আপনজন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকার এবার সরকার স্বীকৃত মাদ্রাসাগুলিতে এবার শুধু ইসলামি শিক্ষা নয় ‘ভারতীয় ঐতিহ্য পরম্পরায়’ ১৫টি বিশেষ কোর্স চালু হচ্ছে। দেশের নতুন শিক্ষা নীতি ‘নিউ এডুকেশন পলিসি’ বা এনইপি-র বাস্তবায়নে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ভাগবত গীতা, রামায়ণ, যোগা, সংস্কৃত শিক্ষা, এমনকী ভোকেশনাল কোর্সও। আর এই গীতা, রামায়ণ পাঠ দেওয়া শুরু হবে তৃতীয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক মাদ্রাসা আধুনিকীকরণের উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওপেন স্কুলিং বা এনআইওএস-এর অধীনে থাকা মাদ্রাসাগুলিতে এই হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হবে।
তবে, মুসলিম ছেলেমেয়েদের হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষাদানের বিষয়ে কেন্দ্রীয় বলছে, এটি বাধ্যতামূলক নয়। এই শিক্ষা ঐচ্ছিক।
মাদ্রাসায় হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষা দানের বিষয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, মাদ্রাসায় গুণগত শিক্ষা দানে বিশেষ প্রকল্প এসপিকিউইএম-এর অধীনে এনআইওএম স্বীকৃত মাদ্রাসাগুলিতে নানা বিষয়ের পাশাপাশি এই হিন্দু ধর্মের বিষয়েও পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে পড়ুয়াদের বিভিন্ন ধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞানের পরিধি প্রসারিত হবে।
কেন্দ্রীয় শিক্ষামমন্ত্রক জানিয়েছে, এনআইওএস স্বীকৃত মাদ্রাসায় সংখ্যা প্রায় ১০০। আর তাতে প্রায় ৫০ হাজার পড়ুয়া রয়েছে। তাদের আরও পরিকল্পনা, ক্রমান্বয়ে আরও ৫০০টি মাদ্রাসাকে এনআইওএস স্বীকৃতি দেবে। মঙ্গলবার নয়ডায় এনআইওএস-এর সদর দফতরে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল মাদ্রাসায় এই নতুন কোর্সের স্টাডি মেটেরিয়ালসের সূচনা করেন। যে সব শিক্ষা সহায়ক পাঠ্যসুচির সূচনা করা হয় তার মধ্যে রয়েছে পতঞ্জলী কৃতসূত্র অনুযায়ী যোগা, যোগাসূত্র, সূর্য নমস্কার, আসানাস ও প্রাণায়াম্।
ভোকেশনাল কোর্সের মধ্যে রয়েছে গো-পালন, গোশালা পরিষ্কার, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি। এছাড়া, শয্যা তৈরি, খামার তৈরি ও আয়ুবের্দিকভাবে জীবন অতিবাহিত করাররও পাঠ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বেদ-এ বায়ু, সব্জি, পঞ্চভূত নিয়ে যেসব বিষয় রয়েছে তা পড়ানো হবে। এ বিষয়ে এনআইওএস-এর অ্যাস্ট্যিান্ট ডিরেক্টর শোয়াইব রাজা খান বলেছেন, বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হলৌ পড়ুয়াদের তা নির্বাচন করার অধিকার থাকবে। মাদ্রাসা ছাত্ররা সেগুলি নিজেরাই পছন্দ করবে কোন বিষয়ে তারা পড়তে চায, আর বিষয়ে তা পড়বে না। উল্লেখ্য, এনআই্ওএস একটি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা। আর তারা প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি স্তরে দূরশিক্ষার মাধ্যমে পাঠ দিয়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের এই নতুন নীতির ফলে ‘জমিয়ত ওপেন স্কুল’ চালু রাখা সঙ্কটের মুখে পড়ার সম্ভানা রয়েছে। কারণ, কিছুদিন আগে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করতে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নতুন কর্মসূচি ‘জমিয়ত ওপেন স্কুল’-এর সূচনা হয়। ওই কর্মসূচির সূচনা করেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ মাদানি।
কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ওপেন স্কুল বা এনআইওএস-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এই ‘জমিয়ত ওপেন স্কুল’ কর্মসূচি পরিচালিত হবে বলে তিনি জানা। দিল্লিতে জমিয়তের সদর দফতরে এই কর্মসূচির সূচনা করে মাওলানা মাহমুদ মাদানি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারে এই কর্মসূচি দেশের সর্বত্র চালু করা হবে।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের লক্ষ্য দেশের ৫০ হাজার খারিজি মাদ্রাসাকে এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা। এই সকল মাদ্রাসায় আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা হবে বলে জানানো হয়। আরও জানানো হয়, শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করতে ইতিমধ্যে মহারাষ্ট্রের পুণেতে কুড়িদিন ব্যাপী কর্মসূচি শুরু হচ্ছে শনিবার থেকে। এতে ১০০টি মাদ্রাসার শিক্ষকরা অংশ নেবেন। এতে প্রায় ২০০০ ছাত্র উপকৃত হবে। এদিন জমিয়তের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, প্রথমে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লির ১০০টি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাওলানা মাহমুদ মাদানি বলেছিলেন, আমাদের মুরুব্বিরা (প্রবীণরা) খারিজি মাদ্রাসাকে সরকারি মাদ্রাসা বোর্ডের আওতায় যাওয়া নিয়ে বিরোধতিা করেছিলেন। তারা যথার্থ করছিলেন। অসমের ঘটনাই তার প্রমাণ। সেখানে মাদ্রাসা বোর্ডের আওতায় থাকা মাদ্রাসাগুলোকে বন্ধ করে দিয়ে সাধারণ স্কুলের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাদানি বলেন, মুসলিমরা চায় না ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনও সরকারি হস্তক্ষেপ থাকুক। আমরা চাই, আধুনিক শিক্ষা দেওয়া হোক আমাদের পছন্দ অনুযায়ী। এটা হলে সবার জন্য ভালো বলে তিনি মন্তব্য করেন। জমিয়তের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ওপেন স্কুলের অ্যাস্ট্যিান্ট বা এনআইওএস-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর শোয়াইব রাজা খান। তিনি বলেছিলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমস্ত ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তবে, এখন ওই সমস্ত মাদ্রাসাগুলিতে গীতা, রামায়ণ পাঠ নিয়ে এনআইওএস-এর পাঠক্রম চালু প্রসঙ্গে মাওলানা মাহমুদ মাদানির মন্তব্য এখনও সামনে আসেনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct