হাসিবুর রহমান, কলকাতা: গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ্উত্থানের পর বাম কংগ্রেসের অস্তিত্ব নিয় প্রশ্ন উঠেছিল। কারণ, লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বাম কংগ্রেসের ভোটের হার তলানিতে ঠেকে গেছিল। তা তেকে পরিত্রাণ পেতে বিধানসভা নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের শপথ নিয়েছে তারা। আর সেই ঐক্য বজায় রাখতে ও মানুষের মনে আস্থা জাগাতে ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। রাজ্যে যখন বিজেপির রমরমা নিয়ে আলোচনা নিয়ে তুঙ্গে তখন রবিবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ব্যাপক জনসমাগম রাজনীতির আবহকে পালটে দেওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।
রবিবাররের জনসমাবেশে বামফ্রন্টের বহু চর্চিত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন না। এমনকী এদিনের সভায় কোনও বামফ্রন্ট নেতা বুদ্ধদেবের অনুপস্থিতি নিয়ে কোনও বার্তা দেননি। ২০১৯ সালের ব্রিগেড সমাবেশে বুদ্ধবাবুকে নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে আনা হয়েছিল বাম সমর্থকরা যাতে নিরাশ না হয়। সেই ব্রিগেড সমাবেশের ঝলকানি রবিবার দেখা গেল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যহীন সভায়ও।
এদিনের সমাবেশে বাম কংগ্রেস নেতাদের বক্তৃতায় যেমন বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য ছিল, তেসনি রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধেও তারা ঝাঁঝাল বক্তৃতা দেন। সেই সঙ্গে চলে বিধানসভা নির্বাচনে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ফুলঝুরি।
এদিন বাম কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে মঞ্চে হাজির ছিলেন ‘আইএসএফ’ সুপ্রিমো আব্বাস সিদ্দিী। যে সমস্ত বাম কংগ্রেস নেতা ছাড়াও ভিন রাজ্যের নানা দলের নেতা এদিন উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলেন, সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসু, অধীর চৌধুরী, আবদুল মান্নান, ডিএমকে নেতা ডি রাজা, ছত্রিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলা প্রমুখ।
এদিনের জনসমাবেশে ভিড় হওয়া নিয়ে তৃণমূল মুখ তেমন মুখ না খুললেও বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য চরম সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এদিনের সমাবেশে যে আব্বাস সিদ্দিকীকে নিয়ে এত উন্মাদনা সেই আব্বাস সিদ্দিকী ভোটের পর তৃণমূলের হাত ধরবেন। শমীক আরও বলেন, সাম্প্রদায়িকতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বাম–কংগ্রেস। বিজেপির রাজনীতি সাম্প্রদায়িক আর ভাইজানের রাজনীতি অসাম্প্রদায়িক এই তত্ত্বের বিচার করবেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ।
তবে এদিনের ব্রিগেডের সমাবেশে তাল কেটে যায় যখন আব্বাস সিদ্দিকী মঞ্চে আসেন। সে সময় অধীর চৌধুরি বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। আব্বাসের আসার উন্মাদনায় হই হট্টগোলে বক্তৃতা থামিয়ে দিতে হয় অধীরকে। বিরক্ত অধীর বক্তৃতা না দিয়ে মঞ্চ ছেড়ে চলে যেত চাইলে তাকে নিরস্ত করেন বিমান বসু, মুহাম্মদ সেলিমরা। আর তার পর আব্বাস সিদ্দিকী যেভাবে নিজেদের হক আদায় করার কথা বলে অধীরকে নিশানা করেন তাতে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়। মঞ্চে বাম কংগ্রেস নেতারা ঐক্যবদ্ধ হলেও আব্বাস ও অধরিকে এক হতে দেখা যায়নি। দুজনেই নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখেন। অধীর অবশ্য আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে সৌজন্যতা বশত একবারের জন্য বাক্যালাপ না করায় গুঞ্জন শুরু হয়। তবে, আব্বাস এদিন যেভাবে অধীরের সামনে বন্ধু হিসেবে বামফ্রন্টের বারে বারে নাম নিলেন তাতে ব্রাত্য হয়ে থাকল কংগ্রেস। অন্যদিকে, বাম নেত্রী দেবলীনা হেমব্রম বক্তা দিতে উঠলে আব্বাস সিদ্দিকী মঞ্চ ছেড়ে চলে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে আদিবাসীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিন অধীর চৌধুরি তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বিজেপি ও রাজ্য সরকারের চরম সমালোচনা করেন। এত বড় সমাবেশে আগে কোনওদিন ভাষণ দেননি স্বীকার করে নিয়ে অধীর স্লোগান তোলেন, ‘ইয়ে তো সির্ফ ঝাঁকি হ্যায়, সরকার গিরনা অভি বাকি হ্যায়’। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলা বলেন, দিদি-মোদী দু’জনেই বিভাজনের রাজনীতি করেন। এক জনের থেকে দেশ আর এক জনের থেকে বাংলাকে বাঁচাতে হবে। যদিও এদিনের সভায় বাম নেতারা প্রুতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেন।
মুহাম্মদ সেলিম বলেন, রাজ্যে ফের বাম জোট ক্ষমতায় এলে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন চালু হবে। মাদ্রাসায় যত শূন্যপদ আছে তাতে নিয়োগ হবে। প্রতি বছর এসএসসি, প্রাথমিকে নিয়োগ হবে। এমনক িপএসসি পরীক্ষায় কোনও দুর্নীতি না হওয়ারও আশ্বাস দেন।
সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, রাজ্যে সারদা, নারদা হয়েছে। বিজেপি ও তৃণমূল একই। বিজেপি হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন করছে, আমাদের লুঠপাটের সরকার বা জাতপাতের সরকার দরকার নেই। আমাদের দরকার জনহিতের সরকার।
তবে, এদিনের ভিড় ২০১৯-এর ভিড়কে ছাপিয়ে যায়। রাত থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে বাম কংগ্রেস সমর্থকদের সঙ্গে অাব্বাস ানুগামীদের আসতে দেখা যায় শহরে। প্রচুর বাস লরি করে মানুষ এই সমাবেশে যোগ দেওয়ায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে, জনমাবেশে অনেক সমর্থককে গাযে কাস্তে হাতুড়ি এঁকে অথবা আইএসএফ লিখে হাজির থাকতে দেখা যায়। কারও গায়ে অর্ধেক কাস্তে হাতুড়ি আর আব্বাসের নাম লিখে আওয়াজ দিতে দেখা যায়। বোঝা যায় আব্বাস অনুগামীদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। এদের মধ্যে অনেক তরুণ থাকলেও অনেক কিশোরকে দেখা যাদের ভোট দেওয়ার বয়স হয়নি। তাদের মধ্যেই বেশি ছিল আব্বাসকে নিয়ে উন্মাদনা। ভিড়ের এই ছবির কতটা ভোটে প্রতিফলন হবে ভোটের বাক্সে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২ মে অবধি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct