নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর: পাইনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর। হয়নি প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেটও। বারেবারে আবেদন করেও মিলছে না বয়স্ক ভাতা।বছর পঁয়ষট্টির পৌঢ়া
পঁয়ত্রিশ বছর ধরে অন্ধ অবস্থায় দিনমজুর করে পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন।সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় এবার ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছেন গোটা পরিবার। নাম বিশুয়া দাস। বাড়ি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির ভবানীপুর গ্রামে।
জানা যায়, দিন মজুরের কাজ করে কোনোরকমে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতেন বিশুয়াবাবু।
কিন্তু বিধাতা বিমুখ,২৮ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে।অর্থাভাবে চিকিৎসা করানো হয়ে ওঠেনি তার।সেই থেকে দুই চোখে দেখতে পাননা তিনি। তারপর ৩৫ বছর কেটে গেলেও প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট মেলেনি। চরম অভাবের মধ্যে দিন কাটালেও মেলেনি আবাস যোজনায় ঘর। মেলেনি বার্ধ্যক্য ভাতাও।প্রৌঢ়া স্ত্রী কুশমি দাস দিনমজুরি করে যেটুকু আয় করেন তাতেই চলে সংসার। অর্থাভাবে বন্ধের মুখে ছেলের পড়াশুনা।
স্ত্রী কুশমি দাস(৪৫),ছেলে বলরাম দাস(১৪)ও বিধবা মেয়ে জয়ন্তী দাস(২৬)কে নিয়ে দরজা-জানালাহীন ভাঙাচোরা একটিমাত্র মাটির ঘরে ত্রিপল টাঙিয়ে কোনও রকমে দিন গুজরান করছে বিশুয়াবাবু।
সংসারের অভাবের কথা ভেবে বিশুয়াকে মাঝেমধ্যে ভিক্ষে করতে যেতে হয়। সঙ্গী হয় একমাত্র নাবালক ছেলে বলরাম দাস। বাবাকে পথ পারাপার করান বলরাম।বাবার ছায়া সঙ্গী হয়ে সবসময় পাশে থাকে সে।
প্রতিবন্ধী শিবিরে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের। কিন্তু তাদের কেউ বিশুয়ার সাহায্যে এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ। এলাকায় অবস্থাপন্ন মানুষদের আবাস যোজনায় ঘর মিললেও ওই পরিবারটির মেলেনি বলে অভিযোগ।
দরজায় কড়া নাড়ছে ভোট।কিন্তু ভোট দিয়ে কি হবে? সেই প্রশ্ন তুলেছেন ৬৫ বছরের পৌঢ়া বিশুয়া দাস। আর কতটা গরীব হলে মিলবে সরকারি সাহায্য বিশুয়ার পরিবারের পাশাপাশি সেই প্রশ্ন তুলেছেন তার প্রতিবেশীদেরও একাংশ।
কাটমানি দিতে পারেনি বলেই কি পাইনি আবাস যোজনার ঘর?এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তর্জা।
বিশুয়া দাস সাংবাদিকদের সামনে তার জবানবন্দিতে জানান, "আমার চোখ অন্ধ। অনেক জায়গায় দেখিয়েছি কিন্তু কিছু ঠিক হয়নি। এখন আর কিছু দেখতে পাইনা। প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম কিন্তু কোনো সাহায্য করেননি। প্রধানও কোনো সাহায্যের ব্যবস্থা করেননি। স্ত্রী কাজ করে, এখন ঘরে বসে আছি। ঘরের জন্য আবেদন করেও ঘর পাইনি। দু-পা হাঁটতে গেলেও ছেলের সাহায্য নিতে হয়।"
বিশুয়ার প্রৌঢ়া স্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন সরকারের উপর। তিনি জানান, "আমার স্বামীর ত্রিশ বছর ধরে অন্ধ। আমি এদিক ওদিক খেটে কোনোরকমে সবার খাবার জোগাড় করি। লোকের কল থেকে জল আনি, তারা দিতে চায়না তাও যেতে হয়। পায়খানা নেই, ঘর নেই। কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা পাইনি। শুধু রেশনটুকু পাই। প্রধান বলে আমরা কিছু করতে পারবোনা। সরকার আমাদের কিচ্ছু দিচ্ছেনা তো ভোট দিয়ে কী করব?" সংবাদ মাধ্যমের সামনে কান্না জড়ানো গলায় তার স্বামীর চিকিৎসার আর্তি জানিয়েছেন তিনি।
মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই এলাকার সদস্যা দীপ্তি কর্মকার বলেন, "পরিবারটি অভাবি। দুয়ারে সরকার চলার সময় প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের জন্য শিবিরে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু উনি যাননি। আর আবাস যোজনার জন্য ওদের নাম পাঠানো রয়েছে। কিন্তু এত বছরেও কেন প্রবন্ধী শংসাপত্র মেলেনি, মেলেনি আবাস যোজনায় ঘর তার উত্তর পঞ্চায়েত কর্তাদের কাছে মেলেনি।"
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মানিক দাস বলেন," আপনাদের মাধ্যমে খবরটি জানতে পারলাম। সকল প্রতিবন্ধীই প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট পেয়েছে। সাথে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। এক্ষেত্রে হয়তো কোনো রকম মিস কমিউনিকেশন হয়েছিল। এই মুহূর্তে নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় আমরা কিছু করতে পারবো না। নির্বাচনের পরে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। দলগতভাবে ও অন্ধ অসহায় ওই ব্যক্তির পাশে দাঁড়াবো।"
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct