আপনজন ডেস্ক: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে শনিবার চতুর্থ দফার ভোট হবে রাজ্যে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে উত্তরবঙ্গের দুই জেলা কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে এবং দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলা হাওড়া, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনায়। পাঁচ জেলায় মোট ৪৪ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। চতুর্থ দফার ভোটে প্রায় ৯০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করা হচ্ছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
এই পাঁচটি জেলায় মোট ৪৪টি আসনে ৩৭৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ৩৭৩জন প্রার্থীর মধ্যে ৩৭২ জনের হলফনামা খতিয়ে দেখে জানা গেছে ৮১জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে রযেছে ফৌজদারি মামলা। এদের মধ্যে ৬৫জন কোটিপতি। আর প্রার্থীদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ ৯২.৩৪ লক্ষ টাকা। নির্বাচন কমিশনে পেশ করা হলফনামা থেকে তথ্য নিয়ে শুক্রবার তা প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ ইলেকশন ওয়াচ। তবে, যে ৩৭৩জন প্রার্থী এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তার মধ্যে হুগলির সপ্তগ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নির্দল প্রার্থী বিষ্ণু চৌধুরি নির্বাচন কমিশনে প্রদত্ত হলফনামায় তার আয় সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
চতুর্থ দফায় যে ৫টি জেলার ৪৪টি আসনে বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে তার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাজ্যের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন জাভেদ আহমেদ খান, অরূপ বিশ্বাস। আর প্রাক্তন মন্ত্রীর মধ্যে রয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মধ্যে রয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়।
আলিপুরদুয়ারে ৫টি, হুগলিতে ১০টি, হাওড়ায় ৯টি, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১১টি ও কোচবিহারে ৯টি আসনে ভোট হবে শনিবার। যে ৩৯৩জন প্রার্থী চতুর্থ দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী প্রার্থী কসবা কেন্দ্র থেকে দাঁড়ানো তৃণমূল কংগ্রেসের জাভেদ আহমেদ খান। তার সম্পত্তির মূল্য ৩২ কোটিরও বেশি। এছাড়া আর এক তৃণমূল প্রার্থী মনোজ তেওয়ারির সম্পত্তি ২০কোটিরও বেশি। বিজেপির মধ্যে সবচেয়ে ধনী প্রার্থী মনোজ তেওয়ারির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো রথিন চক্রবর্তী। তার সম্পত্তির পরিমাণ ১৬ কোটি টাকারও বেশি। মহিলা প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ফিরদৌসি বেগম। তার সম্পত্তির পরিমাণ ৬ কোটিরও বেশি। তার পরেই রয়েছেন লকেট চট্টোপাধ্যায় তার সম্পত্তি ৪ কোটিরও বেশি।
আর সবচেয়ে কম সম্পত্তি ভাঙড় থেকে লড়া নির্দল প্রার্থী নওশের আলি মোল্লা। তার সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ৫০০ টাকা।
নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, চতুর্থ দফায় মোট ৩৪জন মুসলিম প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তৃণমূলের। মোট পাঁচজন তৃণমূল কংগ্রেসের মুসলিম প্রার্থী এই দঢায় লড়ছেন। তাদের মধ্যে একজন মাত্র মহিলা, তিনি সোনারপুর উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী ফিরদৌসি বেগম।
বামফ্রন্টের চারজন মুসলিম প্রার্থী। তিনজন সিপিএমের ও একজন ফরওয়ার্ড ব্লকের। আর কঙগ্রেসের চারজন মুসলিম প্রার্থী লড়ছেন চতুর্থ দফায়। আর আইএসএফর হয়েও লড়ছেন চারজন মুসলিম প্রার্থী।
তবে, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা। পাঁচ জেলায় ভোট হতে চলেছে ৪৪টি আসনে। এই দফায় নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন থাকবে মোট ৯০০ কোম্পানি বাহিনী।
চতুর্থ দফায় ভোট হবে উত্তরবঙ্গের দুই জেলা কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে। আর দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলা হাওড়া, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনা। আলিপুরদুয়ারে মোতায়েন থাকছে ৯৯ কোম্পানি। বারুইপুরে থাকছে ৪৫ কোম্পানি।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটে থাকবে ৮৪ কোম্পানি। কোচবিহার পৌঁছেছে ১৮৮ কোম্পানি। ডায়মন্ডহারবারে রাখা হচ্ছে ৩৯ কোম্পানি। হুগলি গ্রামীণ অঞ্চলের জন্য ৯১ কোম্পানি। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটে রাখা হচ্ছে ১০৩ কোম্পানি। হাওড়া গ্রামীণে ৩৭ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন থাকছে। জলপাইগুড়িতে ৬ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশ কমিশনারেট ১০১ কোম্পানি মোতায়েন থাকছে। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটে থাকবে ৭৩ কোম্পানি।এই পর্বে কোচবিহার জেলায় ভোট হবে—মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙা, কোচবিহার উত্তর, কোচবিহার দক্ষিণ, শীতলকুচি, সিতাই, দিনহাটা, নাটাবাড়ি, তুফানগঞ্জ। আলিপুরদুয়ারের মোট চারটি আসনে বিধানসভা ভোট রয়েছে। কেন্দ্রগুলি হল—কালচিনি, আলিপুরদুয়ার, ফালাকাটা, মাদারিহাট। হাওড়ায় ভোটগ্রহণ হবে ৯টি আসনে। কেন্দ্রগুলি হল—বালি, হাওড়া মধ্য, হাওড়া উত্তর, হাওড়া দক্ষিণ, শিবপুর, পাঁচলা, সাঁকরাইল, উলুবেড়িয়া পূর্ব, জোমজুড়। হুগলির ১০ আসনে—উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি, সিঙ্গুর, চন্দননগর, চুঁচুঁড়া, বলাগড়, পাণ্ডুয়া, সপ্তগ্রাম, চণ্ডীতলাতে ভোট হবে। আর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১১ আসনে ভোট হবে। কেন্দ্রগুলি হল—সোনারপুর উত্তর, সোনারপুর দক্ষিণ, ভাঙড়, কসবা, যাদবপুর, টালিগঞ্জ, বেহালা পূর্ব, বেহালা পশ্চিম, মহেশতলা, বজবজ, মেটিয়াবুরুজ।
জানা গেছে, ৯০০ কোম্পনির মধ্যে শুধু বুথ প্রহরাতে থাকবে ৭৯৩ কোম্পানি বাহিনী। বাকি ১০৭ কোম্পানি থাকবে নজরদারির দায়িত্বে। কলকাতা পুলিশ এলাকায় থাকবে ১০১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। বারুইপুর পুলিশ জেলা ও ডায়মন্ডহারবার পুলিশ জেলায় মোতায়েন থাকবে ৪৫ কোম্পানি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। হাওড়ায় থাকবে ১৪০ কোম্পানি এবং হুগলিতে ১৭৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। কোচবিহারে ১৮৮ কোম্পানি বাহিনী থাকবে সুরক্ষার দায়িত্বে। আলিপুরদুয়ারে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে ১০৫ কোম্পানি বাহিনী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct