সুলেখা নাজনিন, কলকাতা: নির্বাচনী প্রচারের সময় তৃণমুল নেত্রী বারে বারে মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা যেন ভোট ভাগ না করেন। মমতার নিশানায় ছিল মূলত ফুরফুররা পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর দল আইএসএফ ও আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিম। বিজেপিকে ঠেকাতে সংখ্যালঘুদের সংঘবদ্ধ হওয়ার ডাক দেওয়া নির্বাচন কমিমনে বিজেপি অবিযোগ জানানোয় নোটিশ পাঠানো হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অবশেষে মমতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রায় সিংঘভাগ প্রার্থী জয়ের মুখ দেখেন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, মুসলিমদের প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এ ব্যাপারে মুর্শিদাবাদের কথাই ধরা যেতে পারে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ ছিল কংগ্রেসের গড়।
আর তাদের ভোট ব্যাঙ্ক ছিল মুসলিরাই। কিন্তু এবার সেখানে পাশা উলটে পুরো ভোটটাই চলে এসেছ তৃণমূলে। ফলে, মুর্শিদাবাদের দুটি আসন বাদে সবকটিতে জিতেছে তৃণমূল প্রার্থী।
শুধু মুর্শিদাবাদ বললে ভুল হবে, একমাত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় ছাড়া প্রায় সর্বত্র মুসলিমরা উজাড় হয়ে বোট দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসকে তার প্রমাণ মিলছে।
ভোটের ফল প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে ৭৪টি আসনে সংখ্যালঘু ভোটারদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বা তার বেশি। সেই আসনগুলির মধ্যে ৬৯টিতে জিতেছে। এমনক যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা ৪০ শতাংশের কম, সেখানেও ভাল ফল করেছে তৃণমূল। আর তা মুসলিম ভোটের উপর ভর করে। প্রায় ৫৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট ২৫ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে। এই ৫৭টি আসনের মধ্যে ৪৬টি জিতেছে তৃণমূল। ১১টি আসন দখল করেছে বিজেপি। বিজেপি আশা করে বসেছিল সংযুক্ত মোর্চার ভোট কাটাকাটিতে ফায়দা লুটবে তারা। সে আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন মুসলিমরা। তাই তৃণমূলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে কোনও অসুবিধা হয়নি।
যেভাবে এনআরসি নিয়ে বিজেপি রাজ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে তাতে মুসলিমদের মনে সাহস জুগিয়েছেন মমতা। তাই তারা তৃণমূল কংগ্রেসকে নয়, মমতাকে দেখেই তার দলকে উজাড় হয়ে সমর্তন জানিয়েছেন। আর সেখানে কোনও ধর্মীয় বাদা রাখেনি। ফুরফুরার পীরজাদাদের আহ্বানকে দূরে সরিয়ে রেখে মুসলিমরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে যে মমতার সমর্থনে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন তা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। আপাতত যা তথ্য মিলছে, তাতে সংখ্যালঘূদের প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোটই তৃণমূলের ঝুলিতে পড়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct