আপনজন ডেস্ক: তুরস্কে ফের সেনা অভ্যুত্থান হওয়ার আশঙ্কা জেগে উঠেছে। এর আগ বহুবার সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়। অনেকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে, কাউকে আবার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এমনকী বর্তমান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান যখন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখনও সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়। যদিও সেই চেষ্টা বর্থ হয়েছিল। ইউরোপের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই মুসলিম দেশটির গত একশো বছরের ইতিহাসে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে অনেকবার। দেশটির ক্ষমতায় আসা প্রায় সব জনপ্রিয় নেতাকেই সামরিক অভ্যুত্থানের হুমকি মোকাবেলা করতে হয়েছে।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি এরদোগানও তার উনিশ বছরের শাসনামলে অনেকবার সামরিক অভ্যুত্থানের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। কখনো মোকাবেলা করেছেন রাজনৈতিক চালে আবার কখনও বা আইনের মাধ্যমে। আর সব শেষ ২০১৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থান মোকাবেলা করলেন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে।
এখন আবার শোনা যাচ্ছে নতুন করে সামরিক অভ্যুত্থানের পদধ্বনি!
তুরস্কের ১০৪ জন প্রাক্তন অ্যাডমিরাল এক যৌথ বিবৃতিতে সরকারের একটি খাল খনন প্রকল্প বাতিল এবং ১৯৩৬ সালে স্বাক্ষরিত মন্ট্রেক্স চুক্তি নিয়ে নতুন কোনো আলোচনা না করতে পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে এই দুই বিষয় নিয়ে সামনে আগালে তুরস্ক ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। এ বিবৃতিটি প্রকাশ হয় শনিবার মধ্যরাতে। তার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়ে যায়।
সামরিক অভ্যুত্থানের ইতিহাস এবং তুরস্কের বিগত সামরিক অভ্যুত্থানগুলো পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট বোঝা যাবে যে, ১০০ উচ্চ পদস্থ প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মধ্যরাতে এ ধরনের ঐক্যবদ্ধ বিবৃতি বিকল্প পন্থায় সরকার উৎখাতে ইন্ধন যোগাবে। জানা গেছে, যে খাল খনন নিয়ে এই বিবৃতিটি আসে সেই “ইস্তান্বুল খাল” প্রথম আলোচনায় আসে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান সুলায়মানের সময়। তার পর ১৫৬০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত প্রায় দশ বার ইস্তান্বুলে একটি বিকল্প খাল খননের প্রস্তাব করা হয়।
সর্বশেষ ২০১১ সালের নির্বাচনে তখনকার প্রধানমন্ত্রী এরদোগান নতুন করে ইস্তান্বুলের বুক চিরে এই কৃত্রিম জলপথ তৈরির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। নির্বাচনী ইশতেহারে এই খাল কাটার ঘোষণা দেন।
মারমার সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরকে যুক্তকারী এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয় “ক্যানেল ইস্তান্বুল” বা “ইস্তান্বুল খাল”। সুয়েজ খাল এবং পানামা খালের মত বছরের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ উপার্জনের আশা দেখানো হয় এই খালের মাধ্যমে। কিন্তু এখানে একটি সমস্যা থেকেই যায়।
এই খাল যে দুটি সাগরকে যুক্ত করবে সে দুটি সাগর তো ফসফরাস প্রণালীর মাধ্যমে আগে থেকেই প্রাকৃতিকভাবে যুক্ত! ভূমধ্যসাগর থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার জাহাজ এই বসফরাস প্রণালী দিয়েই কৃষ্ণ সাগরে যায়। এবং বিনা টোলে, অর্থাৎ কোন টাকা-পয়সা খরচ না করে বিনামূল্যে পার হয় এ প্রণালী। তবে, এখনো পর্যন্ত তুরস্কে যতগুলো সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে সবগুলোরই পিছনে আমেরিকা তথা ন্যাটোর হাত ছিল। যদিও এগুলো কখনোই পরোক্ষভাবে নয়, প্রত্যক্ষভাবে হয়েছিল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct