সৈয়দ আবদাল আহমদ: গত বছরের মতো এবারো করোনা মহামারির আতঙ্কের মধ্যেই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমযানের রোযা। মুসলিম বিশ্বজুড়ে প্রায় সব মুসলমান নর-নারী এই মাসে সিয়াম সাধনায় লিপ্ত হয়ে থাকেন। অফুরন্ত এক আনন্দধারায় তখন সিক্ত হয় সবার জীবন।
বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর ছোবল থামছেই না। বরং নতুন নতুন রূপ ধারণ করে আবির্ভূত হচ্ছে করোনাভাইরাস এবং একই সাথে সংক্রমণও ঘটিয়ে চলেছে অব্যাহত গতিতে। ফলে দিন দিন পৃথিবীর মানুষ আরো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। এক বছরের বেশি বা তেরো মাস ধরে পৃথিবী এক অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দুঃসময় আমাদের এই পৃথিবীর পিছু ছাড়ছে না। অতিক্ষুদ্র অদৃশ্য করোনাভাইরাস পৃথিবীর স্বাভাবিক কার্যক্রম থামিয়ে দিয়েছে। গোটা পৃথিবী এখন ভালো নেই।
এই দুঃসময়, এই রোগ-শোক, ভয় জ্বরা দূরে সরিয়ে রেখেই পবিত্র মাহে রমযানে সিয়াম সাধনায় রত হবে মুসলিম বিশ্ব। তবে মহামারীর কারণে চিকিৎসকদের পরামর্শে কিছু নিয়মকানুন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা পালন করবো রমযানের ফরজ রোযা।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রমযানের রোযা। শুধু আত্মশুদ্ধিই নয়, এ মাস আত্মসংযমেরও। মহান আল্লাহর মহিমা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বরকতময় মাস রমযান। এ মাস হলো রহমত (অনুগ্রহ), মাগফিরাত (ক্ষমা) ও নাজাতের (মুক্তি) মাস। ধৈর্য, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও বরকতের এ মাসে নফল ইবাদতের মাধ্যমে অতিরিক্ত সওয়াব অর্জন করা যায়। আল্লাহ তায়ালার অপার রহমতে এ মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দিয়ে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়।
রমযান কুরআন নাজিলের মাস। হিজরি সনের নবম মাস এই রমযান। মহান আল্লাহ কুরআনুল কারিমে একমাত্র এই মাসের নাম উল্লেখ করে একে সম্মানিত করেছেন। রমযান মাসের শেষ দশকে রয়েছে পবিত্র লাইলাতুল কদর। এ মহান রাতের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও বেশি। রমযানের রোযা রাখা প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য ফরজ। সুবহে সাদিকের আগে সাহরি এবং সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করতে হয়। লাইলাতুল কদর তালাশ করার জন্য মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নাহ। আর ঈদের নামাজের আগেই ফিতরা আদায় করতে হয়।
রোযা কষ্টকর ইবাদত এবং রোযার মাধ্যমে শরীরে চাপ পড়ে বলে অনেকেই রোযা রাখতে ভয় পান বা রোযা রাখেন না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, শরিয়তের বিধান অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া রোযা পরিত্যাগ করা সম্পূর্ণ অনুচিত এবং গুনাহের কাজ। সুস্থ ব্যক্তি তো বটেই, অনেক অসুস্থ ব্যক্তিও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোযা ছেড়ে দেয়া উচিত নয়।
রমযান মাসে রোযা রাখা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি রোযার মাসটি পাবে, তারই কর্তব্য হচ্ছে রোযা রাখা।’ (সূরা বাকারা-১৮৫)
হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রোযা আমার জন্য, আমি নিজে এর প্রতিদান দেবো।’ তেমনি দিনে রোযা শেষে রাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করা রোযার অন্যতম নফল ইবাদত। মহানবী সা:-এর এটি সুন্নাত। মাহে রমযানকে আমরা খোশ আমদেদ জানাই। মহিমান্বিত এ মাসে রোযা পালন এবং বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমরা আসুন- নিজের জন্য, দেশের জন্য এবং আমাদের পৃথিবীর জন্য দোয়া করি যাতে আমরা করোনাভাইরাস মহামারীর মতো কঠিন এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাই।
করোনায় মৃত্যুর মিছিল
প্রতি দিনই কোনো না কোনো দুঃসংবাদ আসছে। আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন প্রিয়জন। মহামারী এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করেছে যে, আপনজনকে দেখার সৌভাগ্যটুকু পর্যন্ত হচ্ছে না।
ভারত সহ প্রতিবেশী দেশগুলিতেও করোনা পরিস্থিতি নাজুক থেকে আরো নাজুক হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ ছয় থেকে সাথে হাজার করে হচ্ছে গড়ে। এই সংক্রমণে করোনাভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি (ভেরিয়েন্ট) বেশি সক্রিয়। আইসিডিডিআরবি ও আইইডিসিআর জানায়, করোনায় ৮১ শতাংশই এই নতুন ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ।
করোনা মহামারী বিশ্বের ২২১টি দেশে বিস্তার লাভ করেছে। বিশ্বের সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ করোনায় হয়েছে আক্রান্ত। করোনায় মারা গেছে সাড়ে ২৯ লাখ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে সোয়া তিন কোটি মানুষ আক্রান্ত এবং পৌনে ছয় লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরই ব্রাজিলে মারা গেছে সাড়ে তিন লাখ, ভারতে এক লাখ ৬৮ হাজার, ফ্রান্সে ৯৮ হাজার, রাশিয়ায় এক লাখ দুই হাজার। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, কোনো কোনো দেশে তৃতীয় ঢেউয়ে মানুষ দিশেহারা। দেশে দেশে লকডাউন ও কারফিউ আরোপ করা হয়েছে। এর কবলে পড়েছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মহারাষ্ট্রে। পশ্চিমবঙ্গেও ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। রমযানে তাই প্রার্থনা সবাই সু্স্থ থাকুন। আগামী দিন আরও ভালো কাটুক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct