এহসানুল হক, বসিরহাট: মাদুর শিল্পের উপরই নির্ভর করে রয়েছে একটা গোটা ব্লকের জীব-জীবিকা। অথচ লোকশ্রুতি ছাড়া এই কুটির শিল্পের সৃষ্টির উৎসের সন্ধান মেলে না কোত্থাও। এমনকী বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্রমশ কমে যাচ্ছে কাজের প্রতি শিল্পীদের আকর্ষণ। ফলে ভবিষ্যৎ যে তেমন উজ্জ্বল নয়, তাও স্পষ্ট।এমনি এক এলাকার সন্ধান পাওয়া গেল উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের -২ পঞ্চায়েত সমিতির অন্তরগত শ্রীনগর অঞ্চল।এই এলাকায় অনেক বছরের পুরনো শিল্প মাদুর। এ অঞ্চলের বহু পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস মাদুর শিল্প। কিন্তু কাঁচামাল সংকটের পাশাপাশি উৎপাদিত জিনিসের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বসিরহাটের শ্রীনগরের মাদুর শিল্প বর্তমানে চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে এ শিল্প-সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো আর্থিক সংকটের কারণে অসহায়ের মধ্যে জীবনযাপন করছে।
শ্রীনগরের মনিহারী,কুলতলা,সাদেক নগর এই সব গ্রামে সরেজমিন দেখা যায়, এ গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের নারীরা মাদুর বুননের সঙ্গে যুক্ত। এমনই একজন ষষ্ঠী বিস্বাস, যার সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস মাদুর উৎপাদনে । স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে চার সদস্যের সবাই মাদুর তৈরির সঙ্গে যুক্ত। ষষ্ঠী বিস্বাস নিজে মাদুর বুননের কাজ করেন। আর তার স্বামী হরিপদ বিস্বাস তৈরি মাদুর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু প্রায় এক দশক ধরে মাদুর শিল্পের অবস্থা ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
ষষ্ঠী বিস্বাস বলেন, এলাকায় মাদুর তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত জিনিসের উৎপাদন কমে গেছে। আশপাশে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা অনেক বেশি দামে কিনতে হয়। ফলে মাদুর উৎপাদনে লাভ অনেক কমে গেছে।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগেও প্রতি কাউন মেলের দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়। ফলে এক জোড়া মাঝারি ধরনের মাদুর উৎপাদনে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা ব্যয় হচ্ছে। অথচ বাজারে এ মাদুরের প্রতি জোড়ার পাইকারি দাম ৪০০ টাকা। এতে এক জোড়া মাদুরে ৩০ থেকে ৪০ টাকার বেশি লাভ থাকছে না। ফলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
একই গ্রামের রমেন সরকার বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে এ মাদুর শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তিনি জানান, কয়েক বছর আগেও এ অঞ্চলের নদীতীরে প্রচুর মেলে চাষ হতো। কিন্তু এখন আর তা দেখা যায় না। দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ অনুযায়ী উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। এক জোড়া বড় আকৃতির মাদুর তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৪৫০ টাকা। অথচ এর বাজারমূল্য ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা। মাদুর তৈরি থেকে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ পাচ থেকে সাড়ে পাচ হাজার টাকা আয় হয়। এত সব সংকটের মধ্যেও পূর্বপুরুষের এ পেশা ছেড়ে যেতে পারছেন না বলে তিনি জানান।
বসিরহাট লোকসভার জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, বসিরহাট-২ এর অধিকাংশ পরিবার মাদুর শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তবে বর্তমানে শিল্পটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এরই মধ্যে কিছু পরিবার বংশপরম্পরায় চলে আসা এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তাই একমাত্র ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে বাঁচাতে পারে।
শিল্পটি বাঁচাতে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যাংকঋণ সুবিধা প্রদান জরুরি বলে মনে করেন বসিরহাট-২ ব্লকের সভাপতি লক্ষী বিশ্বাস তিনি বলেন,বসিরহাট-২ শ্রীনগর অঞ্চলের মাদুর শিল্প এখন শিল্প-সংশ্লিষ্ট অন্তত কয়েখ হাজার পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা আমাদের কাছে ব্যাংকঋণ সহায়তাসহ অন্যান্য সাহায্য চাইলে অবশ্যই তাদেরকে দেখা হবে বলে জানান। মাদুর শিল্প আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct