আপনজন ডেস্ক: ইউরোপ সহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমি দেশে বোরকা, হিজাব নিষিদ্ধ রয়েছে। সেই তালিকায় এবার নাম লেখাল সুইজারল্যান্ড। উদার মানসিকতার দেশ বলে পরিচিত সুইজারল্যান্ডে মুসলিম মহিলাদের ইসলামি পোশাক বোরকা নিষিদ্ধ হবে কিনা তার জন্য সুইজারল্যান্ডে রবিবার গণভোটের আয়োজন করা হয়। সেই গণবোটে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি মানুষ বোরকা নিষিদ্ধের পক্ষে মত দেয়। শুধু বোরাকা নিষিদ্ধ নয় সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা পোশাক নিকাব ও হিজাব প্রকাশ্যে পরিধানও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের ফেডালে সরকার গভোটের যে ফলাফল প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ২১টি প্রদেশের ভোটে বোরকা নিষিদ্ধের পক্ষে ভোট পড়ে ৫১.২১ শতাংশ।
এর আগে সুইজারল্যান্ডের দুটি প্রদেশ উপর ভিত্তি করেই বোরকা নিষিদ্ধের পথে এগোতে চাইছে সুইজারল্যান্ড। এতদিন বোরকা নিষিদ্ধ ছিল সেন্ট গ্যালেন ও টিকিনো প্রদেশে। এবার সব প্রদেশেই বোরকা নিষিদ্ধ হচ্ছে গণভোটের রায়ের ভিত্তিতে। সুইজারল্যান্ড সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিযেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, সুইজারল্যান্ডের গণভোট প্রমাণ করে একটি বিশেষ ধর্মের মানুষের প্রতি বৈষম্য।
উল্লেখ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কোথাও বোরকা, কোথাও হিজাব নিষিদ্ধ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল ফ্রান্স জার্মানি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক প্রভৃতি। তবে, ২০১১ সালে ফ্রার্নস প্রথম প্রকাশে বোরকা ও নিকাব ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২০১৪ সালে ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালত সেই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেয়। রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কমিটি জানায়, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা মুসলিম মেয়েদের স্বাধীনতার বিরোধী।
এই গণভোটের রায়ে অস্বস্তিতে রয়েছে সুইজারল্যান্ডের মুসলিমরা। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে ভ্যালেন্টিনা নামের এক মহিলা বলেন, আমি যখন নিকাব পরি তখন নিজেকে নিরাপদ মনে হয়। কিন্তু এখন থেকে প্রকাশ্যে মুখ ঢাকা যেকোনো পোশাক নিষিদ্ধ সেখানে। ফলে মুসলিম মহিলারা চাইলেও এখন আর বোরকা পরিধান করতে পারবেন না দেশটিতে। তবে ধর্মীয় উপাসনালয় এবং নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত কারণে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ করোনা থেকে রক্ষায় মাস্ক পরতে কোনও সমস্যা নেই। সুইজারল্যান্ডে রবিবার পাস হওয়া এই প্রস্তাবের কোথাও নির্দিষ্ট করে বোরকা, নিকাবের কথা আলাদা করে বলা হয়নি। তবে এর পক্ষের রাজনৈতিক প্রচারে মুসলিম মহিলাদের পোশাককেই সামনে আনা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল দ্য সুইস পিপলস পার্টি প্রস্তাবের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়। তাদের বিলি করা একটি প্রচারপত্রে বোরকা পরা এক নারীর চিত্র ব্যবহার করে লেখা হয়েছে, ‘ইসলামী উগ্রবাদ থামাও’।বাস্তবতা হল সুইজারল্যান্ডে সচরাচর বোরকা, নিকাব পরিহিত নারীদের তেমন একটা দেখা যায় না। তারপরও এমন প্রস্তাব কেন উঠেছে সেটি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আছে। এই বিষয়ে সুইস পিপলস পার্টির সংসদ সদস্য জ্যঁ-লুক অ্যাডোর বলেন, বোরকা পরা খুব বেশি মহিলা সুইজারল্যান্ডে নেই সেটা সৌভাগ্যের। তার যুক্তি, কোন বিদ্যমান সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই সমাধান করা উচিত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct