আপনজন ডেস্ক: দিল্লি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন ২০২০ সালের ৩১ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেওয়া দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিলিগি মার্কাজের সদর দফতর খুলে দেওয়া হোক। সেই মামলায় বুধবার দিল্লি হাইকোর্ট দিল্লি সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল তাদের মতামত কি। এ প্রসঙ্গে দিল্লি সরকার দিল্লি হাইকোর্টকে জানিয়েছে নিজামুদ্দিনের তবলিগি মার্কাজ খুলে দিতে তাদের আর কোনও আপত্তি নেই।
এ ব্যাপারে দিল্লি সরকারের আইনজীবী রাহুল মেহরা দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি মুক্তা গুপ্তার এজলাশে বলেছেন, বহু বিদেশি তবলিগি যারা নিজামুদ্দিন মার্কাজের ইজতেমায় অংশ নিয়েছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার অভিযোগ করা হয়েছিল। তাদের কাউকে বেকসুর কিংবা ছেড়ে দেওযা হয়েছে। কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচার চলছে। তবে গত জুন মানে আদালত সমস্ত ধরনের ধর্মীয় স্থানে ধর্মীয় কাজকর্ম শুরু করার অনুমতি দিয়েছিল। তাই এখন পুনরায় নিজামুদ্দিনের তবলিগি মার্কাজ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে তারা সম্মতি জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য, দিল্লির ওয়াকফ বোর্ডের তরফে প্রবীণ আইনজীবী রমেশ গুপ্ত ও আইনজীবী ওয়াজিহ শফিক হাইকোর্টে আর্জি জানিয়েছিলেন মসজিদ, মাদ্রাসা, হস্টেল সহ নিজামুদ্দিনের তবলিগি মার্কাজ চত্বর যেন অবিলম্বে খুলে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নিজামুদ্দিন মার্কাজ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে যেন দিল্লি সরকার ও দিল্রির পুলিশকে এই মর্মে নির্দেশ দেয়। তারপর দিল্লি হাইকোর্টে দিল্লি সরকার ও দিল্লি পুলিশের কাছে তাদের অবস্থান জানতে চায়। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে হাজির হওয়া সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা হাইকোর্টেকে আবেদনকারীর আর্জি গ্রহণের পক্ষে মত দেন।
দিল্লি ওয়াকফ বোর্ডের তরফে আর্জিতে আরও বলা হযেছিল, ২০২০ সালের ৩০ মে আনলক ১ পর্ব চালু হয়। এরপর ২০২০ সালের ৮ জুন কন্টেনমেন্ট জোনের বাইরে থাকা ধর্মীয় স্থানগুলোর তালিকা তৈরি করে সেগুলি খুলে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই তালিকায় নিজামুদ্দিন এলাকা স্থান পায়নি। নিজামুদ্দিন এলাকাকে কন্টেনমেন্ট জোন হিসেবে ধরা হয়। এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে নিজামুদ্দিন এলাকা কন্টেনমেন্ট জোনের তালিকা থেকে বাদ গেলেও তারপর থেকে নিজামুদ্দিনের তবলিগি মার্কাজের ওয়াকফ সম্পত্তি এখনও বন্ধ। তাই ২০২০ সালের ৩১ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেওয়া নিজামুদ্দিন তবলিগি মার্কাজ অবিলম্বে খুলে দেওয়ার আর্জি জানানো হয়। সেই আর্জিতে সাড়া দিয়ে দিল্লির সরকার ও দিল্লি পুলিশ নিজামুদ্দিন তবলিগি মার্কাজ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে তাদের আপত্তি না থাকার কথা জানায়। এর ফলে, নিজামুদ্দিন তবলিগি মার্কাজ পুনরায় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আর কোনও বাধা রইল না।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর অভিযোগ তুলে দিল্লির নিজামুদ্দিন তবলিগি মার্কাজ বন্ধ করে দেয় দিল্লি পুলিশ। শুধু তাই নয়, লাগাতার তবলিগিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় করোনা ছড়ানোর অপবাদ দিয়ে। এক শ্রেণির মিডিয়া ও বিজেপি নেতারা তবলিগিদের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে। তাদের সেই অভিযোগ ওঠার পর থেকে একের পর এক বিদেশি তবলিগিদের মহামারি আইন উল্লংঘন ও বিদেশি আইন ভাঙার অভিযোগ তুলে গ্রেফতার করা হয়। যদিও আদালত তাদেরকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেওয়ার পর প্রায় সব বিদেশি তবলিগি এখন জেলমুক্ত। কিছু বিদেশি অবশ্য এখনও আইনি জটিলতার কারণে এখনও দেশে ফিরতে পারেননি।
একদিকে যখন সব বিদেশি তবলিগি জেল মুক্ত হয়েছেন, তখন স্বস্তির খবর দিল্লির হাইকোর্টকে নিজামুদ্দিন তবলিগি মার্কাজ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে দিল্লি সরকার ও দিল্লি পুলিশ সম্মতি জানানোয়। তাই এখন শুধু সময়ের অপেক্ষায় নিজামুদ্দিনের তবলিগি মার্কাজ পুনরায় চালু হওয়া।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct