এস এম শামসুদ্দিন: ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত। রাজ্যে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতাদখল করেছে।
রাজ্যের সাধারণ মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জনমুখী উন্নয়নের প্রতি আস্থা রেখে তাঁদের সমর্থন দিয়েছে। ১৯৫২সালের পর এই প্রথম উগ্র সাম্প্রদায়িক দল এবারের নির্বাচনে বাংলার উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকে ধর্মীয় মেরুকরণের ভাগ করতে নানান প্ররোচনা ও উত্তেজক সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কথা বলে যেমন বৃহত্তর সম্প্রদায়কে একদিকে আনার নানান চেষ্টা করেছে, তেমনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তাঁদের বঞ্চনা ও অবহেলার কথা ও অধিকার অর্জনের কথা বলে একত্র করতে সচেষ্ট হয়েছিল।
অন্যদিকে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে জাতি ধর্ম বর্ণ ভাষার ভেদাভেদ ভুলে সমস্ত শ্রেণীর মানুষের বাংলার তামাম জনসাধারণের উন্নয়নের ভাবনা। অতএব এবারেবাংলার রাজনীতির এবারের প্রেক্ষাপট ছিল বাংলার উন্নয়ন সম্প্রীতি সংহতি সহবস্থান আর অন্যদিকে ধর্মীয় মেরুকরণ, বিভাজন।
ফলে রাজ্যবাসীর কাছে শুধু নয় সমগ্র ভারতবাসীর লক্ষ্য ছিল পশ্চিম বঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল কি হয়। বাংলার মানুষ কোন পথকেসমর্থন করে। সেটাই ছিল দেখার।
ভোটার ফলাফল বলে দিল এ বাংলা হিন্দু বা মুসলমান নয় সমস্ত সম্প্রদায়ের অর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও বিকাশের পথেই তাঁদের সমর্থন। বিভাজন নয় সহবস্থান,বিভেদ নয় সম্প্রীতির পথ তথা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পথেই অন্যতম পথ। বাংলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেমন প্রমাণ দিয়েছে যে প্রশাসনে তাঁরা ধর্মীয় প্রতিনিধি নয়, বিভাজনও নয় সমস্ত শ্রেণীর উন্নয়নের নিরিখে পাশে থাকবেন। তেমনি বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মানুষও তাঁদের স্বাধীন মতামত প্রয়োগ করে দেখিয়ে দিয়েছেন পারস্পরিক সহবস্থান ও সম্প্রীতি আর উন্নয়নের মমতাময়ী পথের তাঁরা সমর্থক। তাঁরা উগ্র হিন্দুত্ববাদকে যেমন ঘৃণা করেন তেমনি অবজ্ঞাও করেন।
দ্বিতীয়ত বাংলারমুসলমানরা যে অনেকবেশি রাজনৈতিক সচেতন এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী দলকে প্রতিহত করতে তাঁদের একতাবদ্ধ হয়ে সংবিধানিক ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে, একথা তাঁরা উপলব্ধি করেছে। অযথা প্ররোচকদের প্ররোচনায় পা বাড়াননি তাঁরা এবং এটাও প্রমাণিত তাঁদের ঐক্যবদ্ধ সমর্থনের উপর বাংলার শাসকজয় ও পরাজয় ঘটে।
নির্বাচনে আরেকটি বিষয় অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রাজ্যবাসীর জনাদেশে বাম কংগ্রেস ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাওয়া।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দ্বিচারিতাকে মুসলমান কেন তফসিলি জাতি উপজাতি ,মতুয়া,বা আদিবাসী বা অবহেলিত মানুষ মানতে পারেনি। ফলে তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
পশ্চিম বাংলায় এবারের নির্বাচনে ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ উজাড় করে সমর্থন দিয়েছে। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রতি এবারের নির্বাচন পথ দেখাবে ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যকে। যা আগামী দিনে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে উগ্রহিন্দুত্ববাই এই দলের বিনাশে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে দায়িত্ব নিতে হবে।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
লেখক বিশিষ্ট শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct