জাইদুল হক: রাজ্যে প্রথম দফার বিধানসভা নির্বাচনে কাঁথির মাজনা প্রাথমিক বিদ্যালযের বুথে ইভিএম বিভ্রাট হয়েছিল্স। ই বুথে দেখা যাচ্ছিল যে বোতামই টিপুন না কেন তা চলে যাচ্ছিল পদ্মফুলে। এর পর ইভিএম পালটে আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তখন থেকেই সন্দেহ শুরু হয় মুসলিম প্রধান এলাকাগুলোতে কি বিজেপি নিশানা করছে। ফের সেই সন্দেহ উসকে দিল শীতলকুচির জোড়পাটকি বুথে। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে এই বুথে বিজেপি মাত্র ২৫টি ভোট পেয়েছিল। সিপিএম টেক্কা দিয়েছিল তৃণমূলকে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার থেকে বিজেপির নিশীথ অধিকারী জিতলেও এই বুথে তৃণমূলের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিলেন। আর ফরওয়ার্ড পায় মাত্র ২৪ ভোট।
এই বুথকে রাজনৈতিক কারণে নিশানা হতেই পারে। অতীত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এই বুথে বিধানসভা ভোটে বামেরা শক্তিশালী, আর লোকসভায় তৃণমূল। বলা যায়, এখানে সচেতন ভোটার। এই ভোটারদের প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের।
শীতলকুচির জোটপাটকি বুথটি গোলেনোহাটি গ্রামপঞ্চায়েতের মধ্যে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে এই অঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেসের দাপট বাড়তে থাকে। এই অঞ্চলে ১৭জন পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে ১৫টি আসন পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। একটি সিপিএম এবং একটি বিজেপি। তৃণমূলের ১৫জন সদস্যের মধ্যে সাতজন মুসলিম। এদের মধ্যে তিনজন মহিলা। যে সাতজন মুসলিম পঞ্চায়েত সদস্য আছেন ওই অঞ্চলে তারা হলেন, নুরবানু বিবি, নুরনাহার বিবি, ফজলুর রহমান, একরামুল হক, লাভলি খাতুন ও আজিজার রহমান।
সবচেয়ে অবাক ব্যাপার ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শীতলকুচি আসনে এই জোটপাটকি বুথে বিজেপি মাত্র ২৫টি ভোট পেয়েছিল। শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রে সেবার তৃণমূল কংগ্রেসের হীতেন বর্মন মাত্র ২৫৭ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন সিপিএমের বিশ্বনাথ বর্মনকে। আর বিজেপির ভবেন্দ্রনাথ বর্মন কল্কে পাননি।
কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে একটু ঘুরে দাাঁড়ায় বিজেপি।২ে০১৯ লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার কেন্দ্রে বিজেপির নিশীথ চৌধুরি জিতলেও এই জোটপাটকি বুথে ২০৮টি ভোট পেয়েছিলেন। যেখাসে তৃণমূলের পরেশ অধিকারী পেয়েছিলেন ৩৬৯টি ভোট। ফর্ওয়ার্ড ব্লক প্রার্থ িগোবিন্দ রায় মাত্র ২৪টি ভোট পান। তবে, কংগ্রেস প্রার্থী এই বুথে ১৬২টি ভোট পেয়েছিলেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বিজেপি খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। স্থানীয়রা বরছে, বরাবরই এই অঞ্চলটি বিজেপি বিরোধী। শুধূ তাই নয়, স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এলাকায় হিন্দু মুসলিমরে মধ্যে বিভেদ নেই। কয়েকজনের অভিযোগ দীর্ঘদিন দরে বিজেপি এই এলাকার মানুষদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ভোট ভাগের চেষ্টা করলেও পারেনি। বিশেষ করে মুসলিমরা খুব সচেতনভাবে বিভিন্ন নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকেন। তাই তাদের অভিযোগ, বিজেপি আপ্রাণ চেষ্টা করছিল কীভাবে এই অঞ্চলে থাবা বসানো যায়। কিন্তু তা না পারায় এভাবে প্ররোচিত করে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে গুলি চালানোর চক্রান্ত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও একই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।
তাই প্রশ্ন উঠেছে, কাঁথির মাজনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইভিএম কারচুপি করে মুসলিম ভোট সঙ্কুচিত করার যে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল তা কি বিশেষ বিশেষ সংখ্যালঘু এলাকায় অব্যাহত থাকবে, যেখানে বিজেপি দাঁত ফোটাতে পারে না?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct