আপনজন ডেস্ক: রাজনীতি বড় বালাই। যে শুভেন্দু অধিকারী আপদে বিপদে মুসলিমদের সঙ্গে সংপৃক্ততার কথা সর্বত্র বলে বেড়াতেন, তার মুখে এখন অন্য কথা। তৃণমূলে থাকার সময় তিনি বলতে, মুসলিমরাও তার ভাই। আর বিজেপিতে যোগ দিয়ে শুভেন্দু তাদেরকে পাকিস্তানি বলতে দ্বিধা করছেন না। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতিকে রাজ্য বিজেপি নেতাদের থেকে এক ধাপ আগে গিয়ে, তিনি নির্দ্বিধায় বলেছেন, নির্বাচনে যারা গন্ডগোল করছে তারা পাকিস্তানি। তারা বিশেষ সম্প্রদায়ের। বুঝতে অসুবিধা নেই, ধর্মের তাস খেলে তিনি বাজিমাত করতে চাইছেন। অথচ, এক বছর আগে অধিকারী পরিবারের কাছে মুসলিমরা খারাপ ছিলেন না।
শুভেন্দুর এই ভোলবদলের চরম সমালোচনা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে মমতা বললেন, আমি নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়েছি জমি আন্দোলনকে সম্মান জানাতে। নাম না করে শুভেন্দুকে নিশানা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, দুধকলা দিয়ে এতদিন যাকে পুষেছি, সে এখন কালকেউটে হয়ে হিন্দু মুসলমান বিভাজন করছে।
হোলির দিন মমতা এদিন অদম্য মনোভাব নিয়ে প্রায় ৮ কিলোমিটার মিছিলে হাঁটলেন হুইল চেয়ারে বসে। যে জায়গায় তার পা ভেঙে গিয়েছিল সেই জায়গা থেকে মমতা সূচনা করেন হুইল চেয়ারে বসে পদযাত্রা। বিরুলিয়া থেকে ঠাকুরচক পর্যন্ত রোড শো করে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করলেন।
তবে এদিন নন্দীগ্রামের মানুষদের জন্য তিনি সুখবর দেন। এতদিন কলকাতার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর সমান্তরাল দফতর ছিল। এবার থেকে নন্দীগ্রামের মানুষদের আর মুখ্যমন্ত্রীর নাগাল পেতে নবান্ন ছুটতে হবে না। কালীঘাটের মতো অফিস হবে নন্দীগ্রামে, যেখানে মানুষ নিজেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সান্নিধ্য পাবেন। আর এ নিয়ে বললেন, নন্দীগ্রামে একটা সিএমও অফিস রাখবো। আমিও নন্দীগ্রামে আসব, থাকব।
ভোটে নন্দীগ্রামে জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত মমতা তৃতীয় বারের তৃণমূল সরকার গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বলেন, ২১ মে যে সরকার গড়া হবে। আর তার মুখ্যমন্ত্রী হবেন নন্দীগ্রাম থেকেই। তাই খেলা হবে। মমতা ঘাসফুল প্রতীক চিহ্ন ভোট মেশিনে ২ নম্বরে আছে। তাতে বোতাম টেপার আহ্বান জানান। আর বলেন, ২ মে ফাইনাল ম্যাচ হবে। বাক্স খুলবে আর জোড়াফুল বেরোবে।
তবে, ভেটারদের মাস্ক পরে ভোট দিতে আসার অনুরোধ জানান। কারণ, তা না হলে দিল্লির পুলিশ ভোট দিতে দিচ্ছে না। তাড়িয়ে দিচ্ছে। ভিভিপ্যাড মেশিনে দেখবেন কোথায় ভোট যাচ্ছে। প্রত্যয়ের সুরে তাই জনগণের প্রতি মমতার বার্তা, লড়ব এখানে। জিতব এখানে। সরকার গড়ব এখানে। নন্দীগ্রামের মানুষদের প্রতি অবশ্য মমতা বলেন, ভোটটা সকাল সকাল দেবেন। ওই ভোঁতা বন্দুকের কোনও দাম নেই। ভয় টয় পাবেন না। নির্ভয়ে এগিয়ে যাওয়ার নাম নন্দীগ্রাম। অন্যদিকে ইভিএম মেশিনে কারচুপির ভয়ে তা পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দেন দলীয় কর্মীদের। ১ মাস মেশিন পাহারা দিতে হবে। ১ এপ্রিল নন্দীগ্রামে ভোট। অন্যদিকে, মমতার পাল্টা হিসেবে বেশ কয়েকটা সভা করবেন বিজেপির অমিত শাহ। তবে সবাই তাকিয়ে আছে নন্দীগ্রামের দিকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct