রাকিবুল ইসলাম, হরিহরপাড়া: খানিকটা কাকতালীয় বটে। তবে তিন পিতৃহারা যুবকের মানবিক মুখে গভীর রাতে রাস্তার পাশ থেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার হল এক অজ্ঞাত পরিচয় প্রৌঢ়া। মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থানার পাওয়ার হাউস মোড় এলাকা। আর পাঁচটা দিনের মতো এদিনও এলাকার তিন যুবক রাজীব মন্ডল রবিউল ইসলাম ও চায়ের দোকানের মালিক খোদ সম্রাট হাসানের চায়ের দোকানে আড্ডায় বসেছিল। হঠাৎই সম্রাটের চায়ের দোকান থেকে কিছু দূরে এক বছর পঁটচাত্তরের জীর্ণশীর্ণ বৃদ্ধা রাস্তার পাশে গুটিসুটি অবস্থায় পড়েছিল। কারো নজরে না পড়লেও, কিংবা অনেকেই সচেতনভাবে এড়িয়ে গেলেও এই তিন যুবকের নজরে আসতে তারা ছুটে যাই সেখানে। প্রথমে ঐ বৃদ্ধার পরিচয় জানার চেষ্টা করে। তারপরে তড়িঘড়ি তাকে উদ্ধার করে পেশায় অঙ্কন শিল্পী রাজীব মন্ডল তার বাকি বন্ধু সম্রাট হাসান রবিউল হক পিন্টু সেখ জার্জিস শেখ, কিরণ শেখ কে সঙ্গে নিয়ে একটি মারুতি ভ্যানে করে স্থানীয় হরিহারপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে হাজির হয়।
যদিও সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে টালবাহানা করলে, ওই তিন যুবক রীতিমতো তৎপর হয়ে ওই বৃদ্ধাকে অ্যাম্বুলেন্স এর মাধ্যমে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করে। যদিও পরবর্তীতে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি সেখানে এলে নড়েচড়ে বসে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক, হরিহরপাড়া থানার আইসি অমিত নন্দীকে বিষয়টা জানানো হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়ে ওই বৃদ্ধা মহিলাকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হয়। শেষ পর্যন্ত এই ৩ পিতৃহারা যুবকের হাত ধরেই কার্যত প্রাণ ফিরে পেল ওই বৃদ্ধা। হয়তো মুখে কিছু বলার মতো শারীরিক অবস্থা না থাকলেও, মনের অন্তরে রাজীব মন্ডল ও তার দুই বন্ধু সম্রাট রবিউলকে নিজের সন্তান স্নেহে নিশ্চিত প্রাণভরে আশীর্বাদ করেছেন ওই নাম পরিচয়হীন ভবঘুরে বৃদ্ধা। এমন কাজ করতে পেরে নিজেকে খানিকটা হলেও এদিন মানসিকভাবে চরম শান্তি অনুভব করেন ওই তিন যুবক সহ তার সঙ্গীরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct