মোল্লা মুয়াজ ইসলাম, বর্ধমান: পারিবারিক অভাব অনটন তার নিত্যদিনের সঙ্গী। চাষ আবাদ করেই নিজেদের সংসার চলতো। কিন্তু শত অভাব অনটনও হার মানাতে পারেনি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের নবীনাকে। দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে নিজের স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা করে এসেছেন।
নবীনা পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বকুলতলার বাসিন্দা। তার বাবা পেশায় একজন কৃষক, চাষাবাদ করেই কোনো রকম সংসার চলে তাদের। কিন্তু এরই মধ্যে সেই জায়গা থেকেই সমস্ত প্রতিবন্ধকতা পার করে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার ডিগ্রিতে বাংলায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, পড়াশোনার প্রথম ধাপ জামালপুরেই হয়েছে নবীনার। প্রথমে পড়তেন জামালপুর বালিকা বিদ্যালয়ে, তারপর সেখান থেকে জামালপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন নবীনা। এরপর সে স্নাতক হন রায়নার শ্যামসুন্দর কলেজ থেকে। সব শেষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য ভর্তি হন বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সেখান থেকেই এই সাফল্য। সাংসারিক নানা কাজ, বাবাকে চাষে সাহায্য করা। পারিবারিক নানা অসুবিধার মধ্যে দাঁড়িয়েও নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য লড়াই করেছে নবীনা এবং সে সফল হয়েছেন নিজের স্বপ্নকে পূরণ করতে। নবীনার মা বলেছেন, “ছোট থেকেই সব বিষয়ে একশোয় একশো পেয়ে এসেছে, কিন্তু পরিবার থেকে সেই সহযোগিতা করার সামর্থ্যটুকু কারো ছিল না”। নবীনা নিজে জানিয়েছে, “খুব ভালো লাগতো যখন পাড়ার সকলে মিলে আমার রেজাল্ট নিয়ে আলোচনা করত, প্রশংসা করত, এমনকি তারা বাবা-জ্যেঠুর কাছে জোর করে মিষ্টি খেতে চাইতো”।
এইভাবে একজন অত্যন্ত সাধারণ ঘরের মেয়ে স্বপ্ন দেখার সাহস নিয়ে যে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পারল তা অন্য মেয়েদের উৎসাহিত করছে।
নবীনার ছোট ভাই মুম্বাইয়ে শ্রমিকের কাজ করে। তাকে পড়াশুনায় সাহায্য করেছে। ছোট ভাই এর প্রতি কৃতজ্ঞতা তার চোখ কে অশ্রুসিক্ত করেছে। বাবা মা, স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারেদের অবদান ভোলেননি নবিনা। বর্তমানে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে এম ফিল পাঠরতা নবিনা গ্রামের গরিব মানুষদের জন্য কিছু করতে চান। তিনি চান গ্রামের গরিব মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা ভালো মত পড়াশুনা করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct