সাদ্দাম হোসেন মিদ্দে, ভাঙড়: দীর্ঘ বাম শাসনে কখনও নতুন মাদ্রাসা স্থাপন কিংবা মুসলিমদের চাকরিতে সংখ্যানপাতে চাকরি সংরক্ষণের ব্যাপারে বাম মুসলিম নেতারা ছাড়া কারও মুখে কোনও কথা শোনা যেত না। বরং, মুসলিম প্রসঙ্গ এলেই শীর্ষ বাম নেতারা ধর্মনিরপেক্ষতার সাফাই দিতেন। বহুদিন পর এবার সেই শীর্ষ বাম নেতৃত্বের মুখে শোনা গেল মাদ্রাসার কথা।
রবিবার ভাঙড়ে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকীর সমর্থনে আয়োজিত সভায় পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর উপস্থিতিতে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু সরব হলেন মাদ্রাসা নিয়ে। বাম শাসনের অবসানের পর তৃণমূল শাসিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি, রাজ্যে দশ হাজার মাদ্রাসা তৈরি করা হবে। সেই দশ হাজার মাদ্রাসা স্থাপনের প্রতিশ্রতি কোথায় গেল তা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলেন বিমান বসু। বিমান বসু বলেন, ‘তৃণমূল সরকার যে দশ হাজার মাদ্রাসা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ছেলেমেয়েদের চাকরি দিতেও ব্যর্থ হয়েছে সরকার।’ অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে বাম নেতারা মুসলিম প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলতেন এখন তারাই মুসলিম প্রসঙ্গে ফিরেছেন, এটা নিঃসন্দেহে রাজ্যের মুসলিমদের কাছে স্বস্তির।
বিশেষ করে যে বিমান বসুকে কোনওদিন মুসলিমদের উন্নয়ন নিয়ে কোনও মুখ খুলতে দেখা যায়নি তিনিই মাদ্রাসা স্থাপনের বিষয়ে সরব হওয়াটা নিঃসন্দেহে একটা বড় মানসিক পরিবর্তন।
তবে, এর জন্য আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট অনুঘটকের মতো কাজ করেছে কিনা পরের কথা, তবে তৃণমূল সরকারের দেওয়া মুসলিম উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার ব্যাপারে এর আগে কোনওদিন সরব হতে দেখা যায়নি বিমান বসুকে।
বিশেষ করে যখন রাজ্যের মুসলিমরা উজাড় হয়ে বামেদের ভোট দিতেন তখনও না। তাই বিমান বসুর এই পরিবর্তন সংখ্যালঘুদের জন্য ভষিষ্যতের ইঙ্গিতবহ বলে অনেকে মনে করছেন।
তাই আব্বাস সিদ্দিকীর সভায় বিপুল জনতার মাঝে বিমান বসুর এই মাদ্রাসা নিয়ে সরব হওয়া অবশ্যই নজির হয়ে থাকবে তাতে সন্দেহ নেই।
এদিন বিকাল তিনটায় সংযুক্ত মোর্চার আহ্বানে সভা শুরু হয়। ভাঙড় বিজয়গঞ্জ বাজারের মেলা মাঠে এদিনের সভায় ভিড় উপচে পড়ে। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাম ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, আইএসএফ সুপ্রীমো আব্বাস সিদ্দিকী, সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার ঘোষ, ভাঙড়ের আইএসএফ প্রার্থী নওশাদ সিদ্দিকী, কসবার সিপিএম প্রার্থী শতরূপ ঘোষ প্রমুখ।
এদিনের সভায় একেবারে যুদ্ধংদেহি মনোভাব নিয়ে বক্তৃতা দেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। আব্বাস বলেন, ‘পুলিশ ভাইদের দিয়ে আইএসএফ কর্মীদের নানা ভাবে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পুলিশ ভাইদের বলছি আপনারা আমাদের ছেলেদের তাড়াবেন না। কারা আপনাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে বলুন। আমরা তাদের দেখে নিচ্ছি। আপনাদের উপর এখনও বিশ্বাস আছে। বিশ্বাস ভাঙবেন না।. দলীয় নেতাকর্মীদের এদিন তিনি আরও বলেন, ‘ভাঙড়ের কোন ছেলের কিছু হলে হাজার হাজার সমর্থক নিয়ে থানা ঘিরে ফেলতে হবে। আমি পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে গেলাম।’
অন্যদিকে, আইএসএফ চেয়ারম্যান তথা ভাঙড়ের প্রার্থী বলেন, ‘ভোটের আগের দিন অনেকে এসে ভোটকেন্দ্রে যেতে মানা করবে। তাদের ধরে বেঁধে রেখে দিন। ভোট হয়ে গেলে ছেড়ে দেবেন।’ শতরূপ ঘোষ বলেন, ‘বেচারা মমতা ব্যানার্জি এখন সভাতে বক্তব্য রাখতে রাখতেও পিছন দিকে তাকিয়ে দেখেন। কেননা তাঁর দলের কেউ বিজেপিতে চলে গেল কিনা!’ তুষার ঘোষ বলেন, ‘প্রয়াত বাম বিধায়ক বাদল জমাদারের পর নওশাদ সিদ্দিকী হবেন ভাঙড়ের সবচেয়ে সৎ বিধায়ক।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct