নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর: মা ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ মাস আগে চিকিৎসার অভাবে ছেলে-মেয়ের সামনে তিলে তিলে মারা গেছে। বাবা সংসার ত্যাগ করে নতুন সংসার পেতেছে। একটি মাত্র জরাজীর্ণ কাঁচা ঘরে পলিথিন টাঙিয়ে বসবাস করছে এক ভাই ও এক বোন। হিঞ্চে সেদ্ধ ও কচুশাক খেয়ে কাটাচ্ছে দিন। সরকারি থেকে পাইনি কোনোরকম সাহায্য। এলাকার নেতাদের কাছ থেকে শুধু ভুরি ভুরি আশ্বাস ছাড়া মেলেনি কোনো কিছু। এভাবেই বাঁচার জন্য জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে বছর পনেরোর বালিকা দুলি খাতুন।সে তুলসীহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। কবে মিলবে সরকারি সাহায্য সেই আশায় বুক বেঁধে রয়েছে দুলি।
জানা যায় হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বাংরুয়া নয়াটলা এলাকার বাসিন্দা দুলি খাতুন (১৫)। পাঁচ মাস আগে মা রবিনা খাতুন ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রবিনা খাতুনকে একা রেখে তার স্বামী বাড়ি ছাড়ে। সেই থেকে রবিনা খাতুনই এদিক ওদিক দিন মজুরের কাজ করে কোনো রকমে দুই ছেলে মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিত। কিন্তু দূর্ভাগ্য বোধহয় কারো কারো পিছু ছাড়ে না। পাঁচ মাস আগে তিনিও গত হন। সেই থেকে একা লড়াই করে যাচ্ছে বছর পনেরোর দুলি খাতুন। তুলসীহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী সে। দিন মজুরের কাজ করে কোনো রকমে পেটের ভাত জোটায় সে। যেদিন কাজ করতে পারেনা সেদিন জোটেনা ভাত। খাবারের মধ্যে থাকে কচু পাতা বা শাক পাতা। এভাবেই কোনোরকমে খেয়ে পরে পড়াশোনার কাজ চালিয়ে যায় সে। ভাই মহম্মদ রুবেল পার্শ্ববর্তী গ্রামে মনোহর পুর গ্রামে বিয়ে করে তার নিজের সংসার শুরু করেছে। দুলি খাতুনের সাথে কথা বলে জানা যায়, একা মেয়ে ভয়ে রাত্রে ঘুমাতে পারেনা। ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় বাড়িঘর ভেঙে পড়ার পর থেকে ত্রিপল দিয়ে কোনোরকমে মাথা গুঁজে পড়ে থাকে সে। অনেকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার পরও মেলেনি কোনো সাহায্য। রেশনের চাল ও সবুজ সাথী সাইকেল পেলেও মেলেনি আবাস যোজনার ঘর। এমনকি পায়নি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও। বিনা চিকিৎসায় চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু দেখেছেন সে। অন্যের কাছে সাহায্য চাইতে গেলে পাছে মানুষ চরিত্রে দাগ লাগায় সেই ভয়ে একাই লড়ে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছে বছর ১৫ এই লড়াকু মেয়ে।
সংবাদ মাধ্যমের সামনে ভেঙ্গে পড়ে দুলি। হতাশা নিয়ে জানায়, “খাওয়ার মতো কিছু নেই। আমি মাঠে কাজ করি। যেদিন কাজ করতে পারিনা সেদিন না খেয়ে থাকতে হয়। মা ক্যান্সারে মারা গেছে। আমি জন্মানোর আগেই বাবাও ছেড়ে গেছে। মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়লে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বাঁচাতে পারিনি। তাতে যতটুকু সম্বল ছিল তাও চলে গেছে। ২০১৭ সালের বন্যায় একমাত্র ঠাঁই বাড়িটিও ভেঙে গেছে। বহুবার প্রশাসনের কাছে গিয়েছি কোনো সাহায্য পাইনি। তারা বলেছে আমরা কী করবো?” দুলি খাতুনের প্রতিবেশী নুরজাহান বিবি বলেন, “ওরা দুই ভাই বোন। ছেলেটা মাঠাঘাটে কাজ করে। মেয়েটা কোনো রকমে এখানে ওখানে চেয়ে চিন্তে দিন মজুরির কাজ করে দিন চালায়। বাড়ি ঘর বলতে প্লাস্টিকের একটা ত্রিপল। একটা যুবতী মেয়ে একা একা থাকে, রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারে না। মেয়েটা কোনো সরকারি সাহায্য পায়নি। ওকে প্রশাসনের সাহায্য করা উচিত।”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct