শংকর সাহা: আজকের প্রগতিশীল সমাজে নারীরা অনেক এগিয়ে। সামাজিক হোক বা দেশের উন্নয়নশীল সমাজে এ প্রজন্মের নারীরা তাদের অবদান রেখে চলেছে। আজ মেয়েরা চাঁদের দেশে পাড়ি জমায়, অতিক্রম করে ইংলিশ চ্যানেল, ছুঁয়ে যায় পর্বতের চূড়া। বিমান বাহিনীর চালকের আসনে নারীকে প্রত্যক্ষ করে আপামর দেশবাসী।
এই নাগরিক সমাজে নারী আপন ক্ষমতা অর্জন করার শক্তি পেয়েছে। আজ পুরুষ সমান নারীরা তাই এই সমাজে নারীদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করাও আমাদের কর্তব্য। আন্তর্জাতিক নারী দিবস হল সেই বিশেষ দিন যেদিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নারীদের কাজের প্রশংসা,সম্মান প্রদর্শন ও তাদের অধিকারকে সুনিশ্চিত করার এক বিশেষতম দিন। বিশ্বজুড়ে বিভিন্নভাবে এই দিনটিকে পালন করা হয়।
৮ই মার্চ, ক্যালেন্ডারের নিরিখে দিনটি আন্তর্জাতিক নারীদিবস হিসেবে পরিচিত। এই বিশেষ দিনটিতে নারীদের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্যে বিভিন্ন সাহসী নারীদের হাতে তুলে দেওয়া পুরস্কার। আন্তর্জাতিক নারীদিবসের প্রেক্ষাপটে উঠে আসে নারী স্বাধীনতার কথা। প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমাজের নারীদের অবস্থান, নারী স্বাধীনতার বিষয়টি যেন বারে বারে আলোচিত হয়েছে। সুদূর বৈদিকযুগে অপালা, লোপামুদ্রা, গার্গী প্রভৃতি নারীরা শিক্ষা, ধর্ম, সংস্কৃতিতে যথেষ্ট সফলতা পেয়েছিল যা ইতিহাসে চর্চিত।
ক্রমবর্ধমান সময়ে আজ বর্তমানযুগে এসে নারীরাও সমাজের সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে। জ্ঞানবিজ্ঞান, শিক্ষা-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান সর্বক্ষেত্রে তারা আজ এগিয়ে। সামরিক বাহিনীতে আজ মেয়েরা পুরুষ সমতুল্য। নারীরা আপন ভাগ্য জয় করার অধিকার পেয়েছে,আজ সে শুধু পুরুষের সহধর্মিণী না থেকে হয়ে উঠেছে এক সমাজের চালিকাশক্তি।
নারী দিবস পালনের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ইতিহাসের পাতায় ফিরে তাকালে দেখা যায় ১৯০৯ সালে প্রথমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। ওই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আমেরিকায় নারী দিবস উদযাপন করা হয়েছিল। সোশ্যালিস্ট পার্টি অফ আমেরিকা নিউ ইয়র্কে ১৯০৮ সালে বস্ত্র কলের শ্রমিকরা তাঁদের কাজের সম্মান আদায়ের লক্ষ্যে ধর্মঘট শুরু করেন।
নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কাজ আর সমমানের বেতনের দাবিতে চলে হরতাল। পরবর্তী সময়ে দেখা যায় ইউরোপের নারীরা ৮ মার্চ শান্তি বিষয়ক কার্যক্রমকে সমর্থন করে বিশাল মিছিলে নামেন। ১৯১৩-১৯১৪ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতিবাদ জানানোর একটি প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে। অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চ দিনটিকে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। নারী স্বাধীনতার কথা বললেও এখনো সমাজের অনেক ক্ষেত্রে নারীরা লাঞ্ছনার শিকার হন। আর তার জন্যে মানুষের বিশেষ উন্নত মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এখনো অনেক মেয়েদের পণপ্রথায় বলি হতে হয়। ঘরে ও বাইরে বিভিন্নভাবে অত্যাচারিত হতে হয়। এগুলো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সমাজে সকল নারীদের বেঁচে থাকার সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে তবেই তো আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন স্বার্থকতা ফিরে পাবে।
বছরের শুধুমাত্র একটি দিনই না প্রতিটি দিন পালিত হোক আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীরাও সকল বাধাকে অতিক্রম করে এগিয়ে চলুক। গৃহের অভ্যন্তরে ও গৃহের বাইরে সকল ক্ষেত্রেই তারা সম্মান পাক। আজ সময় বদলেছে,বদলেছে সমাজও।
নারীরা আজ অনেক এগিয়ে গেছে। করেছে তাদের স্বপ্নপূরণ। তাই নারী দিবস পালনের জন্যে শুধুই একটি দিনই যথেষ্ট নয়। নারীদের সবক্ষেত্রে সম্মান করতে হবে। নারীরা যেন তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে চলে তবেই তো দেশ উন্নতিহবে। সমৃদ্ধ হবে আমাদের সমাজ ও সভ্যতা।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
লেখক প্রাবন্ধিক ও নাট্যকর্মী
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct