এহসানুল এক, বসিরহাট: দু'বেলা দু'মুঠো খাবার যোগাড়ের জন্য কখনও পোলট্রিতে কাজ করেন, কখনও খালেবিলে জাল ফেলে মাছ ধরেন। কখনও আবার ভোররাত থেকে দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পরও মাঠে জনমজুরের কাজ করেন কুড়ি বছরের যে তরুণ, সেই জিন্না মণ্ডল গত দুই বছর আগে ইডেনে আইপিএলের নেটে সকলকে চমকে দিয়েছিল।
বসিরহাটের বিবিপুরের চাষীর ছেলে জিন্না ইডেনে নেট বোলার হিসাবে সেদিন নেমে কিংস পাঞ্জাব ইলেভেনের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলারের উইকেট ভেঙে দিয়েছিল।এখন সিএবি কলকাতা লিগে খেলা করছে।
একদম নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে জিন্নার ক্রিকেটের হাতেখড়ি গ্রামের রাস্তায় পড়ে থাকা মুচি ডাব আর লেবু নিয়ে। সেখান থেকে টেনিস বলে হাত পাকিয়ে পাড়ার মাঠে খেলা শুরু। তবে অত্যন্ত গরিবের এই ছেলেকে কেউ খেলতেও নিত না। জল বয়ে দেওয়া ও বল কুড়িয়ে সকলের মন খুশি করে তবে টিমে জায়গা করে নিয়েছিল জিন্না। টেনিস বলে ভালো খেলেই এলাকার এক ক্রিকেট প্রেমীর নজরে পড়ে অ্যাকাডেমিতে ট্রায়াল দিতে এসে।
সপ্তাহে দু'তিন দিন ভয়ঙ্কর কষ্ট করে কলকাতায় প্র্যাক্টিস করতে আসেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া জিন্না। 'রাত আড়াইটেয় সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সতেরো কিলোমিটার চালিয়ে ভোর তিনটে পঞ্চাশের শিয়ালদহ লোক্যাল ধরি কাকড়ামির্জা স্টেশন থেকে। অ্যাকাডেমিতে পৌঁছই সাড়ে ছ'টায়। অ্যাকাডেমিতে থেকে বেরোই দুপুরে। বাড়ি পৌঁছতে রাত হয়ে যায়।'
বারোমাস্যার এই কষ্টটা জিন্না গায়ে মাখতে চান না। বরং কষ্টটাকেই জেদে পরিণত করে বাংলার ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাঁর কথায়, 'অ্যাকাডেমির সবাই আমাকে খুব সাহায্য করে। আমাকে বিনা পয়সায় কোচিং নেওয়ারও সুযোগ দিয়েছেন সম্বরণ স্যর। তাই ওঁদের মর্যাদা রাখতে আমাকে বড় ক্রিকেটার হতেই হবে।' সঙ্গে জোড়েন, 'এ বার আমায় ক্লাব ক্রিকেটে খেলতে হবে। কলকাতায় থাকতে হবে। তবেই সম্ভব হবে ক্রিকেটার হওয়া।'সেইকথায় ভেবে এখন থেকে কলকাতায় থেকে প্রাকটিস করছি। এদিন তাকে দেখতে কলকাতা থেকে ছূটে আসেন বিশিষ্ট ফুটবলার ও রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপ্ত এককথায় অসাধারণ মানুষ বাস্তব মিত্র।তিনি এদিন এসে সাংবাদিকদের জানান,আমি আজ জিন্নার পাশে এসে ভালো লাগছে। কারণ এই রকম একটা অসহায় অবস্থার পরিবারের ছেলে যাতে খেলতে পারে, দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে ।আমি ওর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব। এদিন জিন্নার বাবা বলেন,আমি চাই আমার ছেলে বড় ক্রিকেটর হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে ওর স্বপ্ন যেন ভেঙে না মা।তাই আমার ছেলের পাশে দাঁড়ান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct