আপনজন ডেস্ক: রাজ্যের দ্বিতীয় দফার ভোট হচ্ছে ৩০টি আসনে। কিন্তু সবার নজর গিয়ে পড়েছে নন্দীগ্রামে। বিজেপির বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছে নন্দীগ্রামে। বিভিন্ন বুথে তৃণমূলের এজেন্ট বসতে না দেওয়ার অভিযোগ পেয়েই হুইল চেয়ার নিয়েই অভিযোগ ওঠা বুথে ছুটে চলেন মমতা।
সকাল সাতটা থেকে ভোট শুরুর পর থেকে বেশ কিছু জায়গায় থেকে খবর আসে বুথ দখলের। অনেক জায়গায় গ্রামবাসীরা অভিযোগ জানান, সিআরপিএফ তাদেরকে ভয় দেখাচ্ছে যাতে তারা ভোট দিতে না যায়। এছাড়া অভিযোগ, যেখানে যেখানে শুভেন্দু অধিকারী যাচ্ছেন সেখানে গণ্ডগোল পাকানো হচ্ছে।
মমতা নির্বাচনী এজেন্ট সকাল থেকেই বুথে বুথে গিয়ে খবর নেন কোথাও কোনও গণ্ডগোল হচ্ছে কিনা। তার মাঝেই খবর আসে বয়ালে তৃণমূলের এজেন্টকে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। মমতা হুইল চেয়ার নিয়েই ওই বুথ পরিদর্শনে বেরিয়ে পড়েন। তবে, নন্দীগ্রাম-১ নং ব্লকের বয়ালে অভিযোগ উঠেছে বুথে তৃণমূল এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি। বসতে না দেওয়ার অভিযোগ সোনাচূড়া, গোকুলনগরেও। কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলে বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছে। উপরন্তু এজেন্টের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে, বের হলেই খুন করে দেওয়া হবে। অবশেষে তৃণমূল কর্মীরা খবর দিলে নির্বাচন কমিশনের লোকজন পুলিশ সহ সেখানে যায়।
তখন ওই এজেন্ট মৃণাল কান্তি জানার স্ত্রী জানান, বাড়িতে শাশুড়ি আর ছোট্ট বাচ্চা। এই অবস্থায় হুমকি দিলে কীভাবে তার স্বামী বাইরে বের হবে। মৃণালের মা কান্নায় ভেঙে পড়ে হাতজোড় করে বলেন, আমার ছেলেকে প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছে, বুথে যাবে না।
মমতা হুইল চেয়ারে বসে বয়ালের শংকরবেতার গ্রামের সাত নম্বর বুথে যান। সেখানে যাওয়ার পর তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মমতা প্রায় ঘণ্টা খানেক আটকে থাকেন। মমতা অভিযোগ করেন, এখানকার মানুষদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। ৮০ শতাংশ ছাপ্পা ভোট দিয়েছে বিজেপি। তৃণমূল এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই তিনি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের কাছে ফোনে অভিযোগ জানান।
বিশাল সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী সেখানে পৌঁছায়। ঘটনাস্থলে যান নন্দীগ্রাম থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী। তৃণমূল এবং বিজেপি দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। বয়ালে তৃণমূল এজেন্টকে ভয় দেখিয়ে বুথে আসতে না দিয়ে অন্যজন এলে কাগজের ত্রুটি দেখিয়ে তাকে বসতে দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, শুভেন্দু অধিকারীর গাড়ি আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে শুভেন্দু মমতাকে তোপ দেগে দাবি করেন, বেগম হারছেন, তিনিই জিতছেন। এই জানিয়ে দেন, তৃণমূল জিতবে কী করে ৮০টা বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি তৃণমূল।
অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট সেখ সুফিয়ান ইতিমধ্যেই একটি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। মমতা বয়াল থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘যিনি বিজেপির হয়ে এখানে দাঁড়িয়েছেন, তিনি তাণ্ডব চালিয়েছেন। অত্যাচার চালিয়েছেন। আমরা ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে ৬৩ টি অভিযোগ দায়ের করেছি। নন্দীগ্রাম নিয়ে চিন্তিত নই আমি। গণতন্ত্র নিয়ে চিন্তিত। এখানে ভোটে চিটিংবাজি হয়েছে। মা-মাটি-মানুষের আশীর্বাদে আমি জিতব। সকাল থেকে ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু আমি যেতেই সবাই আমায় শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতি কোনও অভিযোগ নেই। তারা আমাদের বন্ধু। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।’
অন্যদিকে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র অভিযোগ করেছেন, সকাল থেকেই দ্বিতীয় দফার ভোটে ইভিএম খারাপের অভিযোগ এসেছে। কমপক্ষে ১৫০টি ইভিএম খারাপ বলে খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে নন্দীগ্রাম ও দ্বিতীয় দফার ভোট করে উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনার মধ্যে শেষ হল। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফায় মোট ৩০টি আসনে সন্ধ্যা সাড়ে ছটা অবধি ৮০.৪৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।
এ বিষয়ে নন্দীগ্রামের বাসিন্দা অাব্দুস সামাদ জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামে মমতার জয় নিশ্চিত। বিজেপি ৬০-৭০টা বুথ দখল করে ছাপ্পা মারার চেষ্টা করলেও সম্পূর্ণ সফল হতে পারেনি। নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে যা মার্জিন পাবেন মমতা তা নন্দীগ্রাম-১ কেও ছাপিয়ে যাবে। তাই কমপক্ষে ৫০ হাজার ভোটে মমতা জিতবেন বলে তিনি আশাবাদী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct