নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর: অভাবের সংসার। পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য এক মাস আগে ব্যাঙ্গালোরে যায় মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের মোশালদা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত তালগাছির হাসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল। কিন্তু বিধি বাম। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে নিয়ে এল দুঃখের ছায়া। পরিবারে রয়েছে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, ও চার কন্যা। এলাকায় কাজ নেই। পেটের টানে ভিন রাজ্যে গিয়ে কাজ করতে গিয়ে ক্রেন চাপা পড়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন রফিকুল। ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকেরা। কয়েকদিন আগেও চারজন শ্রমিকের মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছিলাম। কাজের খোঁজে মাসখানেক আগে ব্যাঙ্গালোরে গিয়েছিল শফিকুল (৪০)। বাড়িতে রয়েছে বৃদ্ধ বাবা কেতাবউদ্দিন (৭০),মা সাজিনূর বিবি(৬২), স্ত্রী সোনাভান বিবি, চার নাবালিকা মেয়ে রয়েছে, ভাই সোনাদি হক, বোন আফসারা খাতুন। ব্যাঙ্গালোরে ব্রীজের কাজ করত শফিকুল। লক ডাউনে পায়ে হেঁটে বাড়ি এসেছিল শফিকুল। অভাবের সংসারে খাবার জোটাতে মাথার ঘাম ছুটে যেত শফিকুলের। সমস্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে রয়েছে শফিকুল ও তার পরিবার। মেলেনি আবাস যোজনার ঘর টুকুও। ভাতা হয়ে গেলেও একবারই বৃদ্ধ বাবা ভাতা পেয়েছিলেন কেতাবউদ্দিন। ভাই সোনাদি হকও পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন কেরলে। তিনিও লক ডাউনে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরেছিলেন। এলাকায় নেই কোনো কর্মসংস্থান, তাই বাধ্য হয়ে একমাস আগে আবারও কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল দুই ভাই। শফিকুল যায় ব্যাঙ্গালোরে, ভাই সোনাদি কেরলের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। ব্যাঙ্গালোরে ব্রীজের কাজ করতেন শফিকুল। সফিকুলের মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
শফিকুলের স্ত্রী সোনাভান বিবি বলেন, “একমাস দশদিন আগে বিদেশে গিয়েছিল। লকডাউনের সময় হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরেছিল। কাল ছয়টার সময় খবর পেলাম স্বামী মারা গেছে। কীভাবে মারা গেছে তাও খবর পাইনি।
শফিকুলের মা সাজিনূর বিবি বলেন, ‘বিদেশে গেছিল কাজ করতে। এখন মরার খবর পেলাম।’শেষ কথা হয়েছিল কাল। বাচ্চাদের খবর নিয়েছিল তাদের পড়া-লেখার খবর নিল। সরকার থেকে কোনো সুযোগ সুবিধা পাইনি। ঘরের আবেদন করার পরেও কোনো খবর দেয়নি।” বাচ্চা গুলোকে কী খাওয়াবে? সংবাদ মাধ্যমের সামনে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
শফিকুলের মা সাজিনূর বিবি বলেন, “বিদেশে গেছিল কাজ করতে। এখন মরার খবর পেলাম। কীভাবে ছেলেমেয়েদের পড়াবো আর কীভাবে তাদের বিয়ে দেব? পনেরো দিন আগে ছেলের সাথে কথা হয়েছিল। দুটি ছেলে আমার। একজন তো মারা গেল। লকডাউনে হেঁটে হেঁটে বাড়ি এসেছিল।”
মোশালদা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, “আমাদের পঞ্চায়েতের তরফ থেকে আমরা সেখানে গেছিলাম। তার পরিবারের সাথে কথা বলেছি। সবরকম ভাবে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছি। তার পরিবার এতো সমস্যায় আছে এটা আমরা জানতাম না। এরপর সবরকম সাহায্য করব।”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct