সুলেখা নাজনিন: শনিবার ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কযেকটি জেলায়। প্রথম দফায় ৩০টি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। ইতিমধ্যে এবারের নির্বাচনকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতির চূড়ান্ত মাত্রায় চলে যাচ্ছে। একদা অসাম্প্রদায়িক বলে পরিচিত তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওযা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে যে সব কথা শোনা যাচ্ছে তা দিলীপ ঘোষের মতো কট্টর বিজেপিদের ছাপিয়ে যাচ্ছে। শুভেন্দুবাবু মুসলিমদের নাম না করে তাদেরকে পাকিস্তানি আখ্যা দিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনে গন্ডগোল পাকানোর জন্য এইসব ‘পাকিস্তানি’রাই দায়ী।
শুভেন্দুর মুখে যখন এই ধরনের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের ভাষা তখন তারই খাসতালুক কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভার কাঁথি থানা এলাকার দুলালপুর গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত মাজনা মক্তব বিদ্যালয়ের বুথে শনিবার সকালে ইভিএম মেশিনে এক অবাক কাণ্ড ঘটে। মুসলিম প্রধান এই বুথের ভোটাররা অভিযোগ তোলেন ইভিএমে তৃণমূলের ঘাসফুলে বোতাম টিপলে বিজেপিতে চলে যাচ্ছে।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অবশেষে ভোট থামিয়ে ইভিএম মেশিন পরিবর্তন করে ফের ভোট শুরু হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, মুসলিম প্রধান এলাকা ইভিএম মেশিনে এই ধরনের বিভ্রাটের অভিযোগ সামনে আসায়।
উল্লেখ্য, বেশি কিছুদিন ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করে আসছেন ইভিএমে কারচুপি করে বিজেপি ভোটে জিততে চাইছে। তাহলে কি মমতার অভিযোগ সত্যি হতে চলেছে কিনা সে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু মুসলিম প্রধান বুথে ইভিএমে বিভ্রাটের পিছনে কি কোনও চক্রান্ত আছে, তা বাবিয়ে তুলছে বিজেপি বিরোধীদের, বিশেষ করে তৃণমূলকে। কারণ, মুসলিমরা তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্ক বলে এখনও পরিচিত। সেক্ষেত্রে মুসলিমদের এককাট্টা ভোট তৃণমূলে গেলে বিজেপির হারের কারণ নিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে। তাই কি বিজেপির নিশানা মুসলিম প্রধান বুথে ভোটের হিসাব ওলটপালট করে দেওয়া?
এবার নজর দেওয়া যেতে পারে শনিবার যে বুথে ইভিএম গণ্ডগোলের খবর পাওয়া গেছে সেখানকার কিছু তথ্যের উপর।
কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভার কাঁথি থানা এলাকার দুলালপুর গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত মাজনা মক্তব বিদ্যালয়। এটি কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভার ১৭১ নম্বর বুথে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, একারের নির্বাচনে এই বুথে মোট বৈধ ভোট ৬৩৯টি। তার মধ্যে মুসলিম ভোটার ৩৮৯টি আর হিন্দু ভোটার ২৫০টি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে এই বুথে ৬০ শতাংশ মুসলিম ভোটার।
নির্বাচন কমিশন এবারের যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে ১৭১ নম্বর মাজনা মক্তব বিদ্যালয়ের বুথে ১ ক্রমিক নম্বরের ভোটার হলেন সামিউল আলি। একটানা ২২ নম্বর অবধি মুসলিম ভোটার। ২২২ ক্রমিক নম্বরে আছেন সবনম খাতুন। এরপর ২২৩ ক্রমিক নম্বর থেকে শুরু হযেছে তুসারকান্তি গিরির নাম দিয়ে। এভাবে হিন্দু মুসলিম মিশিয়ে ভোটার রযেছে এই বুথে। সর্বশেষ যে সংযোজন হয়েছে তাতে তিনজনের নাম রযেছেন খোকন সাহা, তার স্ত্রী গুলিয়াজান সাহা ও পুত্র ইসমাইল সাহার নাম।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল গত ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এই মাজনা মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে মোট বৈধ ভোট পড়েছিল ৫৩৭টি। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের শিশির কুমার অধিকারী পেয়েছিলেন ৩১০টি ভোট।
বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস সামন্ত পেয়েছিলেন ১৪০টি ভোট, কংগ্রেসের দীপক কুমার দাস পেয়েছিলেন ১৩টি ভোট। এমনকী নোটায় পড়েছিল ৬টি ভোট। বাকি ভোট অন্যান্যরা পেয়েছিলেন। ফলে, স্বভাবতই এই বুথের প্রতি নজর সব রাজনৈতিক দলের। লোকসভা নির্বাচনেও এই বুথে বিজেপি তৃণমূলের থেকে অর্ধেকের কম ভোট পাওয়ার জন্য কি এই মুসলিম প্রধান বুথকে নিশানা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct