আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে ভোটের দিন ঘোষণার অনেক আগে থেকেই মুসলিম ভোটে থাবা বসাতে বাংলার প্রতি হায়দরাবাদ থেকে বিশেষ নজর দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার তথা মিম দলের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে হঠাৎ করেই প্রার্থী দিয়ে বাজিমাত করেছেন ওয়াইসি। তাই তার বাংলায় সেই বলয় বিস্তৃত করার আশা নিয়ে পরিকল্পনা করেই এ রাজ্যে এসেছিলেন ওয়াইসি। তখনও অবশ্য ফুরফুরার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী দল ঘোষণা করেননি। তার আগেই বাংলা সফরে এসে সোজা ফুরফুরা শরিফে গিয়ে আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি আসলে রাজ্যের ক্ষুব্ধ মুসলিমদের নিয়ে রাজনৈতিক যুদ্ধে নামতে চান। আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকের পর জানিয়েও দেন তিনি এ রাজ্যে আব্বাসের কথাতেই চলবেন। একেবারে রাজনীতিতে নতুন আব্বাসের কাছে নিজেকে ‘সঁপে’ দেওয়ার মধ্যে কী রহস্য লুকিয়ে আছে তা কেউ আঁচ করতে পারেননি। পরবর্তীতে সেই ছবি পাল্টাতে শুরু করে। আব্বাস সিদ্দিকী অবিজেপি, অতৃণমূল জোটের পক্ষে গিয়ে বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোয় হতাশ হয়ে পড়েন ওয়াইসি। তাই রাজ্যের মুসলিম প্রধান জেলায় অবজার্ভার পাঠিয়ে একটা খসড়া সমীক্ষা করে নেন কোথায় কোথায় মুসলিমদের এককাট্টা ভোট পাওয়া যেতে পারে। তারই প্রথম পদক্ষেপ মেটিয়াবুরুজে সভা ঘোষণা। কিন্তু রাজ্য সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় বানচাল হয়ে যায় ওয়াইসির বঙ্গ সফর। কিন্তু দমবার পাত্র নন ওয়াইসি। তারপর অনেকে ভেবেছিলেন নাছোড়বান্দা ওয়াইসি হয়তো মেটিয়াবুরুজে সভা করেই ছাড়বেন। সভার অনুমতি পাওয়ার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার কথা বলা হয় রাজ্য মিম-এর পক্ষ থেকে। তারপর আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে বাম কংগ্রেসের জোট মিম-এর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আব্বাসের এই ভূমিকা ভালভাবে নিতে পারেননি ওয়াইসি বলে সূত্রের খবর। যদিও ওয়াইসি এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে, মেটিয়াবুরুজ থেকে দৃষ্টি প্রায় সরিয়ে নিয়েছেন ওয়াইসি, ঘনিষ্ঠ সূত্র সেটাই বলছে। তাই নজর ঘুরিয়ে সোজা চলে গিয়েছে মুর্শিদাবাদে। জানা গেছে, মুর্শিদাবাদে প্রায় ১৩টি আসনে প্রার্থী দিচ্ছে। এই মর্মে মিম-এর মুর্শিদাবাদের অবজার্ভার আসাদুল্লাহ সেখ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তার প্রথম ধাপ হিসেবে সাগরদিঘিতে প্রথম সবা করতে চলেছেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওয়াইসির কলকাতায় আসার কথা। শনিবার সাগরিদিঘিতে মিম-এর সভায় তিনিই প্রধান বক্তা বলে জানা যাচ্ছে। আর তাই জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছে কেন মেটিয়াবুরুজ ছেড়ে ওয়াইসি হঠাৎ মুর্শিদাবাদে। নিন্দুকরা বলছেন, একমাত্র জনসখ্যার বিন্যঅসের কারণে এখনও বিজেপি থাবা বসাতে পারেনি মুর্শিদাবাদে। কয়েকটি কেন্দ্র ছাড়া হিন্দু ভোট ৩০ শতাংশও নয়।
তাই ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিতে পেরে ওঠা অসম্ভব হয়ে উঠবে বলে বিজেপি নেতৃত্ব বিলক্ষণ বুঝে গেছেন। কিন্তু ওয়াইসি হয়তো জানেন না মুর্শিদাবাদে মুসলিম জনসখ্যার আধিক্য থাকলেও সেখানে মুসলিম লিগের মতো দল কল্কে পায় না, জামানত জব্দ হয়। এমনকী একবার মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌদুরির মতো জাঁদলে নেতা যোমকলে দাঁড়িয়ে জামানত জব্দ হয়েছেন। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে মুসলিম ভোটার বেশি থাকলেও প্রণব মুখোপাধ্যায় কিংবা তার পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় দাঁিড়য়ে মুসলিমদের বোটেই জিতেছেন। সুতরাং ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি সেভাবে দানা বেঁেধ ওঠেনি মুর্শিদাবাদে। কিন্তু বিজেপি যেভাবে ধর্শীয় মেরুকরণের রাজনীতি করে চলেছে তাতে মুর্শিদাবাদের হিন্দু ভোটে তারা থাবা বসাতে পারে। সেক্ষেত্রে ওয়াইসি প্রার্থী দিয়ে যদি মুসলিম ভোটে ভাগ বসাতে পারেন তাহলে েহয়তো মুর্শিদাবাদে প্রথম ‘পদ্ম’ ফুটতে পারে। বিজেপি সেই আশায় হয়তো বসে রয়েছে।
আরও একটি বিষয় হর, ইদানিংকালে রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির বিরুদ্ধে কোনও রা কাড়ছেন না। অথচ, আব্বাস সিদ্দিকী কিংবা ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে লাগাতার মন্তব্য করে চলেছেন। তাই আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মুর্শিদাবাদকে পাখির চোখ করা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যে ওয়াইসি সংসদে বিজেপির বিরুদ্ধে বরাবরই সরব, সেই ওয়াইসি কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আসা নিয়ে যে জল্পনা হচ্ছে সে প্রসঙ্গে কোনও মুখ খোলেননি। তার লক্ষ্য এখন যেনতেনপ্রকারেন মিম-এর অভিষেক করা। রাজ্যের অন্যান্য জেলা বাদ দিয়ে মুসলিম প্রধান জেলাকে বেছে নেওয়ার পিছনে কি এমন উদ্দেশ্য রয়েছে তা কিন্তু ধোঁয়াশায় রয়েছে। তবে সত্যিই মুর্শিদাবাদের মুসলিম প্রদান বিদানসভা কেন্দ্রগুলিতে মিম প্রার্থী দিলে যদি প্রথম ‘পদ্ম’ ফোটে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct