সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া: ভোর তিনটে নাগাদ বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার রাধানগর বিটের দেজহাট গ্রামে হাতির হানায় এক যুবকের মৃত্যু হলো। মৃত ওই যুবকের নাম সুভাষ বাগদি। বয়স ২২ বছর। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রী।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এদিন সুভাষ নিজের বাড়িতেই উঠানের ওপর শুয়েছিল। ঠিক ভোর তিনটে নাগাদ দুটি দলছুট হাতি স্থানীয় জঙ্গল থেকে লোকালয়ে চলে আসে। একটি হাতি দেজহাট গ্রামে ঢুকে পড়ে। এরপর ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা সুভাষকে একটি দাঁতাল হাতি এসে প্রথমে শুঁড়ে তুলে মাটিতে ফেলে যাওয়ার সময় মাথায় পা দিয়ে থেতলে দেয়। যার ফলে সুভাষের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। এর পরেই গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে পড়ে। খবর পেয়ে রাধানগর ফাঁড়ির পুলিশ সহ রাধানগর ও ভরা রেঞ্জের বিট অফিসার ঘটনাস্থলে আসে।নিহত ব্যক্তির দাদা মিঠুন বাগদি জানান, “আমি ঘরে ছিলাম ঠিক তখনই কুকুর ডাকাডাকি করে তারপর আমি বাইরে বের হতেই দেখি আমাদের উঠানে একটি বড়ো দাঁতাল হাতি। কিন্তু বাড়িতে কারেন্ট না থাকায় ভাই উঠানে শুয়ে আছে এটা আমি জানতাম না। এরপর দাঁতালটি এসে প্রথমে ওকে সুরে করে তুলে মাটিতে আছড়ে ফেলে এবং মাথাটিকে পায়ে করে থেতলে দিয়ে যায়। আমি আমার ভাইকে ছাড়ানোর সময়টুকু পাইনি। আমি বলতেও পারিনি হাতি এসেছে উঠে পড় তার আগেই এই ঘটনা ঘটে গেছে। আর আমাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের মৃত্যু দেখতে হয়েছে। আমি ছুটে ঘরে ঢুকে পড়ি না হলে আমাকেই ওই হাতিটি ধরে ফেলত”।
স্থানীয় এক বাসিন্দা মঙ্গল বাগদি জানায়, “বনদপ্তরের দূর্বলতার জন্যই আজকে এই নিরীহ প্রাণটি চলে গেল। তিনি বলেন, বহুবার ফরেস্ট অফিসারকে বলা হয়েছে কোনো হুলা বা হাতি তাড়ানো কোনো সরঞ্জাম দেওয়ার জন্য। তবে আমাদের কিছুই দেওয়া হয়নি। আজ আমাদের কাছে খোলা থাকলে হাতিটিকে তাড়াতে পারতাম। তরতাজা প্রাণটা চলে যেত না। আমাদের আতঙ্কের মধ্যেই রাত কাটাতে হচ্ছে”। মৃতের বাবা গোপাল বাগদি বলেছেন, “কোনোদিন আমার ছেলে বাইরে ঘুমায় না। আজই প্রথম বাইরে শুয়েছিল আর আজ তাকে হাতিতে মেরে দিয়ে চলে গেল। আমরা তাকে বাঁচাতে পারলাম না”।
রাধানগর ও ভরা রেঞ্জের বিট অফিসার অনুপম লোহার জানিয়েছেন, “ভোরের বেলা আমাকে রাধানগর ফাঁড়ি থেকে ফোন করে ঘটনাটি জানায়। তড়িঘড়ি আমি ঘটনাস্থলে আসি এবং ঘটনা প্রত্যক্ষ করি। সরকারী আইন অনুযায়ী আমরা তাদের যতটুকু সাহায্য করার তা করব”।
“মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক পরিবারের একটি চাকরি ও আর্থিক সহযোগীতা সবটাই যাতে পায় আমরা তার ব্যবস্থা করবো। কিন্তু আমরা অনেক চেষ্টা করছি যাতে লোকালয়ে হাতি না ঢোকে তা সত্বেও আমরা বুঝতে পারলাম না যে হাতিটি কিভাবে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। এমনকি সরকার থেকে হাতি যাতে কন্ট্রোলে রাখা যায় বারংবার তার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তা সত্বেও হাতিগুলি লোকালয়ে চলে আসছে। গ্রামবাসীরা হূল চেয়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত আমরা সবাইকে তা দিয়ে উঠতে পারিনি”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct