা সারিফুল শেখ। মা নাসরিন বিবি।
শেখ দম্পত্তির চার সন্তান ও এক কন্যা। সিরাজ বাড়ির দ্বিতীয় সন্তান। আমতলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করে ওদের বেঁচে থাকা। সারিফুল শেখ আদা ও রসুন বিক্রেতা ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ থাকায় আদা ও রসুনের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে। সংসার সামলাতে হাল ধরতে হয় বাড়ির মেজ ছেলে বছর এগারোর সিরাজ শেখকে। ধুলিয়ান থেকে হোলসেলে চপ্পল এনে সকাল ছ’টা বাজতেই দাদার সবুজ সাথী সাইকেল নিয়ে প্রচণ্ড গরমে সূর্যের আলো থেকে বাঁচতে মাথায় একটা টুপি পড়ে বেড়িয়ে পড়েন ফরাক্কা ব্লকের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। সারাদিন গ্রামে ঘুরে ঘুরে চপ্পল বিক্রি করে সন্ধ্যা বেলায় বাড়ি ফিরে আসে।একটি চপ্পলের দাম পঞ্চাশ টাকা।
চার ফুট উচ্চতার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সিরাজ। সাইকেলে চেপে ঘুরে ঘুরে আজ সকলের কাছে পরিচিত হয়েছে সিরাজ ফেরিওয়ালা। সিরাজ জানায়, বাবা অসুস্থ হওয়ায় পর আমাকে চপ্পল বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একটা জুতো বিক্রি করলে পনেরো টাকা লাভ হয়। সারাদিন ঘুরে কোনোদিন তিনশো টাকা। আবার কোনোদিন পাঁচশো টাকা আয় হয়। সকাল ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত ফেরি করার পর বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া করে টিউশন পড়তে যায়। এটাই সিরাজের দিনলিপি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct