আনোয়ার হোসেন, নন্দীগ্রাম: নন্দীগ্রাম বিধানসভা নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও মনোনয়নপত্র জমা দেননি। জমা দেবেন বুধবার। তার আগে নন্দীগ্রামে মঙ্গলবার এসে সাধারণ মানুষের মন জয় করে নিলেন একেবারে গ্রামের মেয়ের মতো মিশে গিয়ে। তবে তৃণমূল নেত্রী এদিন বিজেপির মোকাবিলায় হিন্দুত্বের তাস খেললেন। শুভেন্দু এখন যেভাবে মুসলিম বিরোধী মনোবাব দেখিযে নন্দীগ্রামের হিন্দু ভোটের ঐক্য চাইছেন, মমতার সেই ছক ভাঙতে নয়া কৌশল নিলেন। নন্দীগ্রামে দিন থাকবেন। কিন্তু তার আগে মঙ্গলবার ওই এলাকার তিনটিমন্দিরে পুজো দিলেন। আর বিজেপির ‘হিন্দুত্ববাদী’দের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘চণ্ডীপাঠ করে বাড়ি থেকে বের হই। সব ধর্মের মানুষ নিজের ধর্মকে সম্মান করেন। আমায় হিন্দু ধর্ম শেখাচ্ছে? ধর্ম নিয়ে খেলবেন? খেলা হবে? কবে খেলবেন?’ তিনি নিজেকে ধর্মপ্রাণ প্রমাণ করতে মঞ্চে একেবারে পুরোহিতের ঢঙে গড়গড় করে চণ্ডীপাঠ করে গেলেন। নিজেই জানিয়ে দিলেন তিনি শিবরাত্রি পালন করবেন নন্দীগ্রামে।
তবে এদিন মমতা জনসভায় যাওয়ার পথে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যান। রাস্তার দারে বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে বিশেষত মেয়েদেরকে বেশি এগিয়ে আসতে দেকা যায় মমতার সঙ্গে হাত মেলাতে। একেবারে স্বভাবভঙ্গিতে মমতা নিজেই শিশুকে কোলে তুলে াাদর করেন। আদিবাসী, দলিত, মুসলিম সব একাকার হয়ে যায়। মমতার কাছে নন্দীগ্রামের মানুষের কাছে টানার প্রবণতাই ছিল এদিনে নন্দীগ্রাম যাত্রায়। নন্দীগ্রামকে কেন্দ্র করে যেহেতু শুধু রাজ্য নয় দেশজুড়ে মানুষ অধীর আগাহে তাকিয়ে আছে কী হবে তাই মমতা কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন। তবে, নন্দীগ্রামে দাঁড়ানো নিয়ে বিজেপির কটাক্ষের জবাব দেন। বিজেপির অভিযোগ ছিল নন্দীগ্রামে মুসলিম ভোটে জিততে মমতা সেখানে দাঁড়িযেছেন। ২০১১ জনগণনা অনুযায়ী নন্দীগ্রামে প্রায় ৪০ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের বাস। তবে, নন্দীগ্রামে মমতার প্রথম প্রবেশ থেকে যে মুসলিম সংপৃক্ততা রয়েছে তা তিনি এদিন জানান। তিনি বর্ণনা দেন, নন্দীগ্রাম গুলি চালানোর দিন কীভাবে পুলিশের চোখ এড়িয়ে আনিসুর রহমানের বাইকে চেপে তমলুক হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন। সেই স্মৃতি উসকে দিয়ে মমতা বিজেপির প্রতি হুঁশিয়ারি দেন ‘খেলা হবে’। তাই ১ এপ্রিল নন্দীগ্রামের ভোটে বিজেপিকে ‘এপ্রিল ফুল’ করার আহ্বান জানান মমতা।
কর্মীসভা থেকে তিনি বলেন, ‘নন্দীগ্রাম আন্দোলন শিখিয়েছে মানুষকে একত্রিত হওয়ার। যখন নন্দীগ্রাম আন্দোলন চলছে কেউ শঙ্খ ধ্বনি দিচ্ছে কেউ আযানের সুর তুলছে। গুন্ডাদের সাথে লড়াই করে ছিলাম। নন্দীগ্রামের নাম সারাবিশ্বে পৌঁছে গিয়েছে। নন্দীগ্রামকে নিয়ে আমি দিল্লি গিয়েছি, রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছি। আমি আপনাদের বলেছিলাম নন্দীগ্রামে যদি আমি দাঁড়াই কেমন হয়। আপনাদের ভালোবাসায় আমাকে নন্দীগ্রামে দাঁড় করিয়েছে। নন্দীগ্রাম আমার দুই চোখ। ভুলতে পারি সবার নাম, ভুলবো নাকো নন্দীগ্রাম।’
মমতা যে ভোটের পাখি হতে চান না তা বোঝাতে অতীতে গ্রামে যাওয়ার স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমি প্রতিবার গ্রামে যেতাম পরীক্ষার পরে, আলে আলে ঘুরে বেড়াতাম। কখনো ধান পুঁতে দিতাম। কখনও ধান কাটতাম। কখনও শস্য ক্ষেতে যেতাম। এই করতে করতে গ্রামের দিকে আমার টান একটা বরাবরই আছে’। তবে, ভিড় দেখে উচ্ছ্বসিত মমতা জনতার প্রতি বলেন, ‘আপনারা না চাইলে আমি দাঁড়াব না। নন্দীগ্রাম ছেড়ে চলে যাব। আপনারা বললে তবেই কাল মনোনয়ন জমা করব।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct