মোস্তাফিজুর রেহমান সরকার, দিনহাটা: তিন দিক সীমান্ত দিয়ে ঘেরা বিধানসভা কেন্দ্র হচ্ছে দিনহাটা। একদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের পীঠস্থান অন্যদিকে নতুন করে তৈরি হয়েছে দিনহাটার বুক দিয়েই গিদালদহ বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল করিডর। মাড়োওয়ারি,গুজরাটিরা এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের পসার জমিয়েছে মজবুত করে । এই দিনহাটা থেকেই জন্ম নিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ মোহাম্মদ এরশাদ ।
দেশ স্বাধীনতার পর প্রথম ১৯৫১ সালে ভোট হয়। জাতীয় কংগ্রেস থেকে সার্বভৌম ভারতের দিনহাটার সর্ব প্রথম বিধায়ক হন সতীশ চন্দ্র রায় সিংহ। পর পর ১৯৫১, ১৯৫৭, ১৬৯ ও ১৯৭২ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস জয় লাভ করেছিল।
এরই মাঝে ফরওয়ার্ড ব্লকের উত্থান দেখা দেয় বিভিন্ন সময় যেমন ১৯৬২ ও ১৯৬৭ৎ তে ফরওয়ার্ড ব্লক আসন ছিনিয়ে নেয় কংগ্রেসের কাছ থেকে। এর পর ১৯৭৭ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত টানা ২৪ বছর বিধায়ক ও মন্ত্রী ছিলেন কমল গুহ। কমল গুহের মৃত্যুর পর পুত্র উদয়ণ গুহ প্রার্থী হন ২০১১ সালে। অর্থাৎ বলা যেতে পারে ফরওয়ার্ড ব্লক এর গড় ছিলো দিনহাটা। আর এবারে প্রথমবার দিনহাটায় রাজনীতির মঞ্চে ফরওয়ার্ড ব্লকের আব্দুর রউফকে সংখ্যালঘু প্রার্থী হিসাবে দেখতে পাবে। প্রার্থী হিসাবে নতুন মুখ হলেও ডাকসাইটে নেতা কমল গুহর বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামের সর্বদাই সাথী ছিলেন। চাষিদের পাশে থাকা, দিনহাটা অন্তর্গত সিটমহল মানুষের দুঃখ বেদনার পাশে দাঁড়ানো, গরিব চাষিদের যাতে জমি কাঁটাতারে নষ্ট না হয় বা তার উচিত মূল্য ক্ষতিপূরণ পায় তার স্বপক্ষে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ করা। কমল গুহর প্রয়াণের পরেই দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লকের মূল কান্ডারী হিসাবে তথা দলের নিবেদিত কর্মী হিসাবে আব্দুর রউফ দলে ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন এবং ২০০৫ সালে উদয়ন গুহ যখন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন সাথে সাথে দলের হাল সামলে নেন এই সাধারণ বাড়ির ছেলে আব্দুর রউফ সেই হিসাবে দেখতে গেলে আব্দুর রউফ দিনহাটার মানুষের কাছে নতুন মুখ নয়। কোচবিহার জেলার প্রাক্তন সাংসদ নৃপেন রায় দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন আব্দুর রাউফ সম্পর্কে।
তিনি বলেছেন, ‘বুথ লেবেল থেকে উঠে আসা সাধারণ চাষী পরিবারের সন্তান। প্রার্থী হিসাবে রাউফ একজন যোগ্য মানুষ যিনি মানুষের সেবা করতে ভালোবাসেন’।
কোচবিহার জেলায় প্রার্থী তালিকা করতে গিয়ে কিছুটা রদ বদল করতে হয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বেশ কিছু বিধায়ক বাদ পড়েছেন। যদিও তার মধ্যে দিনহাটা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন উদয়ন গুহ। ২০১১ সালে যখন রাজ্য রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছিল তখন অবশ্য উদয়নবাবু তৃণমূলে ছিলেন না। পরবর্তীকালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। উদয়ন তাহলে কোন ক্যারিশমায় এবারের তরী পার করতে পারে? একদিকে মমতার ব্যানার্জী লড়াকু ইমেজ অন্যদিকে পোড়-খাওয়া নেতা কমল গুহর পুত্র। তাই বাজি মাত করার সম্ভাবনা আছে বলে অনেক মনে করেন ।
দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রটি দিনহাটা পৌরসভা, দিনহাটা-২ সিডি ব্লক এবং ভেটাগুড়ি-১, দিনহাটা গ্রাম-১, দিনহাটা গ্রাম-২ এবং পুটিমারি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত গুলি দিনহাটা-১ সিডি ব্লকের অন্তর্গত।
এখানকার মানুষের প্রধান চওয়া পাওয়া হলো সীমান্ত উন্নয়ন, সৎ নেতা, দিনহাটার সাহেব গঞ্জে একটি কলেজ, দেবী বাড়ি কন্ট্রোলের হাটে হাসপাতাল, ভয় সন্ত্রাসহীন মুক্ত পরিবেশ ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct